মুমিনের সফলতার রহস্য

Printed Edition
মুমিনের সফলতার রহস্য
মুমিনের সফলতার রহস্য

মাওলানা উবায়দুল্লাহ মুয়াজ

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই সফল হতে চায় কিন্তু পদে পদে নানা বাধা-বিপত্তিতে আটকে যায়। তখনই থমকে দাঁড়ায় তার সব স্বপ্ন আর সম্ভাবনা। তখন মানুষ একের পর এক ভুল করতে শুরু করে। চলতে শুরু করে ভুল পথে। হারিয়ে যায় বহু দূর। এমনকি সফলতার স্বপ্নও ভেঙে যায়। সে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। তখন শুরু হয় রাজ্যের বিষণœতা।

আরবি শব্দ ‘লাঘউন’ অর্থ হলো অনর্থক কথা বা কাজ ইত্যাদি। এটা দুনিয়াবি ক্ষেত্রে যেমন হতে পারে পরকালীন বিষয়েও হতে পারে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই ইসলাম এটাকে সমর্থন করে না, বরং সবসময় নিরুৎসাহিত করে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একজন মানুষের মধ্যে ইসলামের সৌন্দর্যের অংশ হলো- অহেতুক বিষয় বর্জন করা (তিরমিজি : ২৩১৮)।

আল্লাহ তায়ালা সূরা মুমিনের ১-৩ নম্বর আয়াতে খুব স্পষ্টভাবেই এই আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অবশ্যই মুমিন সফলকাম হয়েছে। (ওই সকল মুমিন) যারা একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করে। আর যারা অনর্থক কথা/ কাজ থেকে বিমুখ থাকে। এখন আমাদের বুঝতে হবে প্রকৃত সফলতা কাকে বলা হয়? এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন যাকেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সে-ই প্রকৃত সফলকাম (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)। আর এই ‘লাঘউন’ তথা মন্দ কাজ বা কথা এতটাই গর্হিত বিষয় যে এর নিন্দা বোঝাতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, (মুমীনীন প্রকৃত সফল হওয়ার পর) জান্নাতে আর অনর্থক কথা শুনবে না (সূরা নাবা: ২৫)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বান্দা চিন্তাভাবনা ছাড়া এমন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে (পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব পরিমাণ) জাহান্নামের অতলে নিক্ষিপ্ত হবে (বুখারি : ৬৪৭৭)। অপর এক হাদিসে এসেছে, হজরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আসসাকাফী রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ... আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, আমার কোন্ বিষয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করেন। তখন তিনি নিজ জিহ্বা ধরলেন এরপর বললেন, এটা (মুসনাদে আহমাদ : ১৫৪১৯)। এর বিপরীতে ইসলাম সবসময় আদেশ ও উৎসাহ প্রদান করে সত্য-সঠিক এবং উত্তম কথা বলার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য-সঠিক কথা বলো (সূরা আহজাব: ৭০)। আরো বলেন : তোমরা উত্তম কথা বলো (সূরা বাকারা: ৮৩)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ প্রদান করেন এই বলে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে (বুখারি : ৬০১৮)। অতএব আমরা চেষ্টা করব সবসময় সত্য এবং সঠিক কথা বলতে। অহেতুক কথা থেকে বেঁচে থাকতে। আর না হয় চুপ থাকব। এতেও রয়েছে আমাদের সমূহ কল্যাণ। যেমনটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে চুপ থাকে সে বেঁচে যায় (তিরমিজি : ২৫০১)। আরো বলেন, যে তার জবান ও লজ্জাস্থান হেফাজতের জামানত দিতে পারবে, আমি তার জান্নাতের জামিন হবো (বুখারি : ৬৪৭৪)। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবি ওকবা ইবনে আমের রা:-কে তিনটি ওসিয়ত করলেন। এর প্রথমটি ছিল- ‘তুমি তোমার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখ’ (তিরমিজি : ২৪০৬)।

এ ব্যাপারে সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, সেই সত্তার কসম, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ভূপৃষ্ঠে সব কিছুর চেয়ে জিহ্বাই সবচেয়ে বেশি বন্দিত্ব ও নিয়ন্ত্রণের মুখাপেক্ষী (আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী, বর্ণনা ৮৭৪৪; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, বর্ণনা ১৮১৮৪)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শও ছিল এটি। যেমন বর্ণিত হয়েছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘসময় চুপ থাকতেন এবং কম হাসতেন (মুসনাদে আহমাদ : ২০৮১০)।

চিন্তাভাবনাহীন অনর্থক কথাবার্তা কখনো কখনো আমাদের পরস্পরেও ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কখনো দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করে। তাই আমাদের উচিত সবসময় অহেতুক কথাবার্তা বর্জন করে চলা এবং সত্য- সঠিক ও উত্তম কথাবার্তা বলা। অন্যথায় চুপ থাকা। এতেই আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত ।

লেখক : শিক্ষার্থী উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ বসুন্ধরা