মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো দরপতনের শিকার হচ্ছে

আবারো মূলধন ঝুঁকিতে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা

Printed Edition

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। এক দিকে মৌলভিত্তির দিক থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানিগুলো প্রতিদিনই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে, অন্য দিকে দরপতনের শিকার হচ্ছে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো। এতে বাজারের স্বাভাবিক প্রবণতা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত মুনাফা অর্জনের লোভে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা শুধু স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ায় হু হু করে বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে আবার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বাজারে।

গত জুলাই মাসের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে গতি ফিরতে শুরু করে। শুরুতে বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য ছিল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো। জুলাই মাসের পুরোটা এসব ভালো কোম্পানিতেই বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ ছিল বিনিয়োগকারীদের। এতে কোম্পানিগুলোর মূল্যস্তর বেড়ে যায়। বাজারে শেয়ারের স্বল্পতা এ সময় বিনিয়োগকারীদের স্বল্পমূলধনের কোম্পানিগুলোর দিকে আকৃষ্ট করে। আগস্টের শুরু থেকেই এসব কোম্পানির টানা মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়। প্রায় প্রতিদিনই কিছু কিছু কোম্পানির দর পৌঁছে যায় দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ অবস্থানে। এভাবে এক মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ৫০ শতাংশ থেকে কোনো কোনোটির ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। অথচ কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশই গত অর্থবছরে নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষনা করে ‘জেড’ গ্রুপে পতন ঠেকায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সামনে এসব কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার সময় আসছে। এখন কোম্পানিগুলোর মূল্যস্তর যেখানে পৌঁছেছে তার সাথে সঙ্গতি রেখে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে না পারলে বর্তমান মূল্যস্তর ধরে রাখতে পারবে না। ফলে আবারো মূলধন ঝুঁকিতে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা।

আবার মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর বর্তমান মূল্যস্তর যে পর্যায়ে রয়েছে তাও বিনিয়োগকারীদের টানতে পারছে না। ফলে প্রতিদিনই কমবেশি দর হারাচ্ছে এসব কোম্পানি। সংশ্লিষ্টরা এটিকে সংশোধন হিসেবে দেখলেও তারা মনে করেন, হুজুগের বশবর্তী হয়ে বিনিয়োগকারীরা এ মুহূর্তে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির দিকে ঝুঁকলেও একসময় তাদের ভুল ভাঙবে। কারণ ওই সব কোম্পানির মূল্যস্তর এখনই ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যেই কিছু কিছু কোম্পানি দর হারাতে শুরু করেছে। তাই ঝুঁকি হ্রাস করতে হলে তাদের ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৫ দশমিক ৫১ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ৫ হাজার ৪৪৮ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি গতকাল দিনশেষে ৫ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৩১ পয়েন্টে নেমে আসে। তবে দিনের শুরুতে সূচকটির উন্নতি রেকর্ড করা হয় ২০ পয়েন্টের বেশি। মূলত সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে বিক্রয়চাপে পড়ে বাজারটি। এ সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ দরপতনের ূিশকার হয় সূচকের অবনতি ঘটতে থাকে। আবার বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানির কয়েকটির মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও দর হারায় সাধারণ বীমা কোম্পানির বেশ কয়েকটি। প্রধান খাতগুলোতে এ সংশোধনই দিনের সূচকের অবনতি ঘটায়। এ সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫৬ ও ১ দশমিক ৫০।

দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক গতকাল ৪১ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। এখানে সিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ১৫ ও ২৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট।

সূচকের অবনতির ফলে গতকাল ডিএসইর লেনদেনের বড় ধরনের অবনতি ঘটে। ঢাকা শেয়ারবাজার গতকাল ৯৭১ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ২৭৬ কোটি টাকা কম। মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেন ছিল এক হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। তবে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে লেনদেন আগের দিনের ১৫ কোটিতেই স্থির ছিল।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মাঝে গতকাল শীর্ষে উঠে এসেছে ব্যাংকিং কোম্পানি সিটি ব্যাংক। এ দিন ২২ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ৯০ লাখ ৮২ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় কোম্পানিটির। ২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় আট লাখ ৪২ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে বিকন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বিচ হ্যাচারিজ, সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি, মালেক স্পিনিং ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল জীবন বিমা কোম্পানির চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ। এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ৯ দশমিক ৮২, এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন ৯ দশমিক ০২, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ৭ দশমিক ২৫, সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট ৬ দশুিমক ৮৮, শাইন পুকুর সিরামিকস ৬ দশমিক ০৬, আরগন ডেনিমস ৬ দশমিক ৩৮ ও কেডিএস অ্যাক্সেসরিজের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।

এ দিন ডিএসইর দরপতনের শিকার ছিল ১৭৪টি কোম্পানি ও ফান্ড। এদের মধ্যে দরপতনের শীর্ষে ছিল ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স। ১০ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। ৮ দশুিমক ৬৯ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল একই খাতের ফারইস্ট ফিন্যান্স। দরপতনে দিনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ফাস ফিন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, বিডি ফিন্যান্স, রহিমা ফুড ফার্স্ট ফিন্যান্স ও ইউনিয়ন ব্যাংক।