কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ও কুমারখালী সংবাদদাতা
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়ার লালন মাজারে অবস্থানকারী বাউল ও সাধুদের পুণ্য সাধু সেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে লালন মাজার আঙিনায় উপস্থিত বাউল ও সাধুদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয় পুণ্য সেবার ভাত, ভাজা ইলিশ ও দই-মিষ্টি। আজ রোববার থেকে সাধু বাউলেরা লালন মাজার ত্যাগ করে নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে থাকবেন। এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শনার্থী লালন মাজার প্রাঙ্গণে এসেছেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই লালন মাজার এলাকার কয়েক মাইলজুড়ে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর থেকেই লালন মাজারসংলগ্ন সব সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। লালন মাজারের সব সড়কে স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকেন। এ সময় লালন মাজার এলাকায় থাকা সড়কগুলোতে নানা বয়সের পুরুষ, নারী ও শিশুরা আটকা পড়েন। অনেকে পকেট মারের খপ্পরে পড়ে টাকা, মোবাইল ও প্রয়োজনীয় জিনিস খুইয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সব চেষ্টা বিফলে যায়। ভোর রাত পর্যন্ত এক বিভিষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশ-বিদেশের হাজার হাজার লালনভক্ত ও দর্শনার্থীর কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে যায়।
এ পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে শহরের সব এলাকায়। শহরের হোটেল, রেস্টহাউজগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল। হোটেলে জায়গা না পেয়ে অনেককে মজমপুরগেট বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে হয়েছে। হোটেল ও রেস্টহাউজগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন দর্শনার্থীরা। আবার শুক্রবার রাতে শহরের অধিকাংশ হোটেলে খাবার শেষ হওয়ায় দর্শনার্থীদের নিদারুণ কষ্ট হয়েছে। অতিরিক্ত মানুষের চাপের সুযোগে রেস্টুরেন্ট ও হোটেল খাবারের বেশি দাম নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সারা দিনই লালন মাজারে দর্শনার্থীদের হেঁটে প্রবেশ কষ্টকর ছিল। তবে লালনের তিরোধান অনুষ্ঠানে আগতদের কষ্ট ও দুর্ভোগ হলেও তারা নিজেদের সার্থক মনে করেছেন। আনন্দ উল্লাসে উৎসবমুখর পরিবেশে ভক্তি ও শ্রদ্ধার মাধ্যেমে লালনকে স্মরণ করেছেন। কুষ্টিয়া শহর যে লালনের শহর তা এবারকার তিরোধান দিবসের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবসের দ্বিতীয় দিন শনিবার সন্ধায় কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার লালন মাজারসংলগ্ন মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাবউদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন, সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, এনসিপি কুষ্টিয়ার প্রধান সমন্বয়ক জান্নাতুল ফেরদৌস টনি, গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: রাশেদুজ্জামান। প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. মো: রশিদুজ্জামান।
আজ রোববার সন্ধায় লালন মঞ্চে তিন দিনের জাতীয় অনুষ্ঠানের সমাপনীতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার, বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক, বিজিবি কুষ্টিয়ার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আহসান হাবিব, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। মুখ্য আলোচক থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: খালেদুজ্জামান।



