পাকিস্তান-তালেবান উত্তেজনায় বিপাকে আফগান শরণার্থীরা

ইসলামাবাদ শরণার্থী গ্রামগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে, যেখানে অনেকেই পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছে

Printed Edition
আফগানিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক লড়াইয়ের পর পাকিস্তান সারা দেশে শরণার্থী শিবির বন্ধ করার নির্দেশ জারি করায় আফগান শরণার্থীরা বিপাকে পড়েছে : ইন্টারনেট
আফগানিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক লড়াইয়ের পর পাকিস্তান সারা দেশে শরণার্থী শিবির বন্ধ করার নির্দেশ জারি করায় আফগান শরণার্থীরা বিপাকে পড়েছে : ইন্টারনেট

আলজাজিরা

১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা আল্লাহ মীরের পরিবার উত্তর-পাকিস্তানের কোহাটে একটি শরণার্থী গ্রামে বসতি গড়ে তোলে। সেখানেই জন্ম মীরের, যিনি এখন ৪৫ বছর বয়সী। তার বর্ধিত পরিবারে ২০০ জনের বেশি সদস্য পাকিস্তানেই জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে পাকিস্তান সরকার ‘অবৈধ বিদেশী’ চিহ্নিত করে আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান শুরু করার পর থেকে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে।

গত সপ্তাহে পাকিস্তান ঘোষণা দিয়েছে, দেশজুড়ে ৫৪টি আফগান শরণার্থী গ্রাম বন্ধ করে দেয়া হবে, যার মধ্যে কোহাটের গ্রামগুলোও রয়েছে। মীর বলেন, ‘আমরা এখানে জন্মেছি, বিয়ে করেছি, প্রিয়জনদের কবর দিয়েছি- এখন কিভাবে সব ছেড়ে চলে যাব?’ ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান-আফগান সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত। অক্টোবরের শুরুতে সীমান্তে সংঘর্ষে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। পরে দোহায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার পরবর্তী আলোচনা হবে ইস্তাম্বুুলে।

পাকিস্তান দীর্ঘ দিন ধরে আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। ফলে কয়েক দশক ধরে বসবাসকারী শরণার্থীদের প্রতিও সরকারের মনোভাব কঠোর হয়ে উঠেছে। ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় আফগান শিশুদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক মীর বলেন, ২০০৬ সাল থেকে ইউএনএইচসিআর যে নিবন্ধনের প্রমাণপত্র (পিওআর) কার্ড দিয়েছে, তা এখন আর নবায়ন করা হচ্ছে না।

২০১৭ সালে চালু হওয়া আফগান নাগরিকত্ব কার্ড (এসিসি) এখন আর নির্বাসন থেকে রক্ষা করতে পারছে না। ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ লাখের বেশি আফগান পাকিস্তান ছেড়েছেন। বর্তমানে ১.২ মিলিয়ন পিওআর কার্ডধারী, ৭.৩৭ লাখ এসিসি-ধারী এবং ১.১৫ লাখ আশ্রয়প্রার্থী পাকিস্তানে রয়েছেন। ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র কায়সার খান আফ্রিদি বলেন, ‘যারা বহু বছর ধরে এখানে আছেন, তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত গভীর উদ্বেগের। প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায়, ধাপে ধাপে এবং মর্যাদার সাথে হয়।’

মীর বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটি দেশে অবৈধ, যেটিকে আমরা ঘর বলে জানি।’ তিনি আশঙ্কা করছেন, আফগানিস্তানে ফিরে গেলে তাদের পাকিস্তানি হিসেবে শত্রু ভাবা হবে। এই সঙ্কট এখন শুধু মানবিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।