জুলাই সনদ হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা এবং রাজনীতির জন্য এক ঐতিহাসিক নবযাত্রার দলিল। ঐকমত্য কমিশন প্রণীত এই সনদ সই হওয়ার কথা ১৭ অক্টোবর। মতপার্থক্যের কারণে সনদের বাস্তবায়ন কৌশল ও সময়সীমা সম্পর্কে ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে। কিন্তু শুধু ৩১টি দলের সহমতই কি জাতীয় ঐকমত্য হতে পারে? আর অন্তর্বর্তী সরকারেরইবা কি ম্যান্ডেট আছে এর বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দেয়ার? অথবা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদকে ডিকটেট করার এখতিয়ার কি ইউনূস সরকারের আছে? তাহলে গণভোট বা নির্বাচিত সংসদের ভূমিকা কী হবে?
গতকাল বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এক মতবিনিময় সভায় এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেন। জনতা পার্টি বাংলাদেশ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন জনতা পার্টি বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি মহসীন রশিদ।
অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ বলেন, জুলাইয়ে সফল গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে এক সময় প্রশ্ন উঠতে পারে। এ নিয়ে একটি মামলাও হয়েছে উচ্চ আদালতে। একতরফাভাবে হাতেগোনা কয়েকটি দল নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার যেমনিভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী করে জনগণের ধিক্কারের মুখে পড়েছিল, তেমনিভাবে ইউনূস সরকার বৃহত্তর রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একাংশ, যাদের মধ্যে ফ্যাসিস্টদের রাজনৈতিক জোটভুক্ত এবং সমর্থক দলও আছে, তাদের নিয়ে জুলাই সনদ করতে গিয়ে ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আগামীতে জনরোষের মুখেও পড়তে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার জন্য শুধু জুলাই সনদ গ্রহণ করাকে জাতি মেনে নেবে না।
গোলাম সারোয়ার মিলন উল্লেখ করেন, ’৭১ ও ’২৪ এর চেতনায় জুলাই সনদ প্রণয়ন উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ একটি ইতিবাচক ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক। কিন্তু তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। মুখচেনা, জাতীয় রাজনীতিতে অপাঙক্তেয় বড় দলের প্রতিমা হিসেবে চিহ্নিত এবং গণ-অভ্যুত্থানে নিষ্ক্রিয় কয়েকটি দল নিয়ে সংলাপের ফসলের নাম জাতীয় সনদ হতে পারে না। বহু নিবন্ধিত এবং বিপ্লব-সমর্থক দলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাইরে রাখা হয়েছে।
সভায় নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সমালোচনা করে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় কমিশন এখন নিজেই স্বীকার করছে যে, মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে ত্রুটি ও গাফিলতি হয়েছে। নিবন্ধন প্রদানের ক্ষেত্রে কমিশন এক-এগারোর বা ফ্যাসিস্ট আমলের কমিশনের নীতিমালা অনুসরণ করছে অথচ এই কমিশন আওয়ামী জগদ্দল ছিঁড়ে আসা জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নিবন্ধন নীতিমালা সহজীকরণের যেসব প্রস্তাব রেখেছিল সেসব এর ধারে কাছেও হাঁটছে না।
সভায় গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট আমলে গুমের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার পরও সেনাবাহিনী সম্পর্কে নানা বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা এক নতুন ষড়যন্ত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর মনোবলে আঁচড় দেয়ার মতলববাজি। অথচ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া স্বৈরাচারের বিদায় সম্ভব ছিল না। ৫ আগস্ট সকল রাজনৈতিক নেতার সেনাপ্রধানের ডাকে সাড়া দেয়ার ঘটনা তারই প্রমাণ। প্রস্তাবে আরো বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা ভারতের একশ্রেণীর মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিদ্বেষী অপপ্রচারের জন্য ইউনূস সরকার যেমনিভাবে ভারত সরকারকে দায়ী করে ঠিক তেমনি সেনাবাহিনী সম্পর্কে অপপ্রচারের দায়ও আমাদের সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না।
এনপিপির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সালু ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতে কোন দল কী ভূমিকা রেখেছে তার পূর্ণাঙ্গ কার্যবিবরণী এবং আপ্যায়ন ব্যয় প্রকাশের দাবি জানান। বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের নির্বাহী চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের নামে অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থক এবং অর্থবান দলগুলোকে ফেভার করছে।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের, জনতা পার্টি বাংলাদেশের উপদেষ্টা ড. ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপমন্ত্রী রফিকুল হক হাফিজ, এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মো: আব্দুল্লাহ্, এম এ ইউসুফ, জাগপার সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান, এনপিপির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মো: আব্দুল হাই মণ্ডল, জাতীয় সংস্কার পার্টির সভাপতি মেজর (অব:) আফসারী, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক আ: রহিম চৌধুরী, জনতা পার্টি বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো: আসাদুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব রফিকুল হক তালুকদার রাজা প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি।


