খুলনার ভৈরব সেতু নির্মাণের সাড়ে ৪ বছর

পিলার দেখেই সান্ত¡না দুই পারের মানুষের

Printed Edition
সাড়ে চার বছর ধরে চলছে সেতুর পিলারের কাজ : নয়া দিগন্ত
সাড়ে চার বছর ধরে চলছে সেতুর পিলারের কাজ : নয়া দিগন্ত

শেখ শামসুদ্দীন দোহা খুলনা ব্যুরো

দফায় দফায় মেয়াদ বাড়লেও কাজ শেষের অগ্রগতিতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ দুই প্রান্তের মানুষ। নির্মাণকাজের সাড়ে চার বছরে অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। এ রকম ধীরগতিতে চলছে খুলনাবাসীর বহুলপ্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা ছিল ২০২৪ সালে শেষ হবে সেতুর নির্মাণকাজ। অথচ ২০২৫ সাল শেষপ্রান্তে এসেও স্বপ্নের সেতুর পূর্ণতা দেখা যায়নি। শুধু পিলার দেখেই সান্ত¡নার খোরাক মিটাচ্ছে খুলনাবাসী।

খুলনা শহর থেকে দীঘলিয়া, গাজীরহাট ও তেরখাদা উপজেলাকে পৃথক করেছে ভৈরব। নদীর দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা সড়ক ও জনপদ অধিদফতর। ২০১৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ১৩১৬ দশমিক ৯৬ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫০ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্পে কাজের অংশগুলো ছিল জমি অধিগ্রহণ ও সেতু নির্মাণকাজ। সেতু নির্মাণ প্যাকেজে ছিল ১২১৬ দশমিক ৯৬ মিটার সেতু, ১০০ মিটার স্টিল সেতু, ১৩৭৬ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ২ কিলোমিটার নতুন সড়ক, তিন হাজার ৭৬০ মিটার বিভাজক, দুটি ইন্টার সেকশন ও টোলপ্লাজা নির্মাণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২৪ মে। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পরও সেতুর শহরাংশে রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা ২ দশমিক ৫৮৬ একর জমি এখনো বুঝে পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর তিন বছর পর ২০২৪ সালের ১৪ মে নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্য প্রফেসর এ এফ এম সাইফুল আমিন ভৈরব নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন।

সেতুর সাইট ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল হাসান আকাশ জানান, সেতুর রেলিগেট অংশের নদীর তীরবর্তী ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এক, দুই, চার এবং নং থেকে বারো নম্বর সাতটি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ৮ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৪টি পিলারের মধ্যে এরই মধ্যে ১৩টি পিলারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

দীঘলিয়ার বাসিন্দা শেখ আহাদ আলীসহ কয়েকজন জানান, প্রতিদিনই ট্রলারে পারাপারে ভোগান্তি হচ্ছে। খরচ আর দুর্ভোগ দুটোই বেড়ে গেছে। সেতু নিয়ে অনেক আশা ছিল যে কৃষিপণ্য নিয়ে সহজে পারাপার হওয়া যাবে। তবে কাজের গতি খুবই মন্থর। বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে কিন্তু কাজ এগোচ্ছে না। গত চার বছর ধরে দেখছি কখনো একটু কাজ হয় আবারো বন্ধ হয়ে যায়।

সেতুর বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, আশা করি ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে। রেলওয়ের জমি হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। শুধু বর্ধিত কাজের ব্যয় বাড়বে। তবে সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণের ধার্যকৃত বেঁচে যাওয়া অর্থ রয়েছে, তা দিয়ে বর্ধিত কাজের ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।