সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
অনেকটা বিষাদের গল্পে ভরপুর ছিল ‘ষষ্ঠরেখা দ্য মার্জিন অব মেমোরিজ’ চিত্র প্রদর্শনী। যেখানে সুতোর টানে, গানে গল্প কবিতা আর ছবিতে গহিনের কষ্টকে তুলে এনেছেন শিল্পীরা। অন্যটিতে তুলে আনা হয়েছে ঢাকার তিন সামাজিক স্তরের জীবন। ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপরের গাড়ি, নিচের দোকানপাট, রিকশা ও পথচারী। শহরের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের অস্তিত্ব একত্রে মিলেছে এক সজীব বাস্তবতায়। এভাবে করেই প্রখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্ম আয়োজিত হয়েছিল ‘ষষ্ঠরেখা দ্য মার্জিন অব মেমোরিজ’।
দেশের সমকালীন শিল্পচর্চায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে ধানমণ্ডিতে এ ব্যতিক্রমধর্মী দলীয় চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। শিল্পগোষ্ঠী স্টুডিও সিক্স বি এর উদ্যোগে পাঁচ দিনের এ আয়োজন বুধবার শেষ হয়।
প্রদর্শনীতে ৫০ জন শিল্পীর ৬০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান, শামসুল ইসলাম নিজামী, কাইয়ুম চৌধুরী, ধীরাজ চৌধুরী, হামিদুজ্জামান খানসহ অনেকের কাজের সাথে ছিল তরুণের প্রচলিত ও নিরীক্ষাধর্মী চিত্রকর্ম। বাংলাদেশ ছাড়াও এতে ছিল ভারত ও পর্তুগালের শিল্পীর কাজ। কেউ জীবনের, কেউ মৃত্যুর, কেউ অন্তর্জগতের গল্প তুলেছেন রঙের ভাষায়।
প্রদর্শনীতে এস এম সুলতানের জলরঙের একটি আনটাইটেল্ড চিত্র রঙের মধ্যে যেন মাটি, ঘাম আর আত্মা যেন একাকার হয়েছিল। তাতে গ্রামের নারী-পুরুষের দৈনন্দিন কাজের বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।
অন্য দিকে নাজমুস সাকিবের পেন ড্রইংয়ে করা ‘ভাইব্র্যান্ট ঢাকায়’ ফুটে উঠেছে ঢাকার তিনটি সামাজিক স্তরের জীবন। ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপরের গাড়ি, নিচের দোকানপাট, রিকশা ও পথচারী। একই ছবিতে শহরের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের অস্তিত্ব একত্রে মিলেছে এক সজীব বাস্তবতায়।
প্রদর্শনীর কিউরেটর আলভি সাকিবের নিজের কাজও ছিল। তার চিত্রকর্মটির নাম ‘হোয়াট ডু ইউ এক্সপেক্ট’, যেখানে অনেক চাকচিক্য ও আভিজাত্যে ভরা এক নারীর মুখাবয়ব। কিন্তু সেই আভিজাত্যের মধ্যেও বিষন্নতা ছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রতেœশ্বর সূত্রধরের চিত্রে দেখা যায়, জাহাঙ্গীরনগরের লেকে ভেসে থাকা লাল শাপলার জীবন্ত উপস্থিতি। ছবিটি এত জীবন্ত ও আকর্ষণীয় যে দর্শনার্থীদের এটিকে মুঠোফোনে ধারণ করতে দেখা গেছে, কেউ আবার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ফাইন আর্টের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফাতেমা ইসলাম প্রিমার চিত্রকর্মটির নাম ‘ইনারসেলফ।’ এ ছবিতে ফাতেমা নিজের ভেতরের কষ্ট, উদ্বেগ ও না বলা কথাগুলোকে টেক্সচার, সুতা ও রঙের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এটা তার মানসিক পৃথিবীর একটি প্রতিকৃতি।
প্রদর্শনীর এক বিশেষ আকর্ষণ পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাজোর কাজ ‘আই ফাউন্ড ইউ ইনসাইড মাইসেলফ’। তিনি ব্যবহৃত চা ব্যাগের ভেতরে ক্ষুদ্রাকারে চিত্রকর্ম এঁকেছেন। দর্শক যখন কাছ থেকে তাকান, মনে হয় চা পাতার সুবাসের মধ্যেই কারো মুখ, কারো ছায়া, কারো ব্যথা লুকানো আছে। ভারতের পদ্মভূষণপ্রাপ্ত শিল্পী ধীরাজ চৌধুরীর দুটি কাজ, ‘আনটাইটেল্ড-ওয়ান’ ও ‘আনটাইটেল্ড-টু’ মানুষের মুখাবয়বে সময়ের চিহ্ন উপস্থাপন করা হয়।
দেয়ালের শেষ প্রান্তে টাঙানো একটি স্কাল্পচার নির্মিত হয়েছে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনের সূরা আশ-শারাহর ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতের ভাবনা থেকে। ক্যালিগ্রাফি ধারার কাজটি করেছেন শিল্পী ও আর্কিটেক্ট নাজেম আনোয়ার। স্কাল্পচারে রূপ দেয়া আয়াতটির বাংলা অর্থ ‘কষ্টের পরই আসে স্বস্তি।’



