আনোয়ারুল ইসলাম
হেমন্তের সকাল। মাঠে মাঠে সোনালি ধান দক্ষিণা হাওয়ায় দুলছে। ধান ক্ষেতের পাশে ছোট্ট একটি পুকুর। এই পুকুরেই টুকটুকে লাল একটি হাঁসের ছানা মায়ের সাথে খেলছে। পুকুরের পাশে বড়াল নদী। হাঁসের ছানাটি পুকুর থেকে মাঝে মাঝে এ নদীতে যায়।সব পথ তার জানা আছে। তাই মাকে না বলে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। মা-ও ছানাকে খুঁজে না পেলে খুব বিরক্ত হয়।পুকুরের কচুরিপানা ও ঝাউ জঙ্গলে খুঁজে বেড়ায়। মা ছানাকে না পেলে কাৎ কাৎ স্বরে ডাকে। মায়ের ডাক শুনে ছানাটিও কাছে ছুটে আসে।
নদীর তীরে একটি বিরাট আমগাছ। এই আম গাছে প্রতিদিন একটা দুষ্ট কাক আসে। হাঁসের ছানাকে দেখে তার খুব লোভ হয়। নাদুসনুদুস চেহারার হাঁসের ছানাকে খেতে পারলে ২-৩ দিন আর কিছু খেতে হবে না। তাই হাঁসের ছানাকে সব সময় নজরে রাখে। কীভাবে খাওয়া যায়? হাঁসের ছানাটিও খুব চালাক। লোভী কাকের মনোভাব বুঝতে পারে। কাকটিকে দেখলে আর দূরে যায় না। মায়ের আশপাশেই থাকে। মা-ও ছানাকে আদরে আগলে রাখে। যাতে কোনো বিপদ না আসে।
হাঁসের ছানাটি ধীরে ধীরে বড়ো হতে লাগল।মাকে না বলেই দূরের নদীতে যায়। নির্ভয়ে নদীতে সাঁতার কাটে। মাকে আর চিন্তা করতে হয় না। তবুও মা বলেন, ‘দূরে কোথাও যেও না। আমার আশপাশেই থাকবে। তোমার ওপর দুষ্ট কাকের নজর আছে।’
একদিন এক কাণ্ড ঘটে গেল। হাঁসের ছানাটি পুকুর থেকে নদীতে যায়। তার মনে কোনো ভয় নেই। নদীর পানিতে এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়। লোভী কাক হঠাৎ উড়ে এসে আমগাছে পড়ল। বেশ কয়েক দিন থেকে খায় না। পেটে ভীষণ ক্ষুধা। হাঁসের ছানাকে দেখে মনে মনে খুবই খুশি হলো। আর খাদ্যের চিন্তা করতে হবে না। লোভী কাকটি মনে ফন্দি আঁটে। কীভাবে ভোজের ব্যবস্থা করা যায়? দুষ্ট কাক সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এক পর্যায়ে দুষ্ট কাক উড়ে গিয়ে হাঁসের ছানাকে খক করে ধরে ফেলল। হাঁসের ছানাও ভয়ে মা-মা বলে ডাকতে লাগল এবং জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,- মা বাঁচাও, বাঁচাও।
মা মাথা তুলে দেখল, ছানাকে দুষ্ট কাক ধরেছে। আর দেরি না করে মা হাঁস উড়ে গিয়ে কাকের পিঠের ওপর বসল। ভয়ে কাকটি ছানাকে ছেড়ে দিয়ে আমগাছের ডালে গিয়ে বসল। হাঁফ ছেড়ে বলল, আজ বাঁচলাম। শেষে মা হাঁসটি তার ছানাকে নিয়ে নিরাপদ পুকুরে গেল। মা তার ছানাকে বললেন, ‘বেশি সাহস ভালো নয়। দুঃসাহসে দুঃখ হয়। বড়দের কথা শুনতে হয়। বড়দের কথা অমান্য করলে বিপদ আসন্ন।’



