- মঞ্চে কোনো ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না
- ট্রাম্প বক্তব্যে ‘ফিলিস্তিনি’ শব্দটি ব্যবহার করেননি
মিডল ইস্ট আই
দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর মিসরের রেড সি উপকূলীয় শহর শার্ম আল-শেইখে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ‘অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
বারাক ওবামার ২০০৯ সালের কায়রো বক্তৃতার পর এটি ছিল মিসরে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম ভাষণ। ওই বক্তৃতাতে ওবামা বলেছিলেন ‘মুসলমানদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সূচনা।’ ট্রাম্প এবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে দাবি করলেন, তার নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
প্রায় ৩৫ জন বিশ্বনেতার আমন্ত্রণে আয়োজিত এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাতার, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মিসরের শীর্ষ নেতারা। ট্রাম্প বলেন, ‘বহু বছরের রক্তপাতের পর গাজার যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এখন শত শত ট্রাক খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা নিয়ে সেখানে ঢুকছে। এই কক্ষে উপস্থিত দেশগুলোই পুনর্গঠনের বড় অংশের অর্থ দিচ্ছে।’
গাজার অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জাতিসঙ্ঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
গাজা পুনর্গঠন শুরু
ট্রাম্প জানান, গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ ‘পুনর্গঠন’ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। তার শান্তি দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরই জ্যারেড কুশনার ও আমি বাস্তবায়ন পর্যায়ের কাজ শুরু করি। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আমরা দীর্ঘ সময় এখানেই থাকব।’
ট্রাম্প মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথে বৈঠকের পর ভাষণে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে তুরস্ক, কাতার ও পাকিস্তানের নেতাদের সাথে বৈঠকই তাকে গাজা ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে এই দেশগুলো গাজার ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার খসড়া পেশ করে, যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়।
আবরাহাম চুক্তি প্রসঙ্গ
ভাষণে ট্রাম্প ২০২০ সালের আবরাহাম অ্যাকর্ডসের প্রসঙ্গ টেনে আবারো দেশগুলোকে এতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। ওই চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। ট্রাম্প বলেন, ‘যেসব দেশ এতে যোগ দিয়েছে তারা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। এখন আর কোনো অজুহাত নেই-গাজা নেই, ইরানও নেই।’
তিনি এটিকে ‘বিশ্ব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, গাজায় একটি নতুন, হামাস-বহির্ভূত পুলিশ বাহিনী গঠন করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে জানান, গাজার কিছু প্রাক্তন পুলিশ সদস্য ইতোমধ্যে টহল দিচ্ছেন, যা তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের অনুপস্থিতি
সম্মেলনে কোনো ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি মঞ্চে ছিলেন না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ফিলিস্তিনি’ শব্দটি উচ্চারণ না করে বারবার বলেন ‘গাজার মানুষ’। ৮৯ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দর্শক সারিতে বসে ছিলেন। ট্রাম্প তাকে দেখিয়ে বলেন, ‘দেখো, সবাই এখানে আছে।’
তবে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যদিও আরব দেশগুলো এটিকে বিদ্যমান একমাত্র ফিলিস্তিনি প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে দেখতে চায়।
কূটনৈতিক প্রশংসা
ট্রাম্প মিসরীয় প্রেসিডেন্ট সিসিকে ‘দ্য জেনারেল’ বলে সম্বোধন করে প্রশংসা করেন। হাস্যরস করে বলেন, ‘আপনার বিমানবাহিনীর সব জেটই মার্কিন তৈরি, আমি জানি সেগুলোর দাম কত।’ কাতারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘কাতারকে অনেক সমালোচনা করা হয়, কিন্তু যথেষ্ট কৃতিত্ব দেয়া হয় না।’ তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘তারা যখন সমস্যায় পড়েন, আমাকে ফোন করেন- আর সাধারণত আমি সমাধান করে দিই।’



