ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
২০১৭ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউএসসি) কাছ থেকে মানুষের লাশ কিনতে একটি নোটিশ দাখিল করে মার্কিন নৌবাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য, এসব লাশের মাধ্যমে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) ট্রমার অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণ দেয়া। ওই নোটিশের পর থেকে ইউএসসিকে ৮৯টি লাশের বিনিময়ে আট লাখ ৬০ হাজার ডলারের বেশি অর্থ পরিশোধ করে মার্কিন নৌবাহিনী।
এসব লাশের মধ্যে ৩২টি ব্যবহার করা হয় লস অ্যাঞ্জেলেস জেনারেল মেডিক্যাল সেন্টারে; আইডিএফকে প্রশিক্ষণ দিতে। লাশ কেনাবেচার এ খবর দিয়ে ‘ইউএসসি অ্যানেনবার্গ মিডিয়ার’ খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি চুক্তি এখনো চলমান রয়েছে। ইউএসসি অ্যানেনবার্গ মিডিয়াটি ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্থ ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যানেনবার্গ স্কুল ফর কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজমের অধীনে পরিচালিত একটি সংবাদমাধ্যম।
পেশাদার সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বর্তমান চুক্তির অধীনে মার্কিন নৌবাহিনী চাইলে আরো দুই লাখ ২৫ হাজার ডলারের লাশ কিনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে লাশ বেচা বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়টির আয় দাঁড়াবে প্রায় ১১ লাখ ডলারে। অ্যানেনবার্গ মিডিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মার্কিন নৌবাহিনীর এমন চুক্তি রয়েছে কি না, তা তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। ইসরাইলি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে এ ধরনের চুক্তির সমালোচনা করেছেন স্বাস্থ্য খাতের ব্যক্তিরা।
যাদের লাশ বিক্রি হচ্ছে, তাদের পরিবার এগুলোর পরিণতি সম্পর্কে অবগত কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা। ইউএসসি কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মকানুন মেনেই তারা এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দান করে দেয়া লাশের নৈতিক ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেন ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির শারীরবিদ্যার (অ্যানাটমি) অধ্যাপক টমাস চ্যাম্পনি। তিনি বলেন, ‘লাশ হলেও এগুলো জীবিত মানুষের মতো সম্মান, মর্যাদা ও যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়ার যোগ্য।’
অ্যানেনবার্গ মিডিয়া বলছে, ইসরাইলি বাহিনীর প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত লাশগুলোর পরিচয় তারা শনাক্ত করতে পারেনি। ইউএসসি লাশগুলো ‘অফিস অব ডেসিডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের’ মাধ্যমে কিংবা ‘কেকস অ্যানাটমিক্যাল গিফট‘ কর্মসূচির মাধ্যমে পেয়েছে, যেখানে দাতারা শিক্ষণ ও গবেষণাসহ অন্যান্য কাজে এগুলো ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু মার্কিন নৌবাহিনী কিংবা ইসরাইলি বাহিনীর প্রশিক্ষণে ব্যবহারের সম্মতি এসব লাশের ক্ষেত্রে ছিল কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি অ্যানেনবার্গ মিডিয়া।
লাশ কেনাবেচার বিষয় সংবাদমাধ্যমটির নজরে আনেন ইউএসসির ‘কেক স্কুল অব মেডিসিনের’ এক চিকিৎসক, যিনি চাকরি হারানো ভয়ে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এটি ভালোভাবে জানি যে, এ ধরনের কাজের (আইডিএফের প্রশিক্ষণ) সম্মতি থাকা প্রয়োজন। ‘আর নৌবাহিনীর অবকাঠামোত পরিকল্পনা কিংবা উন্নয়ন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য করা হয়নি, করা হয়েছে ট্রমার প্রতি অসংবেদনশীল হওয়ার জন্য।’



