১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

-

গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ২১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই বছর আগে দেউলিয়া ঘোষণার পর চরম অস্থিতিশীল অবস্থার মুখোমুখি হয় দেশটি। এ অবস্থার উত্তরণে হতে যাচ্ছে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচন দেশটির সংস্কারের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এটাকে দেখা হচ্ছে আগামীর শ্রীলঙ্কার অবস্থা কী হতে পারে তার একটা গণভোট।
২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহীদের দমনের পর দেশটিতে শান্তির সুবাতাস বইছিল। বড় প্রতিবেশী ভারত ও বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি চীন এ অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্টরা বিগত দিনে দু’দিকে হেলেছেন। কিন্তু যুদ্ধের কাল পার হয়ে স্বাভাবিক সময়ে এসে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে। একপর্যায়ে দেশটি দেউলিয়া হয়ে যায়। ২০২২ সালে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কাজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায়শূন্য, চীনের কাছে বড় অঙ্কের ঋণ, সর্বনি¤œ পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। এ পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের এপ্রিলে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা সরকার বলেছে, এ অবস্থায় প্রধানত দায়ী করোনা পরিস্থিতি। এ ছাড়াও পর্যটন খাতের বিপর্যয় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির অন্যতম কারণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। ২০২২ সালের জুলাইয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে। ২০১৯ সালে পাঁচ বছরের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন রাজাপাকসে। বিশ্লেষকরা বলছেন, একের পর এক ভুল নীতি প্রণয়নে দেশে সঙ্কটের সৃষ্টি। তিনি ক্ষমতা হারানোর পর মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালনে দেশটির পার্লামেন্ট বিক্রমাসিংহেকে নির্বাচিত করে। অর্থনীতি সঙ্কটে ডুবে থাকা দেশটি ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এখন কে নির্বাচিত হয়ে অর্থনীতির হাল ধরবেন সেদিকে দৃষ্টি সবার।
শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রপতি শাসিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটে হয়। যে প্রার্থী শতকরা ৫০ ভাগ বা তার বেশি ভোট পাবেন তিনি বিজয়ী হবেন। কিন্তু কোনো প্রার্থী যদি ৫০ ভাগ ভোট না পান তাহলে সবচেয়ে বেশি ভোট যে দু’জন প্রার্থী পাবেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোট হবে। তাতে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি হবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। আশির দশকে সরাসরি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শাসিতব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে দ্বিতীয় দফা ভোটের প্রয়োজন পড়েছে এ উদাহরণ নেই। এই বছরের নির্বাচন ভিন্ন পরিস্থিতিতে হচ্ছে বিধায় সেই ধারাবাহিকতা থাকে কিনা সেটি এখন দেখার বিষয়। নির্বাচনী গতি প্রকৃতির প্রতিদিন বদল হচ্ছে। প্রচারের শেষ পর্যায়ে এসে প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে চারজনকে বিশ্লেষকরা বলছেন হেভিওয়েট ক্যান্ডিডেট। অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর এটি প্রথম নির্বাচন এবং এ প্রথম তামিল দলগুলো প্রার্থী দিয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্য ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৩৯ প্রার্থী। দু’জন কমে এখন ৩৭ প্রার্থী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল ছাড়াও বাকি তিন প্রধান প্রার্থী হলেন- বিরোধীদলীয় নেতা সামাগি জনা বালাওয়েগয়া-এসজেবির সজিথ প্রেমাদাসা, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার-এনপিপি জোট ও জেভিপি নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েক এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে শ্রীলঙ্কা পডুজানা পেরামুনার নমল রাজাপাকসে।
লড়াই হবে মূলত ত্রিমুখী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিলের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) দ্বিধাবিভক্ত। এর ছোট অংশের নেতা তিনি। আর নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। রনিল ১৯৯৪ সাল থেকে ইউএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ছয়বার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কলম্বোর সংবাদপত্র দ্য আইল্যান্ড অনলাইনের খবর, ইউএনপির নেতৃত্ব দেওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্মে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত সম্ভবত বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে চালিত হয়েছিল। এটা দাবি করা হয় যে, শ্রীলঙ্কা পডুজানা পেরামুনা-এসএলপিপির প্রায় ৯০ ভাগ রনিলের প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছেন। তবে ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন কতটা দেখা যাবে সেটা বলা মুশকিল।
ইউএনপির অন্য বড় অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সজিথ প্রেমাদাসা, যিনি পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা। বোমা হামলায় নিহত শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে সাজিথ লড়ছেন ‘সমাগী জন বালাওয়েগায়া’- এসজেবি নামে জোটের প্রার্থী হিসেবে। বিগত নির্বাচনে জয়ী গোটাবায়া রাজাপাকসে ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনডিএফের সজিথ প্রেমাদাসা পান ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থানে ছিলেন জেভিপি নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়কে। ভোটের হার ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে এ নির্বাচনে আগের ওই ধারা বজায় থাকবে বলে মনে হয় না।
অনুরা দিসানায়েক বর্তমানে এমপি ও জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নেতা। তামিলদের বিপ্লবী দল জেভিপি পরে মেইন স্ট্রিম পার্টি হিসেবে কাজ শুরু করে। প্রচার ও সমর্থন বিবেচনায় দিসানায়েকে ভালো অবস্থানে আছেন। তাকে দুজন শীর্ষস্থানীয় প্রার্থীর একজন মনে করা হচ্ছে। মার্কসবাদী এ নেতা বিজয়ী হলে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ইতিহাস পাল্টে যাবে বলে ধারণা।
একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে কিভাবে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছিল? এর সূত্রপাত হয়েছিল বাজেট ও বাণিজ্য ঘাটতি, ঋণের স্তূপ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মারাত্মক হ্রাসের মতো কাঠামোগত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর কারণে- যা অত্যাবশ্যক পণ্যের ঘাটতি ও অতিমাত্রার মূল্যস্ফীতির জন্ম দেয়। খাদ্য ও রেশনে দীর্ঘলাইন, বিদ্যুৎ ঘাটতি, বিদ্যুতের চড়া দাম, প্রতিশ্রুতি পূরণে রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা প্রভৃতির সাথে একটি ‘নতুন ব্যবস্থার’ দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণ ছিল, একাধিক জায়গায় হিংসা, সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। তবে শেষ দিনগুলোতে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়েন। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কটে দায়ী করা হয় চীন এবং বেপরোয়া দুর্নীতিকে। এ কারণগুলোর সম্পর্কে বিশ্লেষকরা একমত হলেও চীনের অর্থায়নে বৃহৎ প্রকল্পের ভূমিকা কতটুকু সেটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। কেউ বলার চেষ্টা করছেন, শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণে চীনা ঋণের হিস্যা যেহেতু ১৫ শতাংশ (তর্ক সাপেক্ষে), তাই শ্রীলঙ্কার সংকটে চীনা ঋণকে দায়ী করা ঠিক হবে না। ঋণ নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্কট আসলে একটা উপসর্গ, মূল রোগ নয়। প্রকৃত বাস্তবতায় অবাধ দুর্নীতি দেশটাকে ডুবিয়েছে।
মাহিন্দা রাজাপাকসে ক্ষমতায় আসার আগে শ্রীলঙ্কায় ঋণ জিডিপির অনুপাত ছিল ৮০ শতাংশ। চীনা ঋণ নিয়ে সমালোচনার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সেগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এমন সব প্রকল্প, যেগুলো নির্মাণের আগে স্পষ্ট ছিল সেগুলোর আদৌ কোনো অর্থনৈতিক উপযোগিতা নেই। এগুলো নেয়াই হয়েছিল ক্ষমতাসীনরা কমিশন বাণিজ্য করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া। যেমন-হামবানটোটা সমুদ্রবন্দর, মাত্তালা রাজাপাকসে বিমানবন্দর, কনফারেন্স সেন্টার এবং ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পোর্ট সিটি কলম্বোর কথা সবাই জানেন।
শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার পর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরো খারাপ হয়েছে। তবে ভূ-রাজনীতির হিসাব বলছে, সে অবস্থা থেকে চীন বের হতে চাইবে, সম্পর্ক আবার ভালো করতে চাইবে।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সংযোগ ও অর্থনৈতিক একীকরণে একটি উল্লেখযোগ্য চাপ রয়েছে। ভারত থেকে সংযোগে এ চাপের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধার করা। চীনা উপস্থিতি ও প্রভাব মোকাবেলা করা। ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রায় অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতির বিষয় হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীরা কিছু ভারতীয় প্রকল্পের সমালোচনা করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের কাছে সম্পদ বিক্রির অভিযোগ করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে কিছু প্রকল্প ইতোমধ্যে ধীরগতি হয়ে পড়েছে। সরকারে পরিবর্তন হলে চুক্তি প্রত্যাহার করা হতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় জাতীয়তাবাদী ভারতবিরোধী মনোভাব জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, আপাতত শ্রীলঙ্কার ভোটারদের চাওয়া- পর্দার পেছন থেকে রাজাপাকসেদের মদদে রনিল ও আমলাতন্ত্র যেভাবে দেশ চালাচ্ছে তা থেকে বের হওয়া। কিন্তু নির্বাচনে জনগণ একমাত্র পক্ষ নয়। ভারত এবং চীনও গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। এরকম বিদেশী শক্তিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর ব্যাপারে কতটা আগ্রহী, সেটি কারো অজানা নয়। কলম্বোভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভস বলছে, শ্রীলঙ্কায় একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অপরিহার্য। আইএমএফ ২৯০ কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে অর্থনীতিতে বিপর্যয় অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন বিক্রমাসিংহে। ২০২২ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭০ শতাংশ। সেটি কমিয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়েছে বিক্রমাসিংহের সরকার। স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও পুনর্গঠন করা হয়েছে। ২০২৪ সালে দেশটির অর্থনীতিতে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।
ওই সংস্থার ভাষায়, প্রতিপক্ষরা মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) বেলআউট ঋণের শর্ত মানতে বিক্রমাসিংহের চালু করা সংস্কার নীতির বিরোধিতা করবেন। দেশটি অর্থনৈতিক মন্দা থেকে খানিকটা ঘুরে দাঁড়ালেও এখনো প্রবৃদ্ধি আগের পর্যায়ে ফেরেনি। দেশের মানুষ জীবনযাপনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, এ বিশ্লেষক ভোটারদের অসন্তষ্টির কথা বলছেন। এর প্রভাব ভোটে পড়তে পারে।
২০২৩ সালে বিক্রমাসিংহে আইএমএফ থেকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ নিতে যেসব শর্তে রাজি হয়েছিলেন, সেগুলো নিয়ে নতুন করে দরকষাকষি করার অঙ্গীকার জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো।নির্বাচনে যে জিতুন না কেন, ভারতের তরফে চীনের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অব্যাহত থাকবে। চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব কলম্বোকে বেইজিংয়ের স্বার্থ ও কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দিতে বাধ্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫-২০১৯ এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছিল মোট ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, কিন্তু ২০০৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চিনের কাছে শ্রীলঙ্কার ঋণ ০.৪৫ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছিল। এমনকি আজও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছে শ্রীলঙ্কার মোট ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে এবং চীন সর্বোচ্চ ঋণদাতা। এ হিসাবে বাণিজ্যিক ঋণের ২.১ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়নি। তার অর্থনৈতিক আধিপত্যের পরিপ্রেক্ষিতে, চীন শ্রীলঙ্কায় বন্দর ইজারা দেওয়া, পরিকাঠামো প্রকল্পের প্রসার, গোয়েন্দা জাহাজ ও সাবমেরিন ডকিং এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে অস্ত্র তৈরির চেষ্টাসহ ভারতের বিরুদ্ধে তার প্রভাব ব্যবহার করে চলেছে এবং তা চালিয়ে যাবে। জেলেদের নিয়ে বিরোধ, ১৩তম সংশোধনী, সংযোগ প্রকল্প, বিতর্কিত অঞ্চল এবং এ অঞ্চলে চীনা প্রবেশের মতো বিষয়গুলো ভারতের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
ভোটাররা কী করবেন সেটা এখন দেখার বিষয়। তারা সঠিক পথে দেশকে এগিয়ে নিতে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেবেন বলে ধারণা সবার। বিক্রমাসিংহে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ওপর ফোকাস রেখেছেন, প্রেমাদাসা সামাজিক গণতান্ত্রিক নীতি এবং দরিদ্রপন্থী উদ্যোগের উপর জোর দিচ্ছেন। দিসানায়েক পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের পক্ষে কথা বলছেন। নির্বাচনটি অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের ফল দেশের ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে আঞ্চলিক শক্তি যেমন ভারত, প্রধান পশ্চিমা শক্তি এবং চীনের সাথে এর সম্পর্ক।
যদিও তিন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী একটি ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতির দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে হচ্ছে। বিক্রমাসিংহে বা প্রেমাদাসা সরকার ভারত এবং পশ্চিমা শক্তির দিকে আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দিসানায়েকে সরকার চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। উপরন্তু, ছোট দলগুলোর প্রভাব, বিশেষ করে যারা ভারতের সাথে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিরোধিতা করে বা বিকল্প অর্থনৈতিক কৌশলের পক্ষে, শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক নীতির দিকনির্দেশ আরো জটিল করে তুলতে পারে, বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে এবং এর বাইরেও এর অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক


আরো সংবাদ



premium cement
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আসলে কী হয়েছিল? মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করুন : তথ্য উপদেষ্টা বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টায় নজর ভারতের এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট নাটোরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে যুবদল নেতাসহ গ্রেফতার ৬ বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ ভিসা সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মার্চেন্ট শিপিং ফেডারেশনের শহীদ পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ, আহতরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম

সকল