২ হাজার কোটি টাকা পাচারের আসামি লৌহজংয়ের অপু অধরা

Printed Edition

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতি ও প্রশাসনকে তছনছ করা দুর্নীতিবাজদের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছিল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে অপু চাকলাদারের নাম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ছয়টি মানিলন্ডারিং মামলায় দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত এই নেতা অস্ত্রসহ মোট ২৭টি মামলার আসামি। তবুও তিনি বছরের পর বছর আইনের হাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অপুর বিরুদ্ধে ভারতসহ বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের প্রমাণ রয়েছে। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব এবং আসন্ন কমিটিতে সভাপতি হওয়ার জন্য সক্রিয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপুর ছোট ভাই মিজানুর রহমান দীপু চাকলাদার আওয়ামী লীগ নেতা। দুই ভাইয়ের রাজনৈতিক দল ভিন্ন হলেও দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচারের নেটওয়ার্ক অভিন্ন। ২০১৭-১৮ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অত্যন্ত সংবেদনশীল ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম’-এ (স্বয়ংক্রিয় কাস্টমস মেনেজমেন্ট সিস্টেম) অন্তত তিন হাজার ৬৬১ বার অবৈধ ‘লগইন’ করে শত শত কনটেইনার অবৈধভাবে খালাস করার অভিযোগ রয়েছে অপুর মালিকানাধীন ‘মেসার্স চাকলাদার সার্ভিস’-এর বিরুদ্ধে।

তদন্তে আরো জানা গেছে, ‘মেসার্স এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’-এর নামে বোতাম ও সেফটিপিন আমদানির এলসি খুলে গোপনে বেনসন ব্র্যান্ডের সিগারেট আমদানি করে আরো শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এই অবৈধ কার্যক্রমে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরিতে সহায়তা করে এক প্রভাবশালী শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যিনি শেখ পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন।

সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা অপু ও দীপু বর্তমানে ঢাকার অভিজাত এলাকায় একাধিক বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি ও বিদেশে বিনিয়োগসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে আছেন। এত্তোসব দুর্নীতির পরও এই দুই ভাই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দুদক এখনো অপুর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছোট ভাই দীপু চাকলাদারও দুর্নীতি ও জুলাই গণহত্যা মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। জানা যায়, তারা এখনো গোপন আস্তানায় থেকে শক্তির কলকাঠি নাড়াচ্ছেন।

লৌহজং উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, অপু চাকলাদারের পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী সরকারের আমলে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা লুট করেছেন তারা।

অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সব মামলা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলের। প্রয়াত এটর্নি জেনারেল আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো করেছেন। আমি বিএনপি করি, তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাগুলো দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা-১ এর উপ-পরিচালক আবুল হোসেনের ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।