প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত

ডাকসু নির্বাচনে জয় জুলাই প্রজন্ম ও শহীদদের আকাক্সক্ষা : ভিপি সাদিক

Printed Edition
ডাকসুর নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম কার্যনির্বাহী সভা : নয়া দিগন্ত
ডাকসুর নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম কার্যনির্বাহী সভা : নয়া দিগন্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কোনো ব্যক্তিগত জয়-পরাজয় হয়নি, বরং এর মাধ্যমে ‘জুলাই প্রজন্ম’ এবং শহীদদের আকাক্সক্ষার বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম।

গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি লাউঞ্জে ডাকসুর নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম কার্যনির্বাহী সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা যারা নির্বাচিত হয়েছি, সবাই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি। শিক্ষার্থীদের কাজ আমাদের প্রশ্ন করা, আর আমাদের দায়িত্ব দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। নির্বাচনের পর থেকে আমরা সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করি, এখানে আসলে কারো ব্যক্তিগত জয় বা পরাজয় নেই।’ তিনি জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর যেকোনো সমস্যা সমাধানে তারা প্রস্তুত। সাবেক ছাত্র নেতাদের সাথে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং শিগগিরই শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে মাসভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।’

সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমরা সবার প্রতিনিধি হয়ে কাজ করতে চাই। শিক্ষার্থীদের কথাগুলো বলতে চাই। সে জায়গাগুলোতে আমরা একমত হয়েছি। কী কী কাজ হতে পারে, টোটাল পরিকল্পনা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে করে বাস্তবায়নে নেমে পড়তে চাই।’

এস এম ফরহাদ আরো বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সিনেটে পাঁচ প্রতিনিধি পাঠানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। ২০১৯ সালে ডাকসু ছিল, এরপর নিয়মিত হয়নি। ডাকসুর ট্রেজারার কে হবেন, সে ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটাও প্রকাশ করব। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে কী কী বিষয় মাথায় রাখব, তেমন মূলনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, অল্প সময়ের মধ্যে সপ্তাহ ও মাসভিত্তিক এক্সিকিউটিভ প্ল্যান গ্রহণ করা হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

সিনেটে যাচ্ছেন ৫ ছাত্র প্রতিনিধি : অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে পাঁচ ছাত্র প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হলেন- ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদ, এজিএস মহিউদ্দীন খান, সদস্যদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া সাবিকুন্নাহার তামান্না এবং পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ।

জিএস ফরহাদ জানান, ‘এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।’ এর আগে, সকালে ভিসি কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে ভিসি ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভিসি নির্বাচিতদের ফুল দিয়ে বরণ করেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভিপি, জিএস এবং এজিএসসহ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি পাঁচটি পদের মধ্যে চারটিতে স্বতন্ত্র এবং একটিতে বামপন্থী প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের এক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ডাকসু ও হল সংসদ : জয়ী প্রার্থীদের তালিকা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদটিতে ফজলুল হক মুসলিম হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের কয়েকজন প্রার্থীর ভোটসংখ্যা একই দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের অপতথ্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, ফজলুল হক মুসলিম হলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে মো: আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ৮৪১, মো: আবিদুল ইসলাম খান ১৮১, উমামা ফাতেমা ১৫৩, আব্দুল কাদের ৪৭, শামীম হোসেন ১৪১ ভোট পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদ ৫৮৯, শেখ তানভীর বারী হামিম ২২৮, মেঘমল্লার বসু ৯৯, মো: আবু বাকের মজুমদার ৩৪১ ভোট পেয়েছেন। সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে তানভীর আল হাদী মায়েদ ১৮৮, মো: মহিউদ্দিন খান ৭০৫ ও আশরেফা খাতুন ৩৫ ভোট পেয়েছেন।

অন্য দিকে, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে মো: আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ৬৭৪, মো: আবিদুল ইসলাম খান ২৪৮, উমামা ফাতেমা ১৫১, শামীম হোসেন ১৩১ ও আব্দুল কাদের ৭০ ভোট পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদ ৫৪৪, মো: আবু বাকের মজুমদার ৭২ ও শেখ তানভীর বারী হামিম ৩৩৪টি ভোট পেয়েছেন। সহসাধারণ সম্পাদক পদে (এজিএস) মো: মহিউদ্দিন খান ৫৭৭, তানভীর আল হাদী মায়েদ ২৩৪ ও আশরেফা খাতুন ২৮টি ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্পষ্ট জানাচ্ছে যে, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অপচেষ্টা কারো জন্যই শোভন নয়।