ইবতেদায়ি শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশের বাধা, সংঘর্ষ, আহত ৫০

সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ

Printed Edition
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের সচিবালয় অভিমুখে ভুখা মিছিল পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও রঙিন পানি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়  : নয়া দিগন্ত
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের সচিবালয় অভিমুখে ভুখা মিছিল পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও রঙিন পানি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় : নয়া দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বেলা সোয়া ২টার দিকে সচিবালয় অভিমুখে ভুখামিছিল শুরু করেন শিক্ষকেরা। তারা পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে তাদের লক্ষ্য করে ছয় থেকে সাতটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপর টিয়ার শেল, জলকামান ও লাঠি চার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আন্দোলনকারীদের। পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পর শিক্ষকরা আবারো জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চলে আসেন। শিক্ষকদের সাথে পুলিশের এই সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

শাহবাগ থানার একজন ইন্সপেক্টর জানান, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে মিছিল নিয়ে জোর করে সচিবালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।

জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে প্রেস ক্লাবের সামনে তাঁবু টানিয়ে আন্দোলন করছিলেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা। গতকাল সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করতে গেলে পুলিশ তাদের সড়ক ছাড়তে অনুরোধ জানায়। কিন্তু শিক্ষকরা উত্তেজিত হয়ে সড়ক থেকে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরুর চেষ্টা করে।

ইবতেদায়ি শিক্ষক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ জানান, জাতীয়করণের দাবিতে ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকরা সবাই সচিবালয়ের সামনে যাওয়া মাত্রই আমাদের পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের অন্তত অর্ধশত শিক্ষক আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

আহতরা হলেন, মোছাম্মদ নাসরিন আক্তার (৪৫), মো: নজরুল ইসলাম (৫৫), মোহাম্মদ ওসমান (৩৫), আব্দুল জলিল (৪৫), মাসুদ আলম (৬০), আহমদ আলী (৪৫), রুহুল আমিন (৪৫), সুমিত (৪০), আব্দুল হাদী (৩২), মোহাম্মদ আমিন (৪৮), সমীর (২৩), মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম (৩৫), অজ্ঞাত নম্বর পুরুষ (৪৮), শাহ আলম (৫৫), নুরুল ইসলাম (৫০), মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (৩০), মোহাম্মদ মোস্তফা (৩২), মো: মোস্তাকিম (২৬), মোরশেদ আলম (৪৫), মো: আরিফুর (৩৫), মোহাম্মদ আজিজুল হক (৩৫), মোহাম্মদ মোসাম্মৎ কুলছুম বেগম (৩৮), মোহাম্মদ শাহ আলম (৭৫), আব্দুস সালাম (৪৫), মোহাম্মদ সালেক (৩৮), মোহাম্মদ ফেরদৌস (৩৫), মো: মোজাম্মেল হক (৫৫), মোহাম্মদ আরিফুল (৩২), নূর হোসেন (৪৬), অজ্ঞাত পুরুষ (৩৫), অজ্ঞাত পুরুষ (৩৪), মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (৪০), মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (৫০), মোহাম্মদ আরিফুর রহমান (৩৬), মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ (৫৫), মো: লুৎফুর রহমান (৩৬), মো: আব্দুল্লাহ (৩৫), মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (৫০) ও মনিরুজ্জামান (৪৭)।

শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছয় দাবিতে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। দাবিগুলো হলো- স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নিবন্ধন স্থগিতাদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা; রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদরাসাগুলো বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করা; পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতনভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন দেয়া; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাকপ্রাথমিক শ্রেণী খোলার অনুমোদন দেয়া।

ভুখা মিছিলের নেতৃত্ব দেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম, কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল-আমিন ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো: ফারুক জানান, পুলিশের সাথে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরে আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। জরুরি বিভাগে অনেকের চিকিৎসা চলছে, অনেকে আবার চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে মাথায়, হাতে, শরীরে, আঘাতের চিহ্ন ছিল বলেও জানান তিনি।