যারা নামাজে নেতৃত্ব দেন তাদের সমাজের ভালো কাজেও নেতৃত্ব দিতে হবে : ডা: শফিক

Printed Edition
রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় উলামা কমিটির অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত
রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় উলামা কমিটির অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা মসজিদে নামাজে নেতৃত্ব প্রদান করেন তাদের সমাজের সব ভালো কাজেও নেতৃত্ব দিতে হবে। দেশের ওলামায়ে কেরাম যখন জাতির নেতৃত্ব প্রদান করবেন তখনই জাতি, দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র কল্যাণের পথে এগিয়ে যাবে এবং একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেন, আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা ৯০.০৮ ভাগ মানুষ মুসলমান। তবুও বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সুখ-শান্তিতে সম্প্রীতির সাথে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করার পক্ষে নই। ডা: শফিকুর রহমান ইসলামী দল ও শক্তির ঐক্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ইসলামী দল ও শক্তিগুলোর ঐক্য দেশবাসীর কাম্য। এ ক্ষেত্রে ঐক্য বিনষ্ট এবং বিভেদ-বিভ্রান্তি তৈরি করে এমন যেকোনো বক্তব্য পরিহার করার জন্য তিনি উপস্থিত ওয়ায়েজ ও দাঈদের প্রতি আহ্বান জানান।

গতকাল মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে বিশিষ্ট দাঈ ও ওয়ায়েজ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় ওলামা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আরো বক্তৃতা করেন, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জামেয়া-ই-কাসেমিয়া নরসিংদীর সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী, গোপালগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ওলামা বিভাগীয় কমিটির সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আগত বিশিষ্ট ওয়ায়েজ ও দাঈরা অংশগ্রহণ করেন।

জামায়াত আমির বলেন, আপনারা যারা দাঈ-ইলাল্লাহ তাদের অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে। আল্লাহ বিনয়ী লোকদের ভালোবাসেন। মানুষও বিনয়ী লোকদের ভালোবাসে। কোনোভাবেই বাহাস বা আত্মঘাতী কোনো বিতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবে না। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আল্লাহর দ্বীনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের সবার মধ্যে এ জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আপনাদের জাতিকে জাগ্রত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ জন্য আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সবাইকে পারদর্শী হতে হবে। আমাদের রাসূল সা: যেভাবে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আমাদেরও তাঁর দেখানো পথেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে।

তিনি বলেন, আল্লাহর দেয়া বিধান ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। কুরআনের এ বিধানকে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। সবার কাছে ইসলামের শাশ্বত বিধান তুলে ধরে দাওয়াত দিতে হবে। তার সাথে সাথে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সেবা করতে হবে। আল্লাহর রাসূল সা: প্রতিষ্ঠিত সমাজে সব মানুষের অধিকার ছিল। কাউকেই তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো না। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আমাদেরও সবাইকে ভালোবাসতে হবে।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, রাসূল সা:-কে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করা যাবে না। মাথা উঁচু করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর জন্য তিনি ওলামায়ে কেরামের প্রতি আহ্বান জানান।

সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের সবার কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। আমাদের কথা ও কাজে মিল না থাকলে আমাদের কথার কোনো আছর মানুষের মনে পড়বে না। কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে মানুষের কাছে ইসলামের সঠিক দাওয়াত পেশ করতে হবে। মানুষের সামনে বুদ্ধিবৃত্তিক, বিশ্লেষণধর্মী দাওয়াত পেশ করতে হবে এবং মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। বিতর্কিত বক্তব্য পরিহার করে জিহাদ, ইসলামী শরিয়াহ ও দ্বীন সম্পর্কে সঠিক বক্তব্য মানুষের সামনে উপস্থাপন করার জন্য তিনি ওয়ায়েজিনদের প্রতি আহ্বান জানান।