জৈন্তাপুর বিজিবির গুলিতে যুবকের মৃত্যু

Printed Edition

জৈন্তাপুর (সিলেট) সংবাদদাতা

সিলেটের জৈন্তাপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ছোড়া গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বিজিবির পক্ষ থেকে নিহত আলমাস চোরাকারবারি দাবি করা হলেও স্থানীয়রা বলছে সে একজন কৃষক।

নিহত যুবক উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে আলমাছ উদ্দিন (২৩)।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে চারিকাটা ইউনিয়নের বালিধারা কান্দির মুখ মসজিদের দক্ষিণ পাশে তাজ উদ্দিনের বাড়ির সন্নিকটে চতুল-লালাখাল রাস্তার উপর এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ সময় চোরাইপণ্য ভর্তি ট্রাক জব্দ করা হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ সুইরঘাট বিওপির চারজন বিজিবি সদস্য দু’টি মোটরসাইকেলযোগে ভারতীয় চোরাই সুপারিবাহী একটি পিকআপকে ধাওয়া করে। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে পথচারী কৃষক আলমাস উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা বেলা ১১টায় তাকে দ্রুত জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলমাসকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে উপস্থিত হয়। বেলা ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমার উপস্থিতিতে নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি সম্পন্ন করা হয়।

বিজিবির গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহতের পরিবারসহ এলাকাবাসী দাবি করছেন নিহত আলমাস উদ্দিন রামাই (বরবটি) বাগানের কৃষক। সে চোরাকারবারে জড়িত না। এ ঘটনায় নিহতের সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয়রা।

বিজিবির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল ১০টায় জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ সুরাইঘাট বিওপির একটি টহলদল জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের ভিত্রিখেল সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানবিরোধী অভিযানে চালায়। অভিযান চলাকালীন টহলদল একটি অবৈধ পণ্যবাহী পিকআপ আটক করলে, অজ্ঞাতনামা একদল সশস্ত্র চোরাকারবারি দেশীয় ধারালো অস্ত্র, দা, বল্লম, লাঠি-সোটাসহ টহলদলের উপর আকস্মিকভাবে হামলা চালায় এবং আটককৃত মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। চোরাকারবারিদের ক্রমাগত আক্রমণ থেকে সরকারি সম্পদ (অস্ত্র ও গোলাবারুদ) ও টহলদলের সদস্যদের জানমাল রক্ষার্থে, বিজিবি সদস্যরা নিরুপায় হয়ে ০৪-০৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, একজন বিজিবি সদস্য আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে আলমাস উদ্দিনের নিহতের ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লাশের মাথার পেছনে গুলির আঘাত পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে থানায় কোনো মামলা হয়নি।

১৯ বিজিবির কমান্ডার লেফটনেন্ট কর্নেল জুবায়ের আহমদ জানান, গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি চোরাকারবারি উল্লেখ করে তিনি বলেন, চোরাই পণ্যবাহী ট্রাকের সাথেই তিনি ছিলেন।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, নিহতের দেহে তিনটি বুলেট আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করা হয়েছে। পরে নিহতের লাশ পুলিশের হেফাজতে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সারী নদী থেকে রাইফেল ও ২৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি রাইফেল একটি ম্যাগাজিন ও ২৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাউরভাগ মৌল্লিফৌদ এলাকার স্থানীয় এক কিশোরের চোখে পড়ায় তৎক্ষণিক থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানায়, সারী নদীতে গোসল করতে নামে স্থানীয় কিশোর তাসিম হোসেন (১৬)। কিছু ক্ষণ পরই তার পায়ের সাথে ধাতব জাতীয় বস্তু কিছু লেগে যায়। পরে পানি থেকে সেটি তুলে দেখে এটি একটি রাইফেল। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা দ্রুত জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশকে খবর দেয়। তল্লাশির সময় পুলিশ রাইফেলের সাথে একটি ম্যাগাজিন ও ২৫ রাউন্ড গুলি পায়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি বর্তমানে থানায় সংরক্ষিত রয়েছে।

এদিকে নদী থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, রাইফেলটি সম্ভবত দীর্ঘ দিন ধরে পানির নিচে পড়েছিল। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অবশিষ্ট কোনো অস্ত্র হতেপারে। তদন্ত শেষ হলে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী অস্ত্রটি রাষ্ট্রীয় নিয়মে নিষ্পত্তি করা হবে।