বকশীগঞ্জে বন্যহাতির আতঙ্কে রাত কাটছে ১০ গ্রামের মানুষের

Printed Edition
বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়াকামালপুর সীমান্তে বন্যহাতির পাল : নয়া দিগন্ত
বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়াকামালপুর সীমান্তে বন্যহাতির পাল : নয়া দিগন্ত

ফিরোজ আল মোজাহিদ বকশীগঞ্জ (জামালপুর)

হাতির আতঙ্কে প্রতি দিন নির্ঘুম রাত কাটছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধানুয়াকামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের। পাহাড়ি হিংস্র বন্যহাতির পাল দল বেঁধে খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ের গ্রামগুলোতে। বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে আক্রমণ চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কৃষকদের।

উপজেলার ধানুয়াকামালপুর ইউনিয়নের সোমনাথ পাড়া, দিঘলকোনা, টিলাপাড়া, বালুচর ও হাতিবারকোনাসহ সীমান্তবর্তী ১০ গ্রামের মানুষ বন্যহাতির আতঙ্কে ফসল রক্ষায় মশাল জ্বালিয়ে, ঢোল-ডগ্গর বাজিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আবার ফসল রক্ষায় হাতি তাড়াতে মশাল জ্বালিয়ে নিজের জমিতে অবস্থানও করছেন কৃষকরা।

স্থানীরা জানান, গত কয়েক দিন ধরে ৩০-৪০টি বন্যহাতি ভারত থেকে কাঁটাতারের বেড়া টপকে ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছে। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে লোকালয়ে প্রবেশ করে গাছপালা ও আবাদি ফসল নষ্ট করে ফেলছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নজরুল বলেন, বর্তমানে পাহাড়ের সমতলে আমন ও সবজির চাষ শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই হাতির পাল এসে আমাদের ফসল বিনষ্ট করে। বেশির ভাগ সময়ে ধান ও কাঁঠাল পাকার মৌসুমে হাতির পাল খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। এবার এসেছে ফসলের মৌসুমের শুরুতেই।

একই গ্রামের মনসুর মিয়া বলেন, ‘বিকাল অইলে আমগর এইদিহি আস্তে আস্তে পাহাড় থাইকা নিচে নামতে থাহে হাতির দল। দুই রাতে আমার জমিনের ধান ক্ষেত পারাইয়া শেষ কইরা হারছে। মশাল জ্বালাইয়া এগরে খেদাইলেও যাইতাছে না। প্রশাসনের কাছে আবেদন করি আমাদের এই হাতির তাণ্ডব থেহে বাঁচান।’

ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাপ জামাল বলেন, এই বন্যহাতির পাল ভারতের মেঘালয় থেকে প্রতি বছরই চলে আসে। এবারও এসেছে। আমাদের ঘুম নেই। সন্ধ্যা হলে ফসল রক্ষার জন্য লোকজন নিয়ে মশাল জ্বালিয়ে ক্ষেতেই রাত কাটাতে হচ্ছে। দিনের বেলা হাতিগুলো সীমান্তের শূন্যরেখায় পাহাড়ে অবস্থান করে আর সন্ধ্যা হলেই সমতলে ধান খেতে নেমে আসে এবং বাড়িঘরেও হামলা চালায়।

ডুমুরতলা বিট কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, মূলত খাবারের জন্যই লোকালয়ে চলে আসে হাতির পাল। হাতির তাণ্ডব থেকে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি রক্ষার্থে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বড় টর্চ লাইটসহ হাতি তাড়ানোর জন্য বাদ্যযন্ত্র প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে। এর পরও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বন বিভাগ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে বন বিভাগ।

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদ রানা বলেন, হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।