বিশেষ সংবাদদাতা
হাইকমান্ডের সাথে বৈঠকের পর এখন সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপির ৯৯৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। জানা গেছে, আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই কমপক্ষে ২০০ আসনে দলের প্রার্থী কে হবেন তা জানিয়ে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে কাউকে কাউকে জানিয়েও দেয়া হয়েছে।
প্রার্থী যাচাই-বাছাই করার পর সারা দেশের ১০ সাংগঠনিক বিভাগের ৯৯৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে গত রোববার ও সোমবার ঢাকায় ডেকে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ হিসেবে প্রতি আসনে গড়ে বিএনপির তিনজনের বেশি প্রার্থী রয়েছে। দুই দিনের এই মতবিনিময় সভা শেষে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন যে, তাদের মধ্যে দল থেকে কাকে বেছে নেয়া হবে। অর্থাৎ তারা এখন শেষ মুহূর্তের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে এখনো ঢাকায়ই রয়ে গেছেন। এলাকায় ফিরে যাওয়ার আগে শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবির করছেন তারা।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। নতুন এই সমীকরণে জামায়াতের একক প্রার্থীরা মাঠে থাকায় প্রচারণায় যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এ লক্ষ্যে একাধিক মাঠ জরিপ ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতিবেদনের পর সর্বশেষ মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় এক হাজার প্রার্থীর সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হলো।
জানা গেছে, বিএনপি গত মাস থেকেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল বা সবুজ সঙ্কেত দেয়া শুরু করেছে। তারেক রহমান নিজে ফোন করে অথবা দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে এই মেসেজ দেয়া হয়। এখন দুই শ’র মধ্যে অবশিষ্ট অধিকাংশ আসনে এ মাসের মধ্যেই একই প্রক্রিয়ায় গ্রিন সিগন্যালের মাধ্যমে প্রার্থিতার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। তবে দলীয় সূত্রমতে, এটি প্রাথমিক মনোনয়ন। নির্বাচনের তপশিলের পরে দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া তথা মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। এ দিকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরও দল থেকে প্রার্থীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনো অভিযোগ কিংবা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাঠে ভালো করতে না পারলে মনোনয়ন বোর্ডে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থিতায় পরিবর্তনও আসতে পারে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে।
মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একজন প্রার্থীকে ফোনে বা অন্যভাবে মেসেজে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপ্রাপ্তির বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। সেটা এই মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। তারপর যখন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে, তখন অফিসিয়ালি ৩০০ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্য। তার নেতৃত্বেই আমরা কাজ করছি।’
জানা গেছে, দুই দিনের মতবিনিময় সভায় ৩০০ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মোটা দাগে তিনটি বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেগুলো হলো- দলে কোনো গ্রুপিং-বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না; যেকোনো পরিস্থিতিতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং জনগণের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমান তার আবেগঘন বক্তব্যে ‘ধানের শীষের বিজয় কেন নিশ্চিত করতে হবে’- সে ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। জিয়া পরিবারের ত্যাগ-তীতিক্ষা বিশেষ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ নয়- দীর্ঘ সময় পর যে সুযোগ এসেছে, সবাই মিলে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে, ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে।
জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে দলও কোথাও কোনো বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ দিবে না। ঐক্য ধরে রাখতে এ ক্ষেত্রে কোনো আপস করবে না।



