প্রতারণা, জাল ভিসা বন্ধে কঠোর বিএমইটি

লেবানন কুয়েত কাতার ও ইরাকগামীদের পাঠানো হচ্ছে ‘বডি কন্ট্রাক্টে’

Printed Edition

মনির হোসেন

লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া কোনো কর্মীরই আসার সুযোগ নেই। তার পরও আমাদের ঢাকার বিমানবন্দর দিয়ে ‘বডি কন্ট্রাক্টে’ অবৈধভাবে অনেক লোকই চলে আসছে। এর ফলে লেবাননের শ্রমবাজারে অবৈধ শ্রমিক আসার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এটি বন্ধ হওয়া উচিত।

গতকাল বৃহস্পতিবার লেবাননের বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন-এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নয়া দিগন্তকে এভাবেই অবৈধ শ্রমিক আসার কথা বলেন। শুধু লেবানন নয়, দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যেপ্রাচ্যের দেশ কাতার, কম্বোডিয়া ও ইরাকে অবৈধভাবে লোক যাওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে বলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং জনশক্তি ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন।

দূতালয় প্রধান আনোয়ার হোসাইন বলেন, লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে কোনো ধরনের কাজ করে না। কোনো এজেন্সির পক্ষে কথাও বলে না। লেবাননগামী কর্মীদের জন্য যেসব ভিসা সত্যায়নের জন্য দূতাবাসে জমা হচ্ছে সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করা ছাড়াও চুক্তি মোতাবেক কর্মীর কাজ আছে কি-না তার খোঁজ খবর নেয়ার পরই দূতাবাস থেকে ওই কর্মীদের বিষয়ে সত্যায়ন অনুমোদন দেয় হচ্ছে। ইদানীং লেবাননে এবং বাংলাদেশে একাধিক প্রতারক চক্র বের হয়েছে। তারা জাল ভিসা দিয়ে অবৈধভাবে এ দেশে লোক নিয়ে আসছে। আর এসব যারা করছে তারা ঢাকার বিমানবন্দরে থাকা কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে প্রতি কর্মীর জন্য বডি কন্ট্রাক্ট করে উড়োজাহাজে উঠিয়ে দিচ্ছে। এর পর ওই অবৈধ লোকটি অনায়াসে বাংলাদেশ থেকে লেবাননে চলে আসতে পারছে। এক প্রশ্নের উত্তরে দূতালয় প্রধান নয়া দিগন্তকে বলেন, অবৈধপথে লোক আসার কারণে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি লেবাননগামী কর্মীও রয়েছেন চরম ঝুঁকিতে। কারণ ওই লোকটি জানে না সে অবৈধ পথে বিদেশ চলে এসেছে। পরবর্তীতে তার অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। এই বিষয়টি বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন। বিশেষ করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দায়িত্বশীলদের।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট দিয়ে বডি কন্ট্রাক্টে যারা লেবাননে আসছে সেই পথটি দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে তার দফতরে যোগাযোগ করলে তিনি নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বৈধভাবে শ্রমিক যাওয়ার হার কমছে। এর কারণ হচ্ছে বিদেশগামীদের ইমিগ্রেশন কিয়ারেন্স নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও তাদের মনোনীত প্রতিনিধিরা বিএমইটি থেকে ইমিগ্রেশন কিয়ারেন্সের জন্য যে আবেদন অনলাইনে জমা করছেন সেগুলোতে অনেক সময়ই ত্রুটি ধরা পড়ে। আবার অনেক সময় ভুয়া ভিসাও পাওয়া যায়। নিয়ম না মানার কারণে অনেক বিদেশগামীর ফাইটও শেষ সময়ে স্থগিত করা হয়। কিন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গড়ে উঠা চক্রগুলোকে ব্যবহার করে বিএমইটির কিয়ারেন্স ছাড়াই ওই লোকগুলোকে বডি কন্ট্রাক্টে লেবানন, কাতার, কুয়েত, ইরাক, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে এক দিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে অপর দিকে ওই কর্মী যাওয়ার পর অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে তার (কর্মীর) বিষয়ে বিএমইটি থেকে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কর্মীদের আরো সজাগ হতে হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমবাজারে প্রতারণা আর বাটপারি বেড়ে গেছে। এতে অভিবাসন ব্যবসা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিএমইটির পরিচালক বহির্গমন থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা এগুলো বন্ধে আরো কঠোর হবো।

গতকাল বিকেলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোতে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জসিম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে এয়ারপোর্ট দিয়ে বডি কন্ট্রাকন্টে লোক যাওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘ইদানীং বৈধভাবে লোক যাওয়ার সাথে সাথে অবৈধভাবে লোকও যাচ্ছে অনেক। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের লোকজন শুধু বলে, ‘কই কার কয়জন আছে তাড়াতাড়ি পাঠাও’। মানে লোক ইমিগ্রেশন পার করাতে পারলেই টাকা আর টাকা। তার মতে অবৈধ পথে লোক যাওয়া বন্ধ না হলে আমাদের বৈধ অভিবাসন ব্যবসা হুমকিতে পড়বে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে বিএমইটিতে শত শত এজেন্সির প্রতিনিধিরা এসে ভিড় করতেন। এখন আমাদের ডিজি, এডিজি আর ডাইরেক্টর স্যাররা এসে সব সিস্টেম পরিবর্তন করে ফেলেছেন। শত ভাগ অনলাইন করেছেন। কোনো মালিক, কর্মচারীকে আর এখানে সশরীরে বিএমইটিতে আসতে হচ্ছে না। সবাই সবার কাজ ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন জমা করতে পারছেন, আর দিন শেষে ফাইল ওকে হয়েছে কি-না তাও তারা সহজে জানতে পারছেন। সব কিছু চলছে এখন সুন্দর সিস্টেমে।