১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ইসলামপন্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি

-

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ট্রান্সমিশনে সোনার বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পতন হল আর এদেশের আপমর জনতার ভাগ্যাকাশে উদিত হল এক নতুন বাংলাদেশের সূর্য। যে সূর্য সকল বৈষম্য দূর করে এদেশের প্রতিটি ঘরে ছড়াবে সাম্য ও ন্যায়ের আলো এ আশাই এখন জনমনে। তবে কাঙ্ক্ষিত সাম্যের আলো পেতে দেশের নবগঠিত সরকারকে অনেক আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সরকারের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা অপরিহার্য। এদেশের জুলুম নির্যাতন বিরোধী এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল আন্দোলনে আলিম সমাজের বিক্ষিপ্ত অবদান লক্ষ্য করা গেলেও সেগুলো উল্লেখযোগ্য অবদান হিসেবে স্বীকৃত হয়নি সর্বসাধারণ মানুষের কাছে। এর অন্যতম মৌলিক কারণ হচ্ছে আলিমদের বিভিন্ন প্লাটফর্মের অনৈক্য এবং সর্বসাধারণের আন্দোলনের সাথে সমন্বয়হীনতা। পাশাপাশি ইসলামী প্লাটফর্মগুলো দেশের চলমান গণআন্দোলনের মোটিভ ও দাবীগুলোকে নিজেদেরও আন্দোলনের মোটিভ ও দাবী হিসেবে বুঝতে না পারা। এজন্য কোন কোন প্লাটফর্ম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করলেও কর্মসূচী করেছেন তাদের নিজস্ব ব্যানারে, যা এই ছাত্র আন্দোলনের শুরুতেও পরিলক্ষিত হয়েছে। এটি আলিম সমাজ ও ইসলামপন্থীদের একান্তই দূর্বলতা।
এমন দূর্বলতার অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে ইসলাম প্রদর্শিত ঐক্যের জ্ঞানের যথাযথ অনুধাবনের অনুপস্থিতি এবং ঐক্যের ভিত্তি ও ঐক্যের ইস্যু শনাক্তকরণে অপরাগতা। চলমান প্রেক্ষাপটে আলিম সমাজ ও ইসলামী প্লাটফর্মগুলোর ঐক্যের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি এবং নবগঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইসলামীপন্থীদের সহযোগিতার প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা সময়ের দাবী। এই নিবন্ধে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আলিম সমাজ ও ইসলামপন্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা হবে।
ঐক্য গঠনে আলিম সম্প্রদায় ও ইসলামপন্থীদের মাঝে কিছু তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। ভিন্ন ঘরণার কয়েকজন বক্তা পারস্পরিক মুসাফাহা করে থাকেন কিংবা এক ঘরণার এক আলিম অন্য ঘরণার আরেক আলিমের বাসায়, খানকায়, অথবা অফিসে সাক্ষাৎ ও ভোজনের আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। দুই প্লাটফর্মের দুই আলিম পরিবারের মধ্যে সামাজিকভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক হয়ে থাকে, কিন্তু ঐক্যের উদ্দেশ্য নয়। কোন কোন উদ্যোগী বক্তা ওয়াজের মাঠে ‘আসুন আমরা ঐক্য গড়ি’ বলে আহবান করে থাকেন। সাধারণ মানুষ আলিমদের এহেন কার্যকলাপ দেখে কেউ বাহাবা দিয়ে থাকেন কারণ এতটকু কাজকেই তারা ঐক্যের কাজ হিসেবে মূল্যায়ণ করেন এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তারা কর্তব্য পালন সম্পন্ন হয় বলে মনে করেন। কেউ কেউ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় অন্য প্লাটফর্মের নেতৃবৃন্দের সাথে হাত মিলানোর পাশাপাশি বুক মিলানোর পরামর্শও দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি এতটুকু কাজ স্বদলীয় অনুসারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য পূর্বসুরী ভারতবর্ষের আলিমদের এমন চর্চাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। এমন সৌজন্যমূলক আচরণ ইস্যু ভিত্তিক ঐক্য কিংবা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কোন ভুমিকা রাখতে সক্ষম নয়।
অধিকন্তু, কেউ পরস্পর দেখাসাক্ষাৎ করে পারস্পরিক দূরত্ব কমিয়ে আনার আহবান জানান। এবং বিদ্যমান ইখতিলাফি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের প্রস্তাব করেন। এটি একটি চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। ইখতিলাফি মাসআলা বা মতামত এটি ইজতিহাদি বিষয়। ইজতিহাদ মানেই ভিন্নতার মোহনায় যুক্ত হওয়া। কোন ইস্যুতে একটি মতকে সঠিক মনে করলে সে ইস্যুতে ইজতিহাদের আর কোন প্রয়োজন নেই। তাই ইফতিলাফি বিষয়ে সমাধানের চিন্তা একটি নির্বুদ্ধিতা। মূলতঃ ইফতিলাফি বিষয়কে এড়িয়ে অর্থাৎ এটিকে আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয় না বানিয়েই ঐক্যের চিন্তা করতে হয়। অথচ তারা ইখতিলাফি বিষয়কে সমাধানের মাধ্যমে ঐক্যে পৌঁছাতে চায়! প্রকৃতপক্ষে ইখতিলাফি বিষয়ে আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছা কশ্মিনকালেও সম্ভব নয়; বরং এমন আলোচনা সাধারণ বৈঠকেই বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এবং ঐক্যের বীজকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়।
ঐক্যের জ্ঞানই পারে মানুষের মাঝে চিন্তার পরিবর্তন আনতে, এবং চিন্তা ও আদর্শের মিলন ঘটাতে। বিভিন্ন প্লাটফর্মের অনুসারী বিশেষত নেতৃবৃন্দের জ্ঞানগত ও চিন্তাগত মিলই কেবল প্রকৃত ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথ উম্মোচন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে মুসলিম মনীষীদের একটি হিকমতের (প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা) প্রসিদ্ধি রয়েছে যা বিশ্বনবীর বিভিন্ন হাদিসের ভাষ্য থেকে উৎকলিত। ইলম তার অনুসারীদের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধনসম, যা আত্মাগুলোকে কাছাকাছি নিয়ে আসে, হৃদয়গুলোকে নিকটে নিয়ে আসে, এবং রূহগুলির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব তৈরি করে।’ ইমাম নববী (রহঃ) ইলমকে শরয়ী দুগ্ধ হিসেবে বিবেচনা করেন যা রেহেমী সম্পর্কের সমার্থক (মাজমু; তাহযীব)।
ঐক্যজ্ঞানের কিছু সাধারণ উপকরণ রয়েছে যা একজন পাঠকের মনকে ঐক্যের ছাঁচে আকার দেয়, অন্যের মাঝে চিন্তার মিল খুজতে সহযগিতা করে এবং সমচিন্তার মানুষদেরকে কাছে টানে। সাধারণতঃ যে সকল উপকরণমূলক জ্ঞান ঐক্যের জ্ঞানের সহায়ক হিসেবে কাজ করে তম্মোধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জনস্বার্থ, সার্বজনীন স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থ, অন্তঃধর্মীয় সংলাপ/ আন্তঃমুসলিম সংলাপ/ আন্তঃমাযহাব সংলা, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা, বিভাজন ও শাসন, শান্তি ও সংঘর্ষ ইত্যাদি। উপরোক্ত উপকরণগুলোর কিছু ঐক্যের মোটিভ হিসেবে কাজ করে; কিছু ঐক্য গড়তে সহায়ক হিসেবে কাজ করে; পক্ষান্তরে, আরো কিছু ঐক্য বিনষ্টকারী কাজকে প্রতিহত করে।
উপরোল্লেখিত সাধারণ উপকরণগুলোর কিছু ইসলাম প্রদর্শিত, কিছু ইসলাম সমর্থিত, এবং কিছু ইসলামের অনুকুলে। এছাড়াও ইসলামের বিশেষায়িত এবং মূলনীতিমূলক আরো কিছু উপকরণ রয়েছে যেগুলো পূর্বোল্লেখিত সাধারণ উপকরণগুলোর প্রায়োগিক পদ্ধতি এবং সে আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের ইসলামের সাথে সঙ্গতিকে মূল্যায়ন করে। ইসলামের এমন বিশেষায়িত উপকরণগুলোর মধ্য উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- শরীয়া মাকাসিদ, অগ্রাধিকার জ্ঞান, ইসলামের সাধারণ বৈশিষ্ট্য, মতোবিরোধের জ্ঞান, তুলনামূলক বিচারের জ্ঞান, পরিবর্তনশীল ও অপরিবর্তনশীলের জ্ঞান ইত্যাদি।
ঐক্য প্রতিষ্ঠার ইস্যু নির্ধারণে ইসলাম প্রদর্শিত কিছু চমৎকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইসলামী দর্শণে ঐক্যের ইস্যুগুলো হচ্ছে মানবতার অত্যাবশ্যকীয়, সর্বজনীন, অপরিবর্তনীয়, ও সাধারণ ইস্যু। ঐক্যের ইস্যুগুলো হচ্ছে সকল প্লাটফর্মের সামষ্টিক উদ্দেশ্য এবং মৌলিক প্রয়োজন। অর্থাৎ এগুলো এমন প্রয়োজনীয় বিষয়ে ঐক্য গড়তে হয় যেগুলোকে কেউ এড়িয়ে যেতে পারে না; বরং সকলেই ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ, কিংবা মাযহাবী স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে এগুলোকে প্রাধান্য দিতে স্বপ্রণোদিতভাবে বাধ্য। কারণ এগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ও দল নির্বিশেষে সবার সর্বজনীন কর্তব্য ও অপরিহার্য। পক্ষান্তরে, শোভা বর্ধনকারী, ক্ষুদ্র, পরিবর্তনীয়, পন্থা জাতীয়, শাখাগত ইত্যাদি বিষয়ে ভিন্নমতকে স্বীকৃতি ও সম্মান দেয়। ঐক্য হয় বৃহত্তর অঙ্গনে। যারা ঐক্যের চিন্তা করেন বা ঐক্য গড়তে চান তাদের জন্য প্রাথমিকভাবে উপরোক্ত উপকরণ এবং বিশিষ্ট্যগুলোকে সামনে রেখে ঐক্য সংক্রান্ত স্টাডি ও হোমওয়ার্ক করা আবশ্যক। কারণ দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঐক্য একটি উদ্দেশ্য অনিবার্য প্রয়োজন।
ঐক্যের আরো কিছু উচ্চতর উদ্দেশ্য রয়েছে যা সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারলে ঐক্যের পথ সুগম হবে। উদাহরণসরূপঃ ঐক্যের উচ্চতর উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীন রক্ষা ও জাতি সত্ত্বার অস্তিত্ব রক্ষা। ঐক্যমূখী এমন কোন মুসলিম দল বা আলিম নেই যারা দ্বীন ও জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব রক্ষায় কাজ করতে নারাজ। এভাবে ধর্মীয়, জাতীয়, ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ইস্যুগুলোকে ঐক্যের ইস্যু হিসেবে শনাক্ত করলে ঐক্য গড়া সহজ হবে। যে সকল প্লাটফর্ম নিয়ে ঐক্যের চিন্তা সে সকল ফ্লাটফর্মের কমন স্বার্থ শনাক্ত করা প্রয়োজন। এই কমন বিষয়গুলো হতে হবে সবার কাছে সমান গুরুত্বের। এমন ধারণা পোষণ করা যাবে না যে, আমাদের (?) কাছে তো এই এই বিষয়গুলো গুরুত্বের। কিন্তু অন্যরা (?) কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে ঐক্য না হওয়ার জন্য তারাই দায়ী। এমন চিন্তাধারা নিতান্তই মোটা বুঝের পরিচয়। দলমত নির্বিশেষে মানুষ হিসেবে এটি সবার স্বার্থের দাবী কিনা তা দেখেই কমন ইস্যু শনাক্ত করতে হয়। তাহলে ঐক্যের মোকাবেলায় নিজস্ব অঙ্গনকে কেউ বড় করে দেখবে না, কমন ইস্যু থেকে কেউ সরবে না, এবং ঐক্যকে বিনষ্ট করতে উদ্ধত হবে না।
পক্ষান্তরে, ঐক্য পরিপন্থী কিংবা ঐক্য বিনষ্টকারী সর্বজনীন স্বার্থের ইস্যুগুলোকে নষ্ট করে এমন কাজগুলো শনাক্ত করা এবং এ ব্যপারে সচেতন থাকা যাতে এ জাতীয় কাজগুলোকে কখনোই আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে না নেয়। এমন সতর্কতা ঐক্য প্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতির অংশ। ঐক্যমঞ্চের সকল ঘরণার অনুসারীদেরকে ঐক্যের সমন্বিত ইস্যু এবং ঐক্য বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া আবশ্যক। এজন্য উদ্যোগীদের সমন্বয়ে সব ঘরণার অনুসারীদের জন্য একসাথে কিংবা পৃথকভাবে একই ধরণের প্রশিক্ষনের আয়োজন করা যেতে পারে।
ধর্মীয়, জাতীয়, ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঐক্যের অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে যেগুলোকে সামনে রেখে কোন কর্মসূচী পালন করলে দেশের সকল মুসলিম ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় একই প্লাটফর্মে এসে যাবে। পক্ষান্তরে, জাতীয় পর্যায়ের সাধারণ ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে কাজ করলেও জাতীয় ঐক্যের পথ সুগম হতে পারে। অধিকন্তু, মুসলিম ঐক্য জাতীয় ঐক্যের সোপান হিসেবেও ভুমিকা রাখতে পারে। এমন ইস্যুর মধ্যে রয়েছে ইসলামের সাধারণ বিশ্বাস যেমনঃ কুরআন-সুন্নাহর, বিশ্বনবীর, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলাম বিদ্বেষী আইন, সাধারণ মূল্যবোধ যেমনঃ ন্যায়বিচার, সহানুভূতি এবং সহনশীলতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক, বৈষম্য মোকাবিলা, সামাজিক উন্নয়ন, ইত্যাদি। জাতীয় ইস্যু যেমনঃ পার্বত্য চট্রগ্রাম, ফারাক্কা বাঁধ, ভিনদেশী করিডোর, বৈদেশিক চুক্তি, সীমান্তে হত্যা, ইত্যাদি। এছাড়াও বৈশ্বিক ইস্যু যেমন আল-আকসা, বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিপীড়ন, পরিবেশগত ইস্যু যেমন: কার্বন নির্গমন, ইত্যাদি। কেউ বলে থাকেন, ঐক্যের উদ্দেশ্য একটাই আর তা হচ্ছে- আল্লাহর সন্তুষ্টি বা জান্নাত। যদিও মানুষের জীবনের সার্বিক ও চূড়ান্ত উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি হওয়াই উচিত, কিন্তু এটি ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্দেশ্য, যা প্রতিটি মুসলিমের থাকা আবশ্যক। তবে এটি প্রকাশের বিষয় নয়, এটি শর্তারোপেরও বিষয় নয়। তাই যে অর্থ সর্ব সাধারণ মানুষ বুঝে থাকে, সে অর্থে আকীদা বা এতদসংক্রান্ত বিষয়গুলো ঐক্যের এজেন্ডা হতে পারে না। এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা হচ্ছে, আকীদাই মানুষকে এক করতে পারে। তবে যে অর্থে আকীদা সকল মুসলিমকে এক করতে পারে সেই অর্থে আকীদার অনুধাবন আমাদের আলিম সমাজ ও ইসলামপন্থীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না। উল্লেখ্য যে, "কালিমাতুন সাওয়া" হচ্ছে আকীদার ভিত্তিতে ঐক্যের কাঠামো। এই কাঠামোর আলোকেই বিশ্বনবী (সাঃ) মদীনার ইহুদী, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিক সবাইকে নিয়ে ঐক্য গড়তে পেরেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে সেটা করতে পারছেন না। এটি মূলত আকীদার ধজ্জাধারীদের আকীদার ব্যাপারে অসামাঞ্জস্য বুঝ ও ঐক্যের জ্ঞানহীনতার কুফল। প্রাথমিকভাবে ঐক্যের উদ্দেশ্য, ভিত্তি, পন্থা, ও ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনুধাবনে কিছু একাডেমিক কনফারেন্স, সেমিনার ও ওয়ার্কসপের আয়োজন হতে পারে। এ ধরণের একাডেমিক ইভেন্টগুলোর আয়োজনে কোন একাডেমিক প্রতিষ্ঠান বা প্লাটফর্ম উদ্যোগ নিতে পারে এবং অন্যদের আমন্ত্রণ করতে পারে। তবে এমন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের একাডেমিক প্রেজেন্টেশনকে নিশ্চিতকরণে একাডেমিক প্রতিষ্ঠান কিংবা একাডেমেসিয়ানের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
প্রসঙ্গতঃ দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় ইস্যুতে দ্বন্দ্ব ও সামাজিক বিশৃখলা নিয়ন্ত্রন আংশিকভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের আওতায় পড়ে। তাই মুসলিম ঐক্য বিনির্মাণে একাডেমিক উদ্যোগ গ্রহণে ধর্ম মন্ত্রণালয় অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে পারে। তবে জ্ঞান চর্চার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে শুধুমাত্র একাডেমিক প্রবন্ধ, সেমিনার, ও কনফারেন্স হতে পারে এবং এই কাজ শুধুমাত্র এক্সপার্টদের। সাধারণ পাবলিকের এখানে অংশগ্রহন অনুচিত। কারণ এটি একজন এক্সপার্ট জ্ঞান চর্চার কর্তব্য এবং স্বাধীনতার অংশ হিসেবে তাঁর ব্যক্তি পর্যায়ে করবেন, কোন ঘরনার প্রয়োজন বা উৎসাহে নয়।
পাবলিকলি সকল ঘরণার অনুসারীদের বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বক্তব্য দেয়া অনুচিত। এটি শুধুমাত্র ইলমের আসর কিংবা দারস সেশনে সীমাবদ্ধ থাকবে। এতে নিদিষ্ট কোন মাযহাব বা ঘরনার পছন্দনীয় মত শেখানো কিংবা প্র্যাক্টিস করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে নিদিষ্ট মত আলোচনার সময় এটিকে নিজস্ব ঘরনার আলিমদের পছন্দনীয় মত হিসেবে উপস্থাপণ করা বাঞ্চনীয়।
আলিম সমাজ ও ইসলামপন্থীদের আভ্যন্তরীন ঐক্য গঠন এবং নব গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের সাথে সহযোগিতায়মূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে ইসলামপন্থীদের জন্য উপরোক্ত পন্থায় ঐক্যের লক্ষ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক।
লেখক: পিএইচডি স্কলার, ইউনিভার্সিটি অব মালায়া


আরো সংবাদ



premium cement
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আসলে কী হয়েছিল? মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করুন : তথ্য উপদেষ্টা বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টায় নজর ভারতের এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট নাটোরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে যুবদল নেতাসহ গ্রেফতার ৬ বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ ভিসা সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মার্চেন্ট শিপিং ফেডারেশনের শহীদ পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ, আহতরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম

সকল