১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

থিওরি অব কন্ট্রোলড ডেমোক্র্যাসি

-


বাংলাদেশ তার জেন-জি প্রজন্মের হাত ধরে একটি অভূতপূর্ব সময় পার করছে। এই সময়ের পুরোটাজুড়েই রয়েছে থ্রিল, থ্রেট, সারপ্রাইজ, এক্সাইটমেন্ট, ইনোভেশন। আরো যে কত কী আছে এই মুহূর্তে বলে শেষ করা যাবে না। দেশের সাত কোটিরও অধিক তরুণ একজন দক্ষ নাবিকের হাতে জাহাজটির দায়িত্ব দিয়ে কিছুটা যেন নির্ভার মনে হচ্ছে। অনেকের প্রশ্ন এই নাবিক কত দিন থাকবেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় তিনি তার উত্তরসূরি নির্বাচন করবেন? উত্তরটা সহজ, আর তা হলো- তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার উত্তরসূরি নির্বাচন করবেন। গণতন্ত্রের ধরন নিয়ে পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠিত আছে। যেমন ধরুন, ডলার ডেমোক্র্যাসি, ট্র্যাডিশনাল ডেমোক্র্যাসি, মডারেট ডেমোক্র্যাসি, সাউথ এশিয়ান টাইপ ডেমোক্র্যাসি, ডিরেক্ট ডেমোক্র্যাসি, রিপ্রেসেন্টেটিভ ডেমোক্র্যাসি, লিভারেল ডেমোক্র্যাসি, ইললিবারেল ডেমোক্র্যাসি, পার্লামেন্টারি ডেমোক্র্যাসি, প্রেসিডেন্সিয়াল ডেমোক্র্যাসি, জ্যাকসনিয়ান ডেমোক্র্যাসি, ওয়েস্টমিনস্টার ডেমোক্র্যাসি, অটোক্র্যাটিক ডেমোক্র্যাসি, কনসেন্সাস ডেমোক্র্যাসি, কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাসি, গাইডেড ডেমোক্র্যাসি প্রভৃতি। গণতন্ত্রের এই লম্বা তালিকা দেখে আমরা বুঝতে পারি মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে গণতন্ত্রের পরিবর্তিত রূপ গ্রহণ করেছে।
এখন প্রশ্ন হলো- আমাদের এই জেন-জি তালিকা থেকে গণতন্ত্রের কোন ধরনটি গ্রহণ করবে; নাকি কোনোটিই গ্রহণ না করে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বেছে নেবে?
প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই জেন-জি চাইলে আমাদের থিওরি অব কন্ট্রোলড ডেমোক্র্যাসি স্টাডি করতে পারে। বলে রাখা ভালো, আমাদের এই থিওরিটি প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ দুই টার্ম অর্থাৎ ১০ বছরের জন্য চর্চা করা যেতে পারে। পাঁচ বছরে এটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাই ১০ বছরের কথা বলা হচ্ছে। দুই দলীয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এই থিওরির জন্য যথার্থ বলে আমরা মনে করছি। আসুন দেখে নেয়া যাক এই থিউরি কী কী অন্তর্ভুক্ত করছে!

প্রথমত প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৬০০ জনকে বেছে নেবেন এবং তাদের ৩০০ জন করে দু’টি দলে বিভক্ত করে দেবেন। এই দু’টি দলের নামও তারাই ঠিক করে দেবেন। দুই দলে দু’জন দলনেতা থাকবেন। তারা সেসব যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বেছে নেবেন যারা রাষ্ট্রকে আগামী ৫০ বছরের জন্য প্রস্তুত করে দিয়ে যাবেন। যাদের বেছে নেয়া হবে তাদের যোগ্যতার ক্রাইটেরিয়া নিয়ে যদি বলি তাহলে বলতে হয়, দেশে এবং দেশের বাইরে মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত এবং সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেননি তারা অগ্রাধিকার পেতে পারেন। দুই দল থেকে প্রতিটি আসনে একজন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কারা কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সেটিও দলের নেতারা ঠিক করে দেবেন। সিম্পল মেজরিটি অর্থাৎ ১৫১ বা তার অধিক আসন যারা পাবে তারাই সরকার গঠন করবে বাকিরা বিরোধী দল হিসেবে কাজ করবে।
প্রথম পাঁচ বছরে যদি তারা রাষ্ট্র গোছাতে না পারে সে ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়ায় আরো একবার নির্বাচন সম্পন্ন হবে। পর পর দুবার এই নিয়মে নির্বাচন হওয়ার পর রাষ্ট্র তার বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাবে যেখানে বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এটি গণতন্ত্র হয় কী করে যেখানে জনগণের সরাসরি কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই! তাহলে চলুন আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়াটা দেখে আসি। যেমন ধরুন, ২০০৮ সালের নির্বাচন যদি আমরা পর্যালোচনা করি যেখানে দেশের দু’টি জোটভুক্ত দল তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। জনগণ তাদের ভোট দিয়ে সরাসরি নির্বাচিত করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এখানেও প্রার্থী মনোনয়নে জনগণের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। পার্থক্যটা হলো- প্রথমটির ক্ষেত্রে প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনোনয়ন দেবে আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে জোটভুক্ত দল দু’টি মনোনয়ন দিত।

রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে এবং একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনে উপযুক্ত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনুপযুক্ত ব্যক্তি মনোনয়নে ঝুঁকির দিকটি হলো, এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ একটি সিঙ্গারা, এক কাপ চা অথবা ৫০০ টাকার বিনিময়ে তাদের ভোট দিয়ে দেয়। ফলে টাকার বিনিময়ে যে কারো নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রয়ে যায়। এই ছাত্ররা জীবনের এত ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রকে স্বৈরশক্তি মুক্ত করেছে নিশ্চয়ই তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য নয়! যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই রাষ্ট্রকে আপনারা যারতার হাতে তুলে দেবেন না, এটুকুই প্রত্যাশা প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

 

 


আরো সংবাদ



premium cement