ভুটানের সাথে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ট্রায়াল রান চলছে : হামু দর্র্জি

Printed Edition

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভুটানের সাথে ২০২৩ সালের বাংলাদেশের ট্রানজিট চুক্তি অনুযায়ী ট্রায়াল রান চলছে। ইতোমধ্যে সেপ্টেম্বরে একটি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এটি ট্রানজিট সুবিধার আওতায় সড়কপথে ভুটান যাবে। একইভাবে ভুটান থেকে আরেকটি ট্রায়াল রান পরিচালিত হবে, যেটি বাংলাদেশে ট্রানজিট হয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাবে। এই পরীামূলক কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ক্রসবর্ডার ট্রানজিটে যেকোনো অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ থাকলে তা চিহ্নিত করা।

গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক কান্ট্রি লেকচারে ঢাকায় নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত দাশো কর্মা হামু দর্জি এ সব কথা জানান। ‘বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্ক : সমৃদ্ধির জন্য দ্বিপীয় সম্পর্ক উন্নীতকরণ’ শীর্ষক কান্ট্রি লেকচারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান।

বাংলাদেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে ভুটানের রাষ্ট্রদূত দুই দেশের স্থায়ী অংশীদারিত্বে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি পরিবেশ, জলবিদ্যুৎ, পর্যটন ও শিার মতো অভিন্ন অগ্রাধিকার ত্রেগুলোর ওপর জোর দেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ভুটান পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং আঞ্চলিক সম্প্রীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার ল্েয ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সাথে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ভুটানের সাথে বাংলাদেশের এফটিএ সই নিয়ে আলাপ হয়েছে।

তিনি বলেন, ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ ও ভুটান উভয় দেশই লাভবান হতে পারে। চলতি বছরের শেষে ঢাকায় ভুটানের সাথে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসাল্টেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সাথে ভুটানের পর্যটন খাতে সহযোগিতার চুক্তি করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভুটানে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেড় হাজার বাংলাদেশী পর্যটক ভুটান ভ্রমণ করেছে। বাংলাদেশের জন্য ভুটান ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ সুবিধা দিচ্ছে। ভুটান বিশ্বের শুধু দু’টি দেশের জন্য পর্যটনে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি কমিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। ভুটানের পর্যটকরা প্রতি বছর ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করে থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ভুটানের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে। বর্তমানে ভুটানের ২৩০ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মেডিক্যালগুলোতে পড়াশোনা করছে।

মাশফি বিনতে শামস বলেন, ভুটানের বাজার ছোট হতে পারে। তবে ভুটানের মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বেশ ভালো। বাংলাদেশ থেকে ভুটানে রফতানিযোগ্য বেশ কয়েটি পণ্য রয়েছে, যার সম্ভাব্যতা এখনো খতিয়ে দেয়া হয়নি। অন্য দিকে ভুটানের অনেক পণ্য রয়েছে যা বাংলাদেশ আমদানি করতে পারে।

অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে ভুটান আমদানি-রফতানি ব্যয় কমিয়ে আনতে পারে। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বাংলাদেশ প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কম খরচ ও কম সময়ে তৃতীয় দেশে আমদানি-রফতানির জন্য এ সব বন্দর ভুটানের জন্য সহায়ক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিদাতা দেশ হলো ভুটান। ভৌগোলিকভাবে কাছাকাছি অবস্থান থাকলেও দুই দেশের বাণিজ্য কাক্সিত মাত্রায় আগায়নি। ভুটান থেকে বাংলাদেশ বছরে ১০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। কিন্তু রফতানির মাত্রা দুই কোটি ডলারেও পৌঁছায়নি। সবশেষে অর্থবছরে ভুটানে রফতানি হয়েছে মাত্র এক কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পণ্য। অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) আওতায় ভুটানে রফাতানিতে ৩৪টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। আর ভুটান ১০০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের সাথে এফটিএ সইয়ে আগ্রহী ভুটান। এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এফটিএ সই করলে দুই দেশ বাণিজ্যিক লাভবান হবে।