কম গতির যানে ভর্তি ঢাকার রাজপথ যানজট কখনোই কমে না

Printed Edition

হামিম উল কবির

কম গতির যানে ঢাকার রাস্তা ভর্তি, ফলে যানজট কখনোই কমে না। একটি আদর্শ শহরের সাথে তুলনা করলে ঢাকা শহরের যান চলাচল ব্যবস্থা কোনো সংজ্ঞাতেই পড়ে না। এই শহরের রাস্তায় কোনো যানবাহনে চড়লে কখন গন্তব্যে পৌঁছা যাবে তা কেউ বলতে পারবে না। যানবাহনগুলোর গতি হাঁটার গতির সমান হয়ে গেছে। কোনো কোনো সময় হাঁটলেও যানবাহনের চেয়ে বেশি গতিতে যাওয়া যায়। ফুটপাথগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাও যায় না। কার্যকর জোনিং নেই, নীতির অভাব ও দীর্ঘমেয়াদি নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকায় ঢাকার যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রাত্যহিক যানজটের সাথে রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে ঢাকা সেদিন স্থবির হয়ে পড়ে। এই অবস্থার অবসান চায় সবাই; কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং কার্যকর উদ্যোগের অভাবে ঢাকার যানজটের উন্নতি কখনোই হয় না।

সাধারণ পথচারী, সরকারি আমলা ও পরিকল্পনাবিদদের সাথে যানজট প্রসঙ্গে কথা বললে তারা সবাই একবাক্যে বলেন, ঢাকার রাস্তায় যানজটের প্রধান কারণ কম গতির যানবাহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য। কম গতির যানবাহনের মধ্যে রিকশা এবং নতুন করে চলাচল করা ব্যাটারিচালিত রিকশা অন্যতম। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে পায়ে চালিত রিকশা কমে যাচ্ছে। যদিও ব্যাটারিচালিত রিকশার গতি বেশি হলেও মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যার কারণে যানজটে এগুলো বেশ অবদান রাখছে। এ ছাড়া বাসগুলো যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠানো ও নামানোর কারণে পেছনে অনেক যান এক জায়গায় থেমে যায় এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার অথবা রিকশাগুলো ঢাকার রাস্তায় চলাচল করলে এরা যেখানে ফাঁকা থাকে সেখান দিয়েই চলাচল করে থাকে। ফলে পেছনে থাকা বেশি গতির যানবাহনগুলো ধীরে চলাচল করতে বাধ্য হয়ে থাকে। এভাবে ঢাকায় তীব্র যানজট লেগে যায় প্রতিদিন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, গণপরিবহন বাড়িয়ে রিকশা, ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার, ব্যক্তিগত মটর গাড়ি কমিয়ে এদেরকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে চালানো হলে যানজট কমে যাবে। ব্যক্তিগত মোটর গাড়ি কমাতে হলে ঢাকার রাস্তায় উন্নত মানের এসি বাস নামাতে হবে যেন যারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন তারা ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া রিকশা ও ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারের জন্য একটি পৃথক লেন করে দিতে হবে। তিনি বলেন, শুধু পৃথক লেন করে দিলেই হবে না, এদের চালকরা যেন তাদের জন্য নির্ধারিত লেনেই চলাচল করে তাও নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, ঢাকার রাজপথের যানবাহনের ধারণক্ষমতার সঙ্কট ও শৃঙ্খলার সঙ্কটের কারণে ঢাকার যানজট কমে না। যারা শৃঙ্খলার সাথে জড়িত তাদের আন্তরিকতারও কিছুটা সঙ্কট রয়েছে। অন্য দিকে যানজট নিরসনে এবং শৃঙ্খলায় যারা কাজ করেন তাদের অনেক কাজে জড়িত থাকার কারণে যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারেন না।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শহরের যানজট নিরসন ও রাস্তার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ব্যবহার করা হয়। তারা পুলিশের পাশাপাশি যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখেন। ঢাকা শহরে ইতোমধ্যে পুলিশের বাইরের কিছু যুবক-যুবতিদের দেখা যায়, যানজট নিরসনে কাজ করতে। এর বাইরে ঢাকার যানজট কমাতে হলে র‌্যাপিড বাস ট্রানজিটের (বিআরটি) ধারণা রয়েছে তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। বিআরটি চলাচল করবে ডেডিকেটেড লাইনে। এই রুটে আর কোনো কিছু চলবে না। দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হলে বিআরটিকে অপরিহার্য করতে হবে। সাধারণ রুটে যানজট লেগে থাকলেও বিআরটি লাইনটি চলবে বাধাহীনভাবে।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এই সিস্টেম আছে। সেসব দেশের মানুষ বিআরটি ব্যবহার করে দ্রুত বিভিন্ন স্থানে যেতে পারছে। আমাদের দেশেও এই সিস্টেমটা চালু করা উচিত।

তিনি বলেন, ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ব্যবহার করে দ্রুত যাওয়া যায় বিভিন্ন স্থানে কিন্তু এটাতে অনেক বিনিয়োগ করতে হয়। ঢাকা শহরে এমআরটি করা হয়েছে কিন্তু তাতে অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হয়েছে। কিন্তু বিরাজমান অবকাঠামো ব্যবহার করেই বিআরটি লাইন করা যায়। ফলে এতে নতুন করে অনেক বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। ড. মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, ঢাকার যানজট কমাতে হলে রাস্তার ধারণ ক্ষমতা ও রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।