খান জাহান আলী চৌধুরী নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
টিকটক ও ইউটিউবে ইউরোপে পাঠানোর স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পারভেজ মিয়া (৩০)। নিজেকে কখনো ব্লগার, কখনো ট্রাভেলার হিসেবে পরিচয় দেয়া এ প্রতারক একাধিক জেলায় শতাধিক তরুণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। টাকা নিয়ে এখন তিনি লাপাত্তা। তার বিরুদ্ধে একাধিক থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে পারভেজ মিয়া টিকটকে ‘পারভেজ হাসান আবির’ নামে একাধিক আইডি ব্যবহার করতেন। ইউটিউবেও ‘ট্রাভেলার উইথ আবির’ নামে একটি চ্যানেলে নিজেকে ট্রাভেলার পরিচয়ে নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করতেন। এসব ভিডিওতে কখনো ইতালি, কখনো নিউজিল্যান্ড, আবার কখনো পোল্যান্ডে সহজে যাওয়ার উপায় দেখিয়ে বলতেন ‘আমার কাছে অনেক অফার লেটার আছে, ভিসা ইস্যু হয়ে গেছে, দ্রুত যোগাযোগ করুন।’
ভিডিওর নিচে দিতেন দু’টি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার। এসব মাধ্যমে যোগাযোগকারীদের দেখাতেন ভুয়া ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ও কোম্পানির ফটোকপি। সুন্দর বাচনভঙ্গি, আধুনিক পোশাক ও মিষ্টি কথায় সহজেই ফাঁদে পড়ের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসী জুয়েল মিয়া জানান, আমার কাছ থেকেও টাকা নিতে চেয়েছিল সে। পরে শুনলাম সে এলাকার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।
প্রতারিত ব্যক্তিরা জানান, পারভেজ আগে ছিল ইটভাটার শ্রমিক। তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন দেখে অনেকে বিশ্বাস করেছিলেন সে সত্যিই বিদেশে লোক পাঠাতে পারে। ফলে অনেকে বাড়ি-ঘর বিক্রি করে, ধার করে টাকা দিয়েছিলেন ইউরোপে যাওয়ার আশায়। প্রতারক পারভেজের পারিবারিক অবস্থাও করুণ। সাত ভাইয়ের মধ্যে বড় সে। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বর্তমানে পরিবারের কেউ এলাকায় নেই। দীর্ঘ চার বছর ধরে তাদের টিনের বাড়িটি খালি পড়ে আছে।
১০ বছর ধরে দুবাই প্রবাসী পারভেজের চাচাতো ভাই এনামুল মিয়া জানান ‘পোল্যান্ডে পাঠানোর কথা বলে আমার কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়েছিল। দেশে ফিরে বুঝতে পারি সবই প্রতারণা। এখন রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। এনামুলের স্ত্রী অঞ্জনা বলেন, আমার দুইডা প্রতিবন্ধী পুত। হের মায়া দেখায় টেহা নিছে। আরেক ভুক্তভোগী আমির হামজা জানান, আমি পুতেরে ইউরোপে নিতে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা দিছি। হে কইল ট্রেনিং লাগবো, চিটাগাং যাইতে অইবো। পরে ঢাকায় যাইয়া বুঝলাম, হে মিথ্যা কইছে।
এ ছাড়া স্থানীয় জয়নাল মিয়ার কাছ থেকেও প্রায় ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পারভেজ। প্রতারক পারভেজ তার টিকটক ও ইউটিউবে নিজেকে কখনো ‘পারভেজ হাসান আবির’, কখনো ‘আবির টি হাজউ’ নামে পরিচয় দিতেন। ভুয়া পরিচয়ে তিনি কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা দাবি করতেন। এ দু’টি নামে সিটি ব্যাংকে দু’টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা নেয়ার প্রমাণ মিলেছে।
ভুক্তভোগীরা তার প্রতারণার অভিযোগ ফেসবুক ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করলে পারভেজ পাল্টা ভিডিও বার্তায় নিজেকে দেশে দু’টি ব্যবসার মালিক এবং ৪০টির বেশি দেশে ভ্রমণকারী বলে দাবি করেন। স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগীরা দ্রুত তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।



