হোসেনপুরে ২৭ প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নেই, শিক্ষার মানে ধস

Printed Edition

জাহাঙ্গীর আলম হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মক সঙ্কটে। উপজেলার ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৭টিতে প্রধান শিক্ষক নেই দীর্ঘদিন ধরে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ক্রমেই নিম্নগামী, আর শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে কিন্ডারগার্টেন ও মাদরাসার দিকে।

প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের মজবুত ভিত্তি গড়ে দেয়; কিন্তু হোসেনপুরের বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। প্রধান শিক্ষকের অভাব, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দীর্ঘদিনের অনিয়মে বিদ্যালয়গুলোতে শৃঙ্খলা ও পাঠদান কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও কার্যকর নেতৃত্বের অভাবে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ স্থবির হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: আলাউদ্দিন বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি না হওয়ায় সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্রশাসনিক নির্দেশনা না থাকায় অনেক স্কুলেই শিক্ষকদের উপস্থিতি অনিয়মিত, আর শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারাচ্ছে।’

জানা যায়, কিছু শিক্ষক নিজ এলাকায় বহু বছর ধরে থেকে প্রভাব খাটাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার ‘অফিসে কাজ আছে’ বলে বিদ্যালয়ে না গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন। এতে সহকারী শিক্ষকরা ইচ্ছেমতো ক্লাস নিচ্ছেন, যে কারণে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অভিভাবকরা বলছেন, সরকারি স্কুলে শিক্ষার মান পড়ে যাওয়ায় তারা সন্তানদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, ‘প্রধান শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে; কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি।’ এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাহিদ ইভা বলেন, ‘অবহেলা বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবক ও স্থানীয় সমাজের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। হোসেনপুরের প্রাথমিক শিক্ষা আজ দাঁড়িয়ে আছে এক সঙ্কটের মুখে, যেখানে শিক্ষক সঙ্কট শুধু প্রশাসনিক সমস্যা নয়, বরং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতেরও হুমকি হয়ে উঠছে।