লাইফস্টাইল

ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের উপায়

Printed Edition
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের উপায়
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের উপায়

লিনা আকতার

ইউরিক অ্যাসিড এক নীরব শত্রু। এ সমস্যাকে ছোট করে দেখবেন না, আজ জানুন ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষতি, প্রতিকার আর সঠিক খাদ্যাভ্যাস। সুস্থ জীবনযাপন হতে পারে এর প্রতিকার।

ইউরিক অ্যাসিড কী?

ইউরিক অ্যাসিড হলো আমাদের শরীরে পিউরিন নামক প্রাকৃতিক রাসায়নিক ভাঙার ফলে তৈরি হওয়া বর্জ্য পদার্থ। সাধারণত কিডনি এটি শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। কিন্তু যখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় (ঐুঢ়বৎঁৎরপবসরধ), তখন শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী হয়?

গাউট (এড়ঁঃ): জয়েন্টে (গাঁটে) স্ফটিক আকারে জমে গিয়ে তীব্র ব্যথা, ফোলা ও লালচে ভাব। সাধারণত পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে বেশি হয়।

কিডনির ক্ষতি : অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। এতে প্রস্রাবে জ্বালা, ব্যথা, রক্ত আসা, কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকি।

শরীরের ক্লান্তি ও ব্যথা : শরীর ভারী লাগে। মাংসপেশি ও হাড়ে ব্যথা ও অস্বস্তি।

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ : গবেষণায় প্রমাণিত, ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা হাই ব্লাড প্রেশার ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

মেটাবলিক সিনড্রোম : ডায়াবেটিস, স্থূলতা, কোলেস্টেরল সমস্যা ইত্যাদির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কারণ : ১। অতিরিক্ত লাল গোশত, কলিজা, মাছের ডিম, সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভি, সি-ফুড খাওয়া। ২। বেশি ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস। ৩। অ্যালকোহল ও চিনি মেশানো পানীয় (সফট ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস)। ৪। স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন। ৫। কিডনির দুর্বলতা বা কম কার্যকারিতা। ৬। বংশগত কারণ। ৭। দীর্ঘমেয়াদে কিছু ওষুধ যেমন ডায়ুরেটিক (মূত্রবর্ধক) ওষুধ।

ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের উপায় : খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন। পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার কম খান (লাল গোশত, কলিজা, সি-ফুড)। শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান। পরিশোধিত চিনি, ফাস্টফুড, ঝাল-তেল এড়িয়ে চলুন।

প্রচুর পানি পান করুন: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানি কিডনিকে ইউরিক অ্যাসিড বের করতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন : স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার, হালকা ব্যায়াম করুন। অ্যালকোহল ও মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন। বিয়ার, ওয়াইন, সোডা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।

সঠিক ওষুধ গ্রহণ করুন : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে যেসব খাবার উপকারী : আপেল, চেরি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, আঙুর, কলা।

সবজি : শসা, লাউ, করলা, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি।

ডাল ও শস্য : অল্প পরিমাণে মসুর ডাল, মুগ ডাল, ওটস, ব্রাউন রাইস।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার : লো-ফ্যাট দুধ, দই, ছানা।

বাদাম ও বীজ : আমন্ড, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড।

পানি ও তরল : লেবুর পানি, ডাবের পানি, সাধারণ পানি।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন : ১। লাল গোশত (গরু, খাসি, ভেড়ার কলিজা, ভুঁড়ি, মগজজাতীয় খাবার। ২। সি-ফুড (সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভি, চিংড়ি, মাছের ডিম)। ৩। অতিরিক্ত ডাল ও মটরশুঁটি। ৪। অ্যালকোহল। ৫। সফট ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস, বেশি মিষ্টি।

জীবনধারায় করণীয় : ১। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়াম। ২। রাত জাগা এড়িয়ে চলা। ৩। স্ট্রেস কমানো (ধ্যান, প্রার্থনা, বিশ্রাম)। ৪। সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া। ৫। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা (রক্ত পরীক্ষা ইউরিক অ্যাসিড লেভেল)।

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া অবহেলার বিষয় নয়। এটি গাউট, কিডনি স্টোন, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ তৈরি করতে পারে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি, নিয়মিত ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললেই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

লেখক : পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর