পুলিশ সদস্য মনিরুল হত্যা, কী বার্তা দেয়
- ২০ জুন ২০২৪, ০০:০০
পুলিশের গুলিতে আরেক পুলিশ খুনের ঘটনা একটি নির্মম বার্তা দেয় জাতির জন্য। ঘটনাটি ঘটে গত ৮ জুন দিবাগত রাত ১২টার দিকে। রাজধানীর ডিপ্লোম্যাটিক জোন বারিধারার ফিলিস্তিন অ্যাম্বেসির সামনে পুলিশ সদস্য মনিরুলকে উপর্যুপরি ৩৮ রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারই সহকর্মী আরেক পুলিশ সদস্য কাওছার।
এর আগে ৭ জুন খুলনার কয়রায় মোটরসাইকেল আটকের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। উভয়ের মধ্যে বাগি¦তণ্ডার জেরে একপর্যায়ে উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নিরঞ্জন রায় কয়রা সদরে খাবারের দোকানে এসআই সরদার মো: মাসুম বিল্লাহর মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে পুলিশ সদস্য মনিরুলকে খুনের ঘটনা টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। যদিও এই পুলিশ সদস্যকে হত্যায় জড়িত কাওছারকে তার পরিবার মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, পুলিশ সদস্য কাওছার মানসিক চিকিৎসার জন্য একাধিকবার পাবনার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন।
পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাত-দিন নির্ঘুম থেকে জনগণের পরম বন্ধু হয়ে দুশমন দমনে গুরুদায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অতীত ইতিহাস গৌরবের। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। পুলিশ আমাদের নাগরিকদের সেবাদাতা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে, কোনো হামলা-মামলা, খুনখারাবির মতো ঘটনা ঘটলে আমরা প্রথমে পুলিশের দ্বারস্থ হই। নিকটস্থ থানায় গিয়ে নাগরিক হিসেবে সহায়তা চাই। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আমাদের সেবায় এগিয়ে আসে সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে। পুলিশই একমাত্র জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে আইনি সহায়তা দিতে পারে; সে হিসেবে পুলিশও জনগণের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশতে পারে।
বর্তমান পুলিশের বেশির ভাগ সদস্যই অত্যন্ত দক্ষ, কর্মঠ, নীতিগতভাবে মানবিক। তবুও এর মধ্যে কিছু পুলিস সদস্য আছেন যারা বেপরোয়া। আইনের শাসন নিশ্চিতে তারা উদাসীন। হরহামেশাই অনেক পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশের ফোর্স বিভিন্ন ক্রিমিনাল অপরাধে জড়িয়েও যাচ্ছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ডিপার্টমেন্টাল শাস্তিও হচ্ছে অনেক পুলিশ সদস্যের । বর্তমান পুলিশের একটি আদর্শিক স্লোগান আছে, ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’। এই প্রতিপাদ্য বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ নিজস্ব বাহিনীর ভাবমর্যাদা ইতিবাচক রাখতে দিন-রাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আলোর পাশাপাশি আঁধার থাকে। পুলিশের পোশাক অবশ্যই পবিত্র। দেশ-মাতৃকার টানে পুলিশ জীবন বাজি রেখে কাজ করে। আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি, পুলিশ তখন জেগে থাকে আমাদেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
এটিই বাংলাদেশ পুলিশের আলো। একজনের দোষ দিয়ে পুরো বাহিনীকে বিচার করা চলে না। আবার একটি সংগঠিত বাহিনী হিসেবে কোনো একজন সদস্যের অপকর্মের দায় পুলিশ বাহিনী এড়াতেও পাড়ে না। বাংলাদেশ পুলিশে এখনো গৌরব করার মতো অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য আছেন। পুলিশের কাজে স্বাধীনতা দিতে হবে, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দলের দ্বারা প্রভাবিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গোটা দুনিয়ার কথা না হয় না-ই বললাম। জানামতে, প্রতিবেশী ভারতের পুলিশ বাহিনীকে কখনো রাজনৈতিক নেতারা কোনো বিষয়ে প্রভাবিত করেন না। প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কাজের স্বাধীনতা পায়, কেউ প্রভাবিত না করে তাহলে এর ফলাফল ভালো হবে। এ বিষয়ে আইনপ্রণেতাদের যুগোপযোগী ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।
পুলিশও মানুষই। আমরা যেমন বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে চাপে থাকি, পুলিশও খুব চাপে থাকে। তাই পুলিশকে নির্বিঘে্ণ চাপমুক্ত, ভারমুক্ত করে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল, তাদের পরিবারের পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে।
দ্বিতীয় কথা হলো, একসাথে কাজ করতে গিয়ে সহকর্মীদের সাথে মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। তাই বলে সেটি বড় কোনো অঘটনের সুযোগ তৈরি করলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এসব বিষয়াদি ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে। সেই সাথে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ে গুরুত্বসহকারে মনিটরিং করা দরকার।
সবশেষে বলতে চাই, জনগণের শত্রু হয়ে নয়, পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করতে হবে। জনমনে আস্থা তৈরি করার জন্য পুলিশ ও জনগণের মধ্যে ভাতৃত্ববোধের সম্পর্ক তৈরি হোক, এই প্রত্যাশা।
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা