আল-আকসা প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর উগ্র ইসরাইলিদের হামলা

আলজাজিরা
Printed Edition
উগ্রপন্থী ইসরাইলিদের আক্রমণের পর ফিলিস্তিনি নারীদের নিরাপত্তাবাহিনী পাহারা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে : ইন্টারনেট
উগ্রপন্থী ইসরাইলিদের আক্রমণের পর ফিলিস্তিনি নারীদের নিরাপত্তাবাহিনী পাহারা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে : ইন্টারনেট

জেরুসালেমে গত সোমবার কট্টর ডানপন্থী ইসরাইলিরা পবিত্র আল-আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণ ও জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার কার্যালয়ে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঢুকে পড়ে। জেরুসালেম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মিছিল থেকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানকার ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালানো হয়। জেরুসালেমের পুরনো শহরের অলিগলি ও মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকার ভেতর দিয়ে মিছিল করার সময় কিছু ইসরাইলি ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ ও ‘তোমাদের গ্রাম জ্বলে যাক’ বলে স্লোগান দেন।

১৯৬৭ সালে ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে। তখন থেকে শহরটি ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতি বছর ইসরাইলে ২৬ মে জেরুসালেম দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়, যা একটি বার্ষিক ছুটির দিন। এই দিনের স্মরণে প্রতি বছর একটি মিছিল বের করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আগে ভাগেই শত শত সশস্ত্র পুলিশ ও সীমান্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কারণ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা নিয়মিত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার দোকানপাট ও ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, নিপীড়ন ও হয়রানি করে থাকেন।

বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমের বিভিন্ন বসতি ও ফাঁড়িতে বসবাস করেন, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। সোমবারও একদল ইসরাইলি তরুণ ফিলিস্তিনি দোকানদার, পথচারী, স্কুলগামী শিশু, এমনকি ইসরাইলি মানবাধিকারকর্মী ও পুলিশের সাথে বিবাদে জড়ান। তারা লোকজনের গায়ে থুতু ছিটান, গালাগাল করেন ও জোরপূর্বক ঘরে ঢোকার চেষ্টা চালান। তাদের অনেকের হাতেই এ সময় ইসরাইলি পতাকা ছিল।

ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন সাংবাদদাতা জানান, এ সময় পুলিশ অন্তত দুই যুবককে আটক করেছে। মিছিলকারীদের একটি ছোট দল পূর্ব জেরুসালেমে ইউএনআরডব্লিউএর একটি কার্যালয়ের প্রাঙ্গণেও ঢুকে পড়ে। এ দলে একজন ইসরাইলি সংসদ সদস্যও ছিলেন। ইসরাইল ইউএনআরডব্লিউএকে দেশটি ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে গাজা উপত্যকায় সংস্থাটির ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ইউএনআরডব্লিউএর পশ্চিমতীরের সমন্বয়কারী রোলান্ড ফ্রিডরিশ বলেন, ডজনখানেক ইসরাইলি মিছিলকারী ইসরাইলি পুলিশের সামনেই মূল ফটক বেয়ে ওই প্রাঙ্গণে ঢোকেন। তাদের মধ্যে ইউলিয়া মালিনোভস্কিও ছিলেন। তিনি ইউএনআরডব্লিউএকে নিষিদ্ধ করা একটি আইনের অন্যতম প্রণেতা। গত বছর একই মিছিলে উগ্র জাতীয়তাবাদী ইসরাইলিরা পুরনো জেরুসালেমে এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আর চার বছর আগে একই মিছিল গাজায় ১১ দিনের একটি যুদ্ধের কারণ হয়েছিল। সোমবার সকালে ইসরাইলের চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অন্যান্য রাজনীতিবিদসহ দুই হাজারের বেশি ইসরাইলি পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় আগ্রাসীভাবে ঢুকে পড়েন।

বেন-গভির তার এক্স অ্যাকাউন্টে আল-আকসা প্রাঙ্গণ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, যুদ্ধের বিজয়, সব বন্দীর মুক্তি ও নবনিযুক্ত শিন বেতপ্রধান মেজর জেনারেল ডেভিড জিনির সাফল্যের প্রার্থনা করছি। এর আগেও সশস্ত্র পুলিশের সহায়তায় বেন-গভির আল-আকসা প্রাঙ্গণে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলেন।

আলজাজিরার সংবাদদাতা নিদা ইব্রাহিম বলেন, এই মিছিলের লক্ষ্য হলো শহরের ওপর ইসরাইলি আধিপত্য জাহির করা। তিনি বলেন, বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, জেরুসালেমের পুরনো শহরের ভেতরে ইসরাইলি নাগরিকেরা ফিলিস্তিনিদের দোকানে হামলা চালাচ্ছেন এবং তাদের দিকে বিভিন্ন বস্তু ছুড়ে মারছেন।