১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রশাসনে আওয়ামী নৈরাজ্য

-

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় কব্জায় নেয়ার কাজটি ১৯৯১ থেকেই কমবেশি শুরু হয়েছিল; কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারেনি তখনকার সরকার। ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করার মনোবাসনা বিএনপিরও হয়তো ছিল। সে জন্য প্রথম দফার ক্ষমতার শেষপাদে মাঠপর্যায়ে কিছু রদবদল করে; কিন্তু তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার মতো অবস্থা ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়েই নির্বাচন করতে হয়েছিল। তাতে হেরে যায় বিএনপি। কাজের মধ্যে তাদের ওই দুই মেয়াদের শেষদিকে যারা ডিসি-এসপি-কমিশনার হয়েছিল, বিপাকে পড়েছে তারা- সবাই যে বিএনপির ঘরানার ছিল তা কিন্তু নয়। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নেয়ার কাজটি আরো জোরালো করে। তারা বিএনপির শাসনের শেষভাগে ‘জনতার মঞ্চ’ নামে একটি নজিরবিহীন ‘আমলা বিপ্লব’ও ঘটাতে সক্ষম হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল অবধি বিএনপি একই ধারায় এগোতে চাইলেও এই কাজে আওয়ামী লীগের পারঙ্গমতার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। তবে ২০০৬ সালেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পেরুবার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এরপর জরুরি শাসনের দেড়-দুই বছর বাদ দিয়ে ২০০৮ থেকে ২০২৪-এর মধ্যভাগ পর্যন্ত একটানা চলে নৌকার দুঃশাসন।
আওয়ামী লীগ কি গোড়াতেই জেনেছিল যে, জনভোটে তারা ফিরবে না? এমন না হলে একটি পুরনো-বৃহৎ-সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল সরকারি কর্মচারী তথা প্রশাসন-পুলিশের ওপর নির্ভরতার শেষপ্রান্তে পৌঁছায় কী করে!
২০০৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যভাগ, দীর্ঘ সময়; এই সময়ে প্রশাসনকে প্রথাবিরোধী পথে পরিচালনায় আওয়ামী লীগ যা যা করেছে, আদপে তা লোকপ্রশাসনের গবেষণার বিষয়। একটি নিবন্ধে সেসবের বিবরণ দেয়া বেশ কঠিন। এখানে অতি সংক্ষেপে এবং মোটাদাগে কতগুলো বিষয়ের অবতারণা মাত্র।

বিএনপির দ্বিতীয় মেয়াদের শেষান্তে প্রশাসনের আওয়ামী মনোভাবাপন্নরা একটি তালিকা প্রণয়ন করে। এটি ২০০৯-এর পর আলোতে নিয়ে আসা হয়। হরেদরে প্রণীত এই তালিকায় সঙ্কেত হিসেবে ব্যবহৃত হয় এ+, বি+, জে+, এন+, এ++, বি++, জে++, এন++; এর মানে হচ্ছে- আওয়ামী-বিএনপি-জামায়াত-নিউট্রাল চিহ্নিতকরণ। তালিকার বিভাজন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথ ছিল না। ছাত্রজীবনের তথ্য এবং ভালো-মন্দ পোস্টিং আর তালিকা রচয়িতাদের খামখেয়ালিই ওখানটায় প্রাধান্য পেয়েছে। ছাত্রজীবনের তথ্যেও গোলমাল ছিল ওই প্রণেতাদের অসততার দরুন। দ্বিতীয়ত, বহুজন আছেন, যারা চাকরিতে এসে ছাত্রজীবনে কী ছিল তা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল; তাদের জন্য এই তালিকা দারুণ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার ছাত্রকালে কোনো দলই করেনি, তাদের নামের পরেও ওই লেবাস জুটে গেছে- অন্য ঘরানার বহুজন ‘এ’ হয়ে গেছে আর এসবই তালিকা প্রণয়নকারীদের দয়ায়। ২০০৮-০৯-এর আগে যারা সিভিল সার্ভিস, বিশেষত প্রশাসন ক্যাডারে এসেছে, তাদের জন্য এই তালিকা কারোর গলায় ফাঁস হয়ে, আবার কারোর গলায় ফুলের মালারূপে আবির্ভূত হলো। ব্যতিক্রম হিসেবে, অতি তেলবাজ, অর্থের প্রভাব, গুড ম্যানেজার অথবা নিকটাত্মীয়র সহায়তায় তালিকার ঊর্ধ্বে উঠে পদোন্নতি এবং ভালো পোস্টিং হাসিল করতে সক্ষম হতে পেরেছে। ২০০৯ থেকে সিভিল সার্ভিসে নিয়োগে নানা রকমের দলীয়করণ শুরু হয়, সেটির পূর্ণতা পায় ২০১৪ সালের পর। পিএসসির চরিত্র হননের যাবতীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয় এবং তখন ছাত্রজীবনের দলীয় পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় সিলেকশন প্রক্রিয়ার প্রধান বিবেচনা। ছাত্রজীবনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রসংগঠন না করায় এবং বাবা-মা-ভাই-চাচা-ফুপা-শ্বশুরের পরিচয়ে আওয়ামীবিরোধী কোনো গন্ধ থাকলেই আটকে দেয়া হয় যোগদানপূর্ব পুলিশ ভেরিফিকেশনে। অথচ প্রিলিমিনারি-লিখিত-মৌখিক পরীক্ষার মতো তিনটি পুলসিরাত পেরিয়ে একটি বিসিএস জব পেয়ে আটকে যাওয়ার মতো দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে!

প্রজাতন্ত্রের পুলিশও এই কাজে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিতে পেরেছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। খুবই ভালো উদ্যোগ। হ্যাঁ, বলতেই হবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ এটি জানতে পেরে একবার এবং একবারই এই তরিকায় বাদপড়া অনেককে চাকরি দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও সবাইকে পার করতে পারেননি। কারণ হিসেবে মরহুম আশরাফ সাহেব নিজেই নাকি বলেছেন, পুলিশ তাদের রিপোর্টে এমন কিছু লিখেছে যে, মন্ত্রীর পক্ষেও উপকার করা সম্ভব হয়নি। সম্ভবত সেটি জঙ্গির তকমাই হবে। জনাব আশরাফ তার সময়ে একটি ব্যাচের পদোন্নতিকালে নাকচ করেছিলেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে রিপোর্ট গ্রহণ। নানা পথ ডিঙিয়ে কতিপয় দলহীন চাকরিতে আসতে পারলেও, পরে তারা পদ-পদোন্নতিতে নানা স্তরে আটকে যায়।
উপরের ব্যাপারগুলো জনপ্রশাসনের একটি সাধারণ চিত্র- খণ্ডচিত্র মাত্র। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আরো নানান কিছুই ঘটেছে। বলাই হয়, আওয়ামী লীগ একটানা তিন মেয়াদে শ্মশান থেকে কবরস্থান, পাঠাগার থেকে শৌচালয় সর্বত্র দলীয়তন্ত্র কায়েম করে। দীর্ঘকালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয় পদ্ধতি চালু করতে ছাড়েনি। আওয়ামী লীগ আক্রান্ত হলে ৩২৪ কে ৩২৬ ধারায় মামলা দিয়ে বহুজনকে হয়রানি আর বিরোধী পক্ষের কেউ গুরুতর আহত হলেও মামলা হতো ৩২৪-এর জামিনযোগ্য ধারায়- হয়তো পুলিশ মামলাই নিত না। বিরোধীদের ব্যবসাবাণিজ্য শিকেয় উঠেছে। বলতেই হবে, আরো কিছুদিন এই শাসন জারি থাকলে বিরোধী মনোভাবাপন্নদের হাসপাতালে সিট পাওয়াই দুরূহ হতো। এসবই লোকপ্রশাসনকে সমানভাবে আক্রান্ত করেছে। শুরু হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের বাম শাসনামলের বিখ্যাত ‘আমরা আর ওরা’র বিভক্তিকরণ।

২০০৯ সালের পর সচিবালয়সহ নানা অফিসে সরকারি কর্মীদের বলতে শোনা যেত, আমি ছাত্রকালে অমুক দলের এই-এই ছিলাম। সরকারি চাকুরেদের দলীয় মানসিকতা কমবেশি আগেও ছিল; কিন্তু তা নিয়ে অফিসপাড়ায় কেউ মুখ খুলত না; বরং অপরাধ মনে করা হতো। এমন ঘটনাও আছে, পিএসসির ফল প্রকাশের পর আট-দশজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এসেছে- বলে এসেছে, সংগঠনে নিজ নিজ পদের নাম। চাকরিতে এসেও মন্ত্রী-সচিবকে এসব বলে ভালো পোস্টিং নিতে দেখা গেছে। মন্ত্রীদের কেউ বলেনি, চাকরি করলে আবার দল কিসের; ধমক দেয়ার কথা ছিল। তার বদলে মন্ত্রী-সচিব খুশির ঢেঁকুর তুলেছেন, আপ্যায়ন করেছেন। বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে একটি দলেরই আধিপত্য ছিল, সত্য তো- এই লোকজন পাবলিক সার্ভিসে এসেও এই আধিপত্যই বিস্তার করবে; এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সেটিই ঘটেছে। এই আধিপত্যবাদ কেবল ক্যাডার সার্ভিসে নয়, কেবল কেন্দ্রীয় অফিসে নয়, সর্বত্র জালের মতো বিস্তৃত হয়েছে। ফলে অফিসে অফিসে শুরু হয়েছে ‘আমরা আর তোমরা’ সংস্কৃতি। পদ-পদবির ক্ষেত্রে চালু হয়েছে বঞ্চনার পালা, অবহেলার সংস্কৃতি। একটি পদোন্নতি মানেই বহুসংখ্যক মানুষের চোখের পানি। বাদপড়াদের কোনো দোষই ছিল না। সরকারি দলের সমঝদার না হওয়ায় বহুজনকে জুনিয়রের অধীনে নিরুপায় হয়ে চাকরি করতে হয়েছে- একজনকে বিব্রত করতে, শাস্তি দিতে এর চেয়ে কি আর বেশি হতে পারে! এদের একেকজনের কথা একেকটি বঞ্চনার অধ্যায়, কষ্টকাহিনী ছাড়া কিছু নয়। পাবলিক সার্ভিস কমিশনে মৌখিক পরীক্ষা নিতে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাও ‘আমাদের লোক’ বিবেচনায় নির্ধারিত হয়েছে। আর সচিব হয়েছে কেবল বিশেষ বিবেচনায়- সততা, মেধা, যোগ্যতা; কোনো ব্যাপার না। পিএসসিতে প্রশ্ন হতো, ‘বঙ্গবন্ধু নিথর দেহ যে সিঁড়িতে পড়ে ছিল, সেটির ধাপ ক’টি’?

এ সত্য, আওয়ামী লীগ কমিশনসহ কতগুলো নতুন অফিস খুলেছে। এসব কমিশন আর অফিসে নিজস্ব লোকই বসিয়ে দিয়েছে, অনেকটা পুনর্বাসন কেন্দ্রের মতো। বিচার বিভাগও এই দশা থেকে বাদ পড়েনি। যেমনটি সত্য, জেলায় জেলায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালযের ক্ষেত্রে। কমিশনগুলোর দিকে তাকালেই দৃশ্যটি স্পষ্ট হয়। জরুরি শাসনকালে তিন বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও সমতুল্য কতগুলো পদ সৃজন করা হয়। একটু পরে হলেও সিভিল আমলাদের জন্য সৃষ্টি হয় সিনিয়র সচিবের পদ। তালিকা দেখুন, কারা এসব পদ পেয়েছিল। রাজনীতিক পুনর্বাসনের জন্য জেলা পরিষদ-উপজেলা পরিষদ- তেমনি সচিব করা যায়নি, তাদের জন্য গ্রেড-১। সিভিল সার্ভিসে গ্রেড প্রাপ্তি হয় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে; কিন্তু সেটি পেয়েছে দলীয় বিবেচনায়। সিনিয়রকে বাদ দিয়ে জুনিয়রদের নানা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে, দেয়া হয়েছে গ্রেড-ওয়ান। এরপর চাকরি শেষে আবার পুনর্বাসনের পাকা বন্দোবস্ত। এটি সব সার্ভিসেই ঘটেছে, সর্বত্রই হয়েছে। ফলাফল, ২০১৮ সালের লাইলাতুল নির্বাচন এই আমলাকুলই সবটা করে দিয়েছে; দলকে কিছুই করতে হয়নি; গৃহপালিত আমলারা একই কর্ম করেছে ২০২৪-এর নির্বাচনে। এখন মনে হচ্ছে, জনভোটের ভয় থেকেই প্রশাসনকে পরিকল্পিতভাবে দলীয়করণের ধারণার উৎপত্তি। ফলে আমলারা অধিক শক্তির আধার হয়ে উঠেছে। দুর্নীতি করতে সামান্য ভয়-ডরও ছিল না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দরুন কারোর বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগও উত্থাপিত হয়নি। জন্ম নিয়েছে শত শত বেনজীর-মতিউর-শাহ কামালসহ লিয়াকত আলী-তাকসিম-মশিউররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরপর দু’জন আমলা গভর্নরেরই তো নানা কিছু বেরুচ্ছে এখন।
ওই যে বিচ্ছিন্নকরণের এ, বি, জে, এন, তালিকার হয়রানি বহুজনের চাকরির শেষদিন অবধি ভর করে ছিল। ছায়ার মতোই পেছনে লেগে ছিল যেন। কিছু বললেই ওএসডি কিংবা বদলি অথবা নানা প্রকারের নিগ্রহ-নিপীড়ন। তবে, অকালীন অবসর কমই দেয়া হয়েছে; হয়তো বিরূপ খবর চাউর না চাওয়া থেকেই। কিন্তু বহুজন একাধিকবার এবং অনেকে দিনের পর দিন ওএসডি ছিল; সে কেবল আওয়ামী ঘরানার নয় বলে আর এই চিহ্নিতকরণও অযৌক্তিক পন্থায়। গল্পটি এ রকমের- ব্যাচের ফার্স্ট বয় বছরের পর বছর ওএসডি। মা বলছেন, বাবা তোমার চাকরি আছে কি? পরের মাসে মাকে বেতনের চেক দেখিয়ে নিশ্চিত করতে হয়েছে, মা, চাকরি আছে এখনো।

তথাকথিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের প্রধান সরকারের প্রধান করণিক। এই বোর্ডে অপরাপর সদস্যরা সরকারের সচিব বটে। ক্যাবিনেট সেক্রেটারির সভাপতিত্বে এই বোর্ড যোগ্য প্রার্থীদের পদোন্নতির সুপারিশ থেকে বঞ্চিত করে দিনের পর দিন অবিচারের রাজত্ব কায়েম করেছে। ন্যায়বিচার এবং সুশাসন আর কোথা থেকে আসবে? এমনও হয়েছে বোর্ডের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আমলারাও কেটে দিয়েছে। আবার যুগ্ম সচিব এবং উপরের পদে পদোন্নতির আগে বিশেষ সংস্থার রিপোর্ট দিয়েও বহুজনকে আটকে দেয়া হয়েছে। ১০-১৫ বছর চাকরি করার পর আবার বিশেষ সংস্থার রিপোর্ট কেন দরকার, সে জবাব পাওয়া যায় না। যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকার মতোই বিরূপ প্রতিবেদন আনিয়েও বহুজনকে বাদ দিয়েছে ওই বোর্ড। এটি যে কেবল প্রশাসনিক আমলাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাই নয়- সব চাকরিতে হয়েছে, সব সেক্টরেই ঘটেছে। বাদ যায়নি স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, করপোরেশন এবং বাহিনীগুলো। লক্ষণীয়, ১৯৯১-৯৬ ও একই দলের ২০০১-০৬-এর শাসন এবং একই দলের ১৯৯৬-২০০১ শাসন ও ২০০৯-২৪ পর্যন্ত একই দল ক্ষমতায় আসীনকালে ক্রমেই আমলা করায়ত্তকরণ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এখন আদতে আমলা চরিত্রই বিলীন হয়ে আছে- চরিত্র হারিয়ে গেছে লোকপ্রশাসনের; খাদে পড়েছে জনসেবা- সরকারের অবর ও ঊর্ধ্বতন চাকুরেরা দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনের চেয়ে রাজনীতিতে হাত পাকিয়েছে। এই প্রশাসকরাই ভিজিডি-ভিজিএফ কিংবা ওএমএসের তালিকা থেকে শুরু করে সব প্রকল্প গ্রহণ করেছে, নিয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। উপকারভোগী কারা? বিশেষ গোষ্ঠী, না আমজনতা?

কেয়ারটেকার ব্যবস্থা চালু থাকলে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ ছিল। অবহেলিত-বঞ্চিতদের পাঁচ বছর পর বঞ্চনা থেকে উপশম পাওয়ার সুযোগ দেখা দিত। সে তো বন্ধই করা হলো। ২০০৮ থেকে ২০২৪ একটি দলের শাসনই দেখেছে জুনিয়র আমলাকুল। অনেকে আবার প্রতিযোগিতা করে সরকারের আস্থা অর্জনে সময় ব্যয় করেছে। এই এরাই এখন প্রশাসনের সর্বত্র। লোকপ্রশাসন কিন্তু এই মহাজঞ্জালাকীর্ণ। নেই কর্মপরিবেশ। কবে এই আবর্জনা দূর হবে? আদৌ হবে কি? নানাভাবে বঞ্চিত-অবহেলিত-ক্ষতিগ্রস্তদের কান্না একটু হলেও কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কমিয়ে দিতে পারবে? দলবাজি করে যারা বাড়াবাড়ির শেষধাপে পৌঁছেছে ‘সে কি অমনি রবে’! কিছুই হবে না তাদের?
আশার কথা হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব কম সময়ের মধ্যেই অবহেলিত-বঞ্চিতদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। নিচ্ছে আরো কিছু পদক্ষেপ। আমরা ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছি।
লেখক : সাবেক অতিরিক্ত সচিব

 

 


আরো সংবাদ



premium cement