- ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি কঠোর খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে
- আরব নেতারা ছাড়াও ইরান পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রাধান অংশ নেবেন
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
কাতারের রাজধানী দোহায় গতকাল রোববার শুরু হয়েছে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে রুদ্ধদার বৈঠক। কাতার নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এটি (আজ) সোমবারের শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক বৈঠক, যেখানে ইসরাইলের দোহায় হামলার পর অঞ্চলীয় প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৫৭টি দেশের এবং আরব লীগের ২২টি দেশের নেতারা। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি এই সম্মেলনে উপস্থিতি থাকছেন বলা নিশ্চিত করেছেন। তা ছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানও দোহায় থাকবেন, তবে তিনি বৈঠকে যোগ দেবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়।
দোহার গালফ টাইমসের প্রধান সম্পাদক ফয়সাল আব্দুল হামিদ আল-মুধাহকা আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, এই জরুরি বৈঠক শুধু নিন্দামূলক বিবৃতি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে যাবে। তিনি বলেন, আজকের বৈঠক নেতানিয়াহুকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়ার পদক্ষেপ নিতে পারে।
বৈঠকটি পুরো অঞ্চলের সংহতির প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আল-মুধাহকা আরো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কাতারের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার, যা ১৯৭০-এর দশক থেকে গড়ে উঠেছে এবং ইসরাইলের হামলা এই সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে বৈঠকে গাজার জন্য শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যদিও দোহার ওপর হামলা আলোচনাকে ব্যাহত করেছে। বৈঠক শেষে সম্ভাব্য সিদ্ধান্তগুলো পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এ দিকে দোহায় অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলন থেকে ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি কঠোর খসড়া প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মাজেদ আল-আনসারির মতে, ইসরাইলের এই কাপুরুষোচিত আগ্রাসনকে আরব ও ইসলামী বিশ্ব একযোগে প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি বলেন, এই সম্মেলন আরব ও মুসলিম বিশ্বের ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংহতিরই প্রতিফলন।
গত মঙ্গলবার দোহার ইসরাইলের হামলায় হামাসের পাঁচ সদস্য ও এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোও রয়েছে, যারা ইসরাইলের প্রধান সমর্থক। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের পাশাপাশি গাজা যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটিটিও সে দেশে অবস্থিত।
কিংস কলেজ লন্ডনের বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ এই উদ্যোগকে ইসরাইলের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা বলে মনে করছেন। তার মতে, উপসাগরীয় অঞ্চলে ইসরাইলের এই হামলা সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং কূটনীতির ওপর সরাসরি আক্রমণ। তিনি বলেন, আসন্ন সম্মেলনটির উদ্দেশ্য হলো একটি ‘স্পষ্ট রেড লাইন’ নির্ধারণ করা এবং ইসরাইলকে এই বার্তা দেয়া যে, তাদের আগ্রাসন বিনা শাস্তিতে পার পাবে না। একই সাথে এই সম্মেলন ফিলিস্তিনের বিষয়ে আরো দৃঢ়অবস্থান নিতে এবং ইসরাইলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে মুসলিম দেশগুলোকে উৎসাহিত করবে।



