হেমন্তে ভোরের স্নিগ্ধতা

Printed Edition
হেমন্তে ভোরের স্নিগ্ধতা
হেমন্তে ভোরের স্নিগ্ধতা

মির্জা রিজওয়ান আলম

এই ভোরে প্রকৃতি থাকে শান্ত কিন্তু নিস্তেজ নয়। খেজুর গাছের হাঁড়িতে জমে থাকা মিষ্টি রসের গন্ধ আর পিঠে-পুলি তৈরির ব্যস্ততা গ্রামের প্রতিটি ঘরে এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে। সামান্য শীতের আমেজ গায়ে মেখে, চাদর মুড়ি দিয়ে ভোরের নরম রোদ পোহানো এই হৈমন্তী ভোরের এক চিরায়ত ছবি। এটি এক পবিত্র, নিবিড় সৌন্দর্যের প্রহর, যা দিন শুরুর আগেই মনে এনে দেয় এক সতেজ ও কাব্যিক অনুভূতি

বাংলার জনজীবনে হৈমন্তী বা হেমন্ত ঋতুর ভোর এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই সময়টুকুই যেন শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে, প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে এক মায়াবী আর স্নিগ্ধ রূপে। শিশিরস্নাত এই ভোরের সৌন্দর্য কেবল চোখে দেখার নয়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করারও বিষয়।

আকাশ তখনো পুরোপুরি আলো ঝলমলে হয়নি, দূর দিগন্তে কেবল ফিকে সোনার মতো আলো। সেই আলোয় চারিদিক আবৃত হয়ে থাকে কুয়াশার চাদরে। গাছপালা, পথঘাট সবকিছুই যেন এক রহস্যময় আবরণে ঢাকা। এই ঘন কুয়াশাই হলো হৈমন্তী ভোরের প্রধান বৈশিষ্ট্য, যা সবকিছুকে দেয় এক শান্ত ও নিস্তব্ধ রূপ। কুয়াশার ভেতর দিয়ে দূরের গ্রাম বা পথিকের আবছা অবয়ব এক চিত্রকর তুলির আঁচড়ের মতো মনে হয়।

ঘাসের ডগায় জমে থাকা মুক্তোর মতো শিশিরবিন্দু এই ভোরের অন্যতম আকর্ষণ। সূর্যের প্রথম নরম আলো যখন সেই শিশিরবিন্দু স্পর্শ করে, তখন তারা হাজার তারার মতো ঝলমল করে ওঠে। প্রকৃতির এই অলঙ্কার মনকে এক অনাবিল আনন্দ দেয়। এই সময় কৃষকের ঘরে ওঠে নতুন ফসল, তাই এই ভোর একদিকে যেমন শীতের হিমেল স্পর্শ নিয়ে আসে, অন্যদিকে তেমনই নতুন ধানের গন্ধে এক পৌরুষের বার্তা বহন করে।

এই ভোরে প্রকৃতি থাকে শান্ত, কিন্তু নিস্তেজ নয়। খেজুর গাছের হাঁড়িতে জমে থাকা মিষ্টি রসের গন্ধ আর পিঠে-পুলি তৈরির ব্যস্ততা গ্রামের প্রতিটি ঘরে এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে। সামান্য শীতের আমেজ গায়ে মেখে, চাদর মুড়ি দিয়ে ভোরের নরম রোদ পোহানো এই হৈমন্তী ভোরের এক চিরায়ত ছবি। এটি এক পবিত্র, নিবিড় সৌন্দর্যের প্রহর, যা দিন শুরুর আগেই মনে এনে দেয় এক সতেজ ও কাব্যিক অনুভূতি।