সাত মাস পর উৎপাদনে ফিরল সিইউএফএল

Printed Edition

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

গ্যাসসঙ্কটের কারণে দীর্ঘ সাত মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আবারো উৎপাদনে ফিরেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)।

শনিবার (১ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে ফের ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান।

সিইউএফএল সূত্রে জানা যায়, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় সাত মাসে কারখানাটির ৭০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ইউরিয়া সারের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ সময়ে কারখানার এক হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতি মাসে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।

এমডি মিজানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ বন্ধের পর উৎপাদন শুরু হওয়ায় আমরা সবাই আশাবাদী। গ্যাস সরবরাহ এখন স্থিতিশীল রয়েছে। এ সরবরাহ বজায় থাকলে এবং যান্ত্রিক কোনো সমস্যা না দেখা দিলে দ্রুত পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালানো সম্ভব হবে।’

গত ১১ এপ্রিল কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে সিইউএফএলের উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে অক্টোবরের শেষ দিকে ধীরে ধীরে গ্যাস সরবরাহ ফের চালু হলে এক সপ্তাহের প্রস্তুতির পর শনিবার রাতে ইউরিয়া উৎপাদন আবার শুরু হয়।

কারখানাটি সচল রাখতে দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। তবে গত অর্থবছরে গ্যাসসঙ্কট ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাত্র আড়াই লাখ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি যেখানে পূর্ণ সক্ষমতায় বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি। জাপানের প্রযুক্তি সহায়তায় ১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় স্থাপিত হয় সিইউএফএল।

১৯৯১ সালে উৎপাদন শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানটি এক সময় দেশের সার উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করত।

বর্তমানে এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া এবং তিন লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, ‘উৎপাদন চালু হলেও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। গ্যাস সরবরাহে স্থায়ী সমাধান না হলে আবারো বন্ধ হয়ে যেতে পারে কারখানাটি।’

দেশে ইউরিয়া সারের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। বিসিআইসির বিভিন্ন কারখানাসহ সিইউএফএলে উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন।

বাকি ১৬ লাখ মেট্রিক টন সার বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রায় সরকারের ওপর চাপ বাড়ে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, গ্যাস সরবরাহ স্থিতিশীল থাকলে সিইউএফএল আবারো পুরনো জৌলুস ফিরে পাবে। এতে দেশের সার আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং কৃষি খাত পাবে নতুন গতি।