- দলীয় প্রতিষ্ঠানের কাউকে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া নয়
- ফ্যাসিস্ট আমলে দলীয় বিবেচনায় দেয়া অস্ত্র জমা নিতে হবে
বিশেষ সংবাদদাতা
বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সব বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদেরকে কোনোরূপ নির্বাচনী দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না- সেই বিষয়ে ইসিকে জানিয়েছি বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচনের দিনই গণভোট করার পে বিএনপি। আর ইসলামী ব্যাংকসহ কোনো দলীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া যাবে না বলে লিখিত ৩৬ দফা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে এই কথা জানান ড. মঈন খান। প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব ডক্টর মোহাম্মদ জকরিয়া। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির পক্ষ থেকে ৩৬ দফার লিখিত প্রস্তাবনা সিইসিকে দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে ভোটের নামে হয়েছে প্রহসন। সে সময় প্রশাসনে থেকে রাজনৈতিকভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন অনেক কর্মকর্তা। ১৫ বছরের এই কর্মকর্তারা ১৫ মাসে পরিবর্তন হবে না, এই বিষয়ে আমরা ইসিকে সচেতন করেছি। তবে বিতর্কিত কর্মকর্তারা যেন আগামী নির্বাচনে কোনোভাবে অংশগ্রহণ না করতে পারেন সে ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
মঈন খান বলেন, জাতীয় নির্বাচন একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ। ৩০০ নির্বাচন এলাকায় ৪২ হাজার কেন্দ্র আছে। ভোটে ১০ লাখ লোক দরকার, তারা কারা? তারা সিভিল, পুলিশ, বিচার বিভাগ থেকে আসেন। বিগত ১৫ বছর প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা তাদের কাজ করবেন। তারা যেন বিনা বাধায় কাজ করতে পারেন। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। দীর্ঘ ১৭ বছরের সংগ্রাম ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এই অবস্থায় এসেছি। নির্বাচন কমিশনকে বলেছি তারা যেন একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন করা কমিশনের দায়িত্ব।
তারা সিইসিকে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে- নির্বাচনের নিরপেতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পারসোন্যাল তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের েেত্র দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলের নিকট চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। যেমন: ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য যে, ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকে সারা দেশে প্রায় ৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিল করেছে এবং এসব শূন্য পদে তড়িঘড়ি করে দলীয় লোকজন নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের অফিসারদের পাশাপাশি সম্ভাব্য েেত্র বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা (ইলেকশন সার্ভিস) কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দ, সৎ, অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ল্েয জুলাই’২৪ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের নামে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলাসমূহ নির্বাচনী সময়সূচি জারির আগেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় প্রদত্ত সব অস্ত্র সরকারের কাছে জমা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সীমান্ত পথে আসা অবৈধ অস্ত্র, নকল টাকা, কালো টাকার অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করতে হবে। নির্বাচন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও পপাতহীন হতে হবে। ভোটারদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগে সম্ভাব্য সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সূযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি, পেশিশক্তি ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে। নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত কোনো লোক নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক বিতর্ক তৈরি করে এমন কোনো বক্তব্য যাতে না দেয় তার প্রাক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
নির্বাচনে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়- এমন সব অপপ্রচার রোধ করতে হবে। ভোটারদের প্রভাবিত করে এ রূপ ধর্মীয় প্রলোভন বা ধর্মীয় দণ্ড প্রদানের ভীতি প্রদর্শন রোধ করতে হবে। অর্থ, দুর্নীতি ও সহিংসতা এর অসৎ প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে বিধি-বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্রকে ভোটারদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। যত দূর সম্ভব কম সংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করাই উত্তম। এতে কম দূরত্ব অতিক্রম করে ভোটাররা সহজেই ভোটকেন্দ্রে ভোটদানে উৎসাহিত হবেন।



