আমান উল্লাহ পাটওয়ারী সাভার (ঢাকা)
চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ২০ থেকে শুরু হয়ে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ভুটানের রাজধানী থি¤পুতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চিলড্রেনস জুডো চ্যা¤িপয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) শিক্ষার্থী উসাচিং মারমা (বিজয়) জাপানকে হারিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। স্বর্ণপদক পাওয়া উসাচিং মারমা বিজয় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেন, আমি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিয়ে আসব একদিন। তাতে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) পাশাপাশি দেশের সুনাম অর্জন করব। উসাচিং মারমার নিজ জেলা খাগড়াছড়ি সদরে। বিকেএসপির তৃণমূলের অন্বেষণ বাচাইয়ের মাধ্যমে ক্রীড়া জগতে উঠে আসেন। তৃণমূলে খেলোয়াড় বাছাইয়ের পর বিকেএসপির অধীনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যখন প্রশিক্ষণ চলছিল তখন উসাচিং মারমা বিজয় ছিল খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। ওই সময় দুষ্ট ছেলেটির ভিতরে কিছু প্রতিভা দেখে জুডোর কোচ ইনচার্জ (জুডে) মুগ্ধ হন এবং ছেলেটিকে দিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু পাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
কোচ ইনচার্জ (জুডো) মো: আবুবকর ছিদ্দিক বলেন, ছেলেটি ক্যাম্পে থাকাকালীন সময় দুষ্ট প্রকৃতির থাকলেও তার ভিতরে কিছু প্রতিভা দেখে তিনি খুবই মুগ্ধ হন। যা সচরাচর অন্যদের মধ্যে নেই। বর্তমানে সে অনেক ভদ্র এবং প্রশিক্ষণে খুবই মনোযোগী। সবচেয়ে ভালো একটি দিক হলো- সে কোনো সময় নার্ভাস ফিল করেন না।
জাপানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে উসাচিং মারমা বিজয়ের বক্তব্য এশিয়া মহাদেশের মধ্যে জাপান ক্রীড়া ক্ষেত্রে খুবই শক্তিশালী দেশ হলেও জুডোতে বড় মাপের ক্রীড়াবিদকে হারানোর আগে আমি খুবই আত্মবিশ^াসী ছিলাম, আমি বিজয়ী হবো। আমার প্রতিপক্ষ জাপানি খেলোয়াড়টি আমার চেয়ে উঁচু এবং স্বাস্থ্যগত সুঠাম দেহের অধিকারী ছিল। খেলায় এক পর্যায়ে আমি তাকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হই এবং স্বর্ণপদক পেয়ে যাই। তথ্য দেন ভুটানের রাজধানী থি¤পুতে জাপানের সাথে স্বর্ণপদক বিজয়ের আগে ওই আসরেই ভুটান, থাইল্যান্ড, ভারতের প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে এবং সেমিফাইনালে জাপানের আঞ্চলিক একজন জুডো খেলোয়াড়কে হারিয়ে ফাইনালে উঠি এবং চ্যাম্পিয়ন হই।
ওই সাফল্যের আগে উসাচিং মারমার নিজ দেশে চলতি বছরে বিকেএসপি কাপ আমন্ত্রণ আন্তর্জাতিক জুডো চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য, ২০২৪ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জুনিয়র প্রতিযোগিতা ঢাকায় স্বর্ণপদক, ২০২৩ সালে দেশের মাটিতে যুব গেমস্ েসিলভার ও একই বছর বিকেএসপি কাপ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন।
বয়স কম থাকায় এসএ গেম্সে অংশগ্রহণ করছেন না
এসএ গেমসে খেলার ইচ্ছা থাকলেও সে ওই আসরে অংশগ্রহণ করতে পারছে না উসাচিং মারমা। কারণ এসএ গেম্সে অংশ গ্রহণ করতে হলে ১৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তারা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। উসাচিং মারমার বর্তমানে ১৪ বছর চলছে। সে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।
জুডোতে যেভাবে আসা
উসাচিং মারমা বিজয় বাবা-মার এক মাত্র সন্তান। উসাচিং যখন খুবই ছোট তখন তার বাবা মংচিং মারমা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার মা শিউলি মারমা। মা পেশায় পার্লারের কাজ করেন। তার মাসি/খালা সিনুর উৎসাহে জুডো খেলায় আসছেন। উসাচিং বলেন, ঢাকা জেলা সাভারে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) খেলোয়াড় তৈরির খবর জানার পর তৃণমূলের মেধা অন্বেষণে দেশজুড়ে ২১টি ক্রীড়া বিভাগের জন্য জেলা পর্যায়ে খেলোয়াড় বাছাইয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমি ভর্তি হই।
বলেন, ভুটানের মাঠে জাপানি প্রতিযোগীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে আসলে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মুনীরুল ইসলাম ও পরিচালক প্রশিক্ষণ গোলাম মাহমুদ হাসান আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন এবং বলেছেন তুমি ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে, এগিয়ে যাও তুমি।



