বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরবির ভূমিকা
- প্রকৌশলী তামজিদুর রহমান
- ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০
বিশ্বের প্রায় সব দেশ নিজেদের ভাষার পর দ্বিতীয়, তৃতীয় এমনকি প্রয়োজনবোধে চতুর্থ ভাষাও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অনেক দেশ ইংরেজিকে তাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এটি ইংরেজ জাতির কৃতিত্ব। ইংরেজরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের টিভি চ্যানেল ‘ইউরো নিউজ’ এখনো ইংরেজিতেই প্রচারিত হচ্ছে। কারণ ইউরোপীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য আর কোনো ভাষা নেই। তারপর গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করে ফরাসি ও জার্মান ভাষাকে রেখেছে। এটি নির্ভর করছে দেশগুলোর সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামরিক প্রভাবের উপর। এ ধারা চলে আসছে এশিয়া, আফ্রিকা তথা সারা বিশ্বে।
সিয়েরা লিওন একমাত্র দেশ যার অধিবাসীরা শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সৈনিকদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
একসময় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল যুক্তরাজ্য যেখানে সূর্য কখনো অস্ত যেত না। অর্থাৎ সা¤্রাজ্যের কোনো না কোনো জায়গায় আকাশে সূর্য থাকতই। সে সা¤্রাজ্য ছোট হতে হতে এখন যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ডে থাকা স্কটল্যান্ডও বের হওয়ার জন্য একপায়ে খাড়া।
আমাদের প্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা, যা রক্ত দিয়ে অর্জিত ভাষা। ভাষার জন্য বোধহয় পৃথিবীর আর কোনো জাতিকে এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি। এর মধ্যে দিয়েই মূলত বীজ বপন করা হয়েছিল চূড়ান্ত স্বাধীনতার।
ইংরেজরা ২০০ বছর শাসন করেছে বলে উত্তরাধিকার সূত্রে ইংরেজি আমাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের তৃতীয় রাষ্ট্রভাষা কী হবে এবং এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
ওমান থেকে মরক্কো, সুদান থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বিশাল ভূখণ্ডের অধিবাসী সবাই আরবি ভাষাভাষী। এই বিশাল ভূখণ্ডে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী কাজ করছে। আমাদের এই বিশাল জনশক্তি এ দেশগুলোতে কর্মরত থেকে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে মুদ্রাভাণ্ডার পুষ্ট করছেন।
এসব কর্মজীবী বাংলাদেশী আরবি ভাষা শেখার কোনো সুযোগ পায়নি। ভাষাজ্ঞানের অভাবে তাদের নিত্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারা মনিবের আদেশ-নিষেধ সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। নিজের সীমাবদ্ধতার কথা মনিবকে বুঝাতে পারছে না। এমনকি নিজের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়েও দরকষাকষি করতে পারছে না। ফলে একতরফাভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে তাদের।
দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের একটি বিভাজন আছে। ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন একজন শ্রমিককে দক্ষ ধরা হয় এবং তাদের বেতনও হয় বেশি।
আরবি ভাষাজ্ঞানের অভাবে বাংলাদেশী শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যের দাফতরিক সেক্টরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে তা দখল করে আছে ফিলিপাইন, ভারত ও শ্রীলঙ্কার লোকেরা। অন্যদিকে, আরবি ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা না থাকার কারণে উত্তপ্ত মরুভূমিতে বাংলাদেশের শ্রমিকরা আউটডোর ডিউটি করতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক অমুসলিম কর্মজীবীও মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত আছে। সুতরাং আরবি ভাষায় যদি আমাদের দেশের শ্রমিকরা যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারে তাহলে তারাও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দাফতরিক সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবে এবং আর্থিকভাবে হবে সচ্ছল ও তাদের চাকরি হবে টেকসই।
অন্যদিকে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতির মুক্তির জন্য পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। মহান রবের সন্তুষ্টি ও পরকালে বেহেশত লাভের জন্য কুরআন বুঝে পড়া এবং সেই মোতাবেক আমল করার কোনো বিকল্প নেই। অথচ পবিত্র কুরআন না বুঝে পড়ার কারণে ৯০ শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কুরআনের প্রদর্শিত পথ খুঁজে না পেয়ে অজ্ঞতার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর একমাত্র কারণ, আরবি ভাষাজ্ঞানের অভাব।
কুরআনের সঠিক মর্ম উদ্ধার এবং এর উচ্চারণ পৃথিবীর আর কোনো ভাষাতেই সম্ভব নয়। কাজেই উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে আরবিকে তৃতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া উচিত। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরবিকে বাধ্যতামূলক করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ রইল।
লেখক : প্রকৌশলী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা