মো: আবদুস সালিম
কাককে অনেকেই ‘পাখি’ বলতে চান না। তারা মনে করেন, ওরা শুধু নোংরা বা উচ্ছিষ্ট জিনিস খায়। জেনে রাখা ভালো, ওরা উচ্ছিষ্ট খাবারের পাশাপাশি ইঁদুর, পাখির বাসার ডিম-ছানা, নানা ধরনের ফল, ভাত, কাঠবিড়ালির ছানা ইত্যাদিও খায়। মাঝেমধ্যে সাবান, চামচ, ছোট বাটি, হাঁস-মুরগির ছানা ইত্যাদি ঠোঁটে করে নিয়ে যায়। এসব দিক দিয়ে পাতি কাক বা সাধারণ কাকের সাথে যথেষ্ট মিল রয়েছে দাঁড়কাকের। তবে এদের মধ্যে শরীরের সাইজ, রঙ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
পাতি কাকের তুলনায় দাঁড়কাক সাইজে কিছুটা বড়। কণ্ঠস্বর কিছুটা ভারী বা মোটা। সাধারণ কাক কিছুটা ফ্যাকাসে কালো হলেও দাঁড়কাক কিন্তু নীলাভ-কুচকুচে কালো। দাঁড় কাকের ওজন ৫০০-৫৫০ গ্রাম। গড় দৈর্ঘ্য ৪৫-৬০ সেন্টিমিটার। লেজ, পিঠ, ঘাড়, মাথা, ডানার শেষ দিকটা ও দেহের নিচটা কুচকুচে কালো। ঠোঁট ও পা কালো। ঠোঁট শক্তিশালী ও অপেক্ষাকৃত মোটা। চোখের মনি কালো। দেখতে প্রায় একই রকম স্ত্রী-পুরুষেরা। দাঁড়কাকের ইংরেজি নাম লার্জ-বিল্ড ক্রো (Large-billed crow)। বৈজ্ঞানিক নাম Corvus macrorhynchos.
বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, কম্বোডিয়া, ইরান প্রভৃতি দেশে বেশি দেখা যায় দাঁড়কাক। ওরা জোড়ায় কিংবা দলবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। মাঝেমধ্যে পাতি কাকের সাথেও দেখা যায়। প্রজননের সময় প্রায় সারা বছর। বেশির ভাগ সময়ে ডিম পাড়ে অন্য পাখির বাসায়। সেখানে অন্য পাখির ডিম, ছানা পেলে তা খেয়ে নেয়। নিজেরাও বানায় বাসা। বাসা বানায় গাছের মগডালে, উঁচু খুঁটিতে কিংবা মানুষের বাড়ির সুবিধাজনক স্থানে। শুকনো ঘাস, লতাপাতা, চিকন ডাল, ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে বাসা বানায়। ডিম দেয় ৪-৫টি করে। ডিম ফ্যাকাসে নিলাভ-হলুদ। অনেক সময় সবুজও হয়। খোসায় বাদামি ও ধূসর রংয়ের ছোপ ছোপ দাগ থাকে। পাখি তুলনায় ডিমের আকার ছোট, ১৫-২০ গ্রাম। ডিম থেকে ছানা বের হয় ২০-২২ দিনে। মা-বাবা মিলেমিশে দেখে ছানা। জানলে অবাক হবে, দাঁড়কাকের গড় আয়ু ১৮-২০ বছর। তবে অনেক সময় ৩০ বছর বা তার চেয়েও বেশি বাঁচে। খাদ্য সংকট, উপযুক্ত পরিবেশের অভাব , মানুষের অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে কমে যাচ্ছে দাঁড়কাক। অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দাঁড়কাকেরও ভূমিকা রয়েছে।



