১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসরাইলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী

-

তৃতীয় ও শেষ কিস্তি

বর্তমানে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে আমরা কি একজন হামাস যোদ্ধাকেও বন্দী হতে দেখেছি? না। নিজেদের কোনো বন্দীকে যুদ্ধ করে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে ইসরাইল? না। ইসরাইলিরা কোনো হামাস কমান্ড সেন্টারে হানা দিতে পেরেছে? না। সমুদ্রের পানি পাম্প করে হামাসের টানেল ভাসিয়ে দিয়ে তাদের ধরে ফেলবে- এমন কত গালগল্প বলেছে ইসরাইল! হিজবুল্লাহ নিয়মিত মিসাইল ছুড়ছে, ইসরাইলের সামরিক সামর্থ্য ও সুযোগ থাকলে সেখানে ট্যাঙ্ক এপিসি নিয়ে ঢুকে পড়ত, কিন্তু সে সামর্থ্য যে নেই, এটি নিশ্চিত বোঝা যায়; বরং আমরা ইরানি প্রক্সিদের ক্রমাগত শক্তি অর্জন করতে দেখেছি। হুতিরা বাব-আল-মান্দেব প্রণালিসহ পুরো লোহিত সাগরে ইসরাইলি এবং আমেরিকা ও পশ্চিমা জাহাজ চলাচল কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। হুতিরা গত পাঁচ মাসে তিনটি আমেরিকান এমকিউ-৯ রেকি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে, এতে পশ্চিমা প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নের মুখে। ইরাক ও লেবানন থেকে ইসলামিক রেসিস্ট্যান্স ক্রমে আক্রমণে অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছে। এমনকি, বাহরাইনি রেবেলরাও আক্রমণে যোগ দিচ্ছে। ইসরাইল একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র, ছোট এর জনবল, বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের পরেও সামরিক বাহিনী বড় নয়। এরা বেশির ভাগ আধাসামরিক বাহিনী, রয়েছে পেশাদারিত্বের অভাব। এদের শৃঙ্খলার মান নিয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অনেকে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে হলিডে মুডে আইডিএফে যোগ দিতে আসে। তারা সম্মুখ সমরে ব্যাটেল-হার্ডেন্ড হামাস বা হিজবুল্লøাহর সাথে তুলনীয় নয়। বর্তমান অতি বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে হলিডে মুডে আইডিএফে যোগ দিতে আসা ইউরোপীয় জায়নিস্টদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে ।

সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে গত পয়লা এপ্রিল বিমান হামলা চালিয়ে একজন ইরানি জেনারেলসহ আটজনকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলে ইরানের তিন শতাধিক ড্রোন-মিসাইল হামলা ও ইসরাইলের পাল্টা হামলার বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ইসরাইলে হামলা চালানো হবে বলে ৭২ ঘণ্টা আগে প্রতিবেশী সব দেশকে জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইসরাইলের দাবি, ইরানের ৯৯ শতাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে তেল আবিব। ইসরাইলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে মাঝারি পাল্লার ডেভিডস শিলিং এবং দূরপাল্লার অ্যারো অ্যারিয়েল ডিফেন্স সিস্টেম। ইসরাইল ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জর্দান মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের ঘাঁটি থেকে ইরানি এ আক্রমণ ঠেকাতে একযোগে কাজ করে। সৌদি আরব ও ইউএই গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে পরোক্ষ সহায়তা করে। পরবর্তীতে ইসরাইল ইরানের মধ্যাঞ্চলের শহর ইসফাহানে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, এতে বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায়নি।

দৃশ্যত ইরানের এবং পরবর্তিতে ইসরাইলি পাল্টা হামলা ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতীয়মান। তবে এর কিছু দীর্ঘমেয়াদি ফল আছে, আমরা সেসব নিরূপণ করব। ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের পণ্ডিতরা এই হামলার প্রভাবের বিষয়ে যেসব মতামত দিয়েছেন, সেগুলোর কিছুসহ এখানে আলোকপাত করা হলো। প্রথমত, এই প্রথম ইরান সরাসরি ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল দু’টি- ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটি। ড্রোন এবং ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইলের জটিল সমন্বয়ে ইরানের আক্রমণটি ছিল বড় আকারের। ইরানি নেতারা ইসরাইলে সরাসরি আক্রমণের বিষয়ে যে মনস্তাত্বিক বাধা অতিক্রম করেছেন, তা ইসরাইল তথা তার মিত্রদের নিরাপত্তার ধারণা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; যার ফলে ভবিষ্যতে বেপরোয়া কার্যক্রম চালানোর আগে দু’বার ভাবতে হবে। যেকোনো সঙ্ঘাতে ইসরাইলের ডকট্রিন, এসকেলেশন বা তীব্র সহিংসতা ঘটিয়ে শত্রুর মধ্যে এমন আতঙ্ক তৈরি করা, যেন ভবিষ্যতে কোনো সঙ্ঘাতে যেতে ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে বারবার চিন্তা করে। ইরানের হামলার জবাবে ইসরাইল কোনো এসকেলেশনে যেতে চায়নি। নিতান্ত মুখরায় নিরীহ পাল্টা আক্রমণ করেছে। একই বিষয় আমরা লক্ষ করছি হিজবুল্লাহর সাথেও সঙ্ঘাতের বিষয়ে ইসরাইল হম্বিতম্বি করে সীমান্ত সঙ্ঘাতে বরং পিছিয়ে পড়েছে। এই প্রথমবারের মতো এসকেলেশন ডকট্রিন কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইল। উল্টো এসকেলেশনে ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে প্রতিপক্ষ, যেমন হুতিরা বাব-আল-মান্দেব প্রণালি বন্ধ করে দেয়া, ইউএস বেসে অ্যাটাক করে সৈন্য হত্যা করেছে ইসলামিক রেসিস্ট্যান্স। এটি একটি পরিবর্তিত বাস্তবতার বার্তা দিচ্ছে-ইসরাইল ও তার সহযোগীদের জন্য বার্তাটি নেগেটিভ, অন্য দিকে ইরান ও তার প্রক্সি দেয়ার জন্য পজিটিভ বার্তা। ভবিষ্যৎ সঙ্ঘাতের গতিপথ নির্ধারণ করবে এটি।

দ্বিতীয়ত, ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা কৌশলের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিল যা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আইডিএফকে ২০২১ থেকে এ সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে দায়িত্বভুক্ত করা হয়। এ কৌশলের উদ্দেশ্য হলো- যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পক্ষে আরব দেশগুলো আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে কাজ করবে। এই প্রথমবার জর্দান পশ্চিমা মিত্রদের সাথে যোগ দিয়ে তার ভূখণ্ড অতিক্রমকারী ড্রোনের একটি ঝাঁক আটকে দিয়েছে। অন্য আরব রাষ্ট্রগুলো গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে। অন্য দিকে, ইরাকি বাহিনী যেমন কোনো ইরানি ড্রোনে গুলি করেনি, তেমনি নিজেদের ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধাও দেয়নি। এতে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কিছু আরব দেশের অংশগ্রহণে শত্রু-মিত্র স্পষ্ট করেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যেমন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এ পরীক্ষিত মিত্রদের আস্থায় নিতে পারবে, ইরান ও তার প্রক্সিরাও চিহ্নিত শত্রুদের অংশগ্রহণ বিবেচনায় নিয়ে সঙ্ঘাতের ছক সাজাবে। সেন্টকমের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কৌশল কাজ করছে বলে মনে হলেও মনে রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্যের এসব পদলেহী নেতৃত্বের জনসমর্থন নেই, জনগণ এ কৌশলের বিপক্ষে। কোনো ব্যাপকমাত্রার সঙ্ঘাত যদি গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, তবে তারা টিকবে না, একই সাথে আব্রাহাম অ্যাকর্ড ও সেন্টকমের নিরাপত্তা কৌশলও ধসে পড়বে। এমনকি অন্য কোনো ভিন্ন পরিস্থিতিতেও এসব পদলেহী নেতৃত্ব ইউএস-ইসরাইলের বিরুদ্ধে যেতে পারে অথবা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে পারে।

তৃতীয়ত, ইসরাইলের তিন-স্তরের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে সফল ছিল। অর্থাৎ ইরানের হামলা ব্যর্থ হয়েছে। ইসরাইল প্রকাশ্যে ৯৯ শতাংশ ড্রোন-মিসাইল গুলি করার দাবি করলেও ইসরাইলি মিডিয়া ওয়াইনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ছোড়া ১২০টি ব্যালিস্টিক মিসাইলের অর্ধেক ব্যর্থ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৯টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নেভাটিম বিমান ঘাঁটিসহ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। কিন্তু কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক এটিকে ইরানের প্রতীকী হামলা বলে মত দিয়েছেন। ইরান জটিলভাবে এ হামলা সাজিয়েছে ব্যর্থ হওয়ার জন্য, এ লক্ষ্যে ধীরগতির ড্রোন দিয়ে হামলা শুরু করে। মিসাইলগুলোও ছিল সাবেকি, এমনকি অনেকগুলো শেলফলাইফ পার হওয়া। কারণ তেহরান সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না, কিন্তু সামর্থ্যরে প্রমাণ দিতে চায়। ইসরাইলে সরাসরি হামলার মনস্তাত্ত্বিক বাধায় ইরান আগেভাগে জানিয়ে আকস্মিকতা বিসর্জন দিয়ে শত্রুকে প্রস্তুত হতে দিয়েছে; যাতে বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনা এড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, পাল্টা হামলা যাতে জোরালো না হয়। বাস্তবে হয়েছে-ও তাই। ইরানের ইসফাহানে একটি দায়সারা মিসাইল হামলা চালায় তেলআবিব। ইসরাইলি শহরগুলো লক্ষ্য করে পূর্ণমাত্রায় হামলা হতে পারে- এ বার্তা দিতে পেরেছে ইরান। এটি অনুমেয়, ভবিষ্যতে কোনো ইরানি হামলার মাত্রা ও কার্যকারিতা হবে ভয়াবহ। হবে বেশি নিষ্পত্তিমূলক।
আলজাজিরার সাংবাদিককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানসমর্থিত ইরাকি সশস্ত্র গ্রুপ কাতাইব সাইয়্যিদ আল-শুহাদার (কেএসএস) সেক্রেটারি জেনারেল আবু আলা আল-ওয়ালাইয়ের দাবি, তাদের হিসাব অনুযায়ী ইরানি হামলার ২০ শতাংশ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ইরাকি আকাশসীমায় ড্রোনসহ ‘সব শত্রু বিমানের’ ফ্লাইট পথের একটি মাল্টিকালার প্রিন্টআউট সাংবাদিককে দেখিয়েছেন। আলজাজিরা দাবিটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি, তবে তথ্যটি সম্ভবত ইরানি লিঙ্কের মাধ্যমে পেয়েছে। এটি সত্যি হয়ে থাকলে অনুমেয়, ইরান এ হামলাকে একটি প্রোবিং অ্যাটাক হিসেবে নিয়ে শত্রুর গতিবিধি চিহ্নিত করেছে, যা গোয়েন্দা তথ্য জোগাড়ে ও পরবর্তী অপারেশন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এর উদ্দেশ্য ছিল সঙ্ঘাতকে সরাসরি ইরান এবং তার আঞ্চলিক প্রক্সিদের কাছে নিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে শামিল করা। তা সফল হয়নি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখা যেতে পারে, ইসরাইলের এ ধরনের বেপরোয়া পদক্ষেপ পরবর্তী প্রজন্মের মার্কিন নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি কৌশলগত দায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ও একাডেমিশিয়ানদের মধ্যে সাম্প্রতিক ইরসাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।
উপরের আলোচনায় আমরা দেখলাম, পরিবর্তিত পরিস্থিতি ক্রমে ইসরাইলের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। ইসরাইল এ পর্যন্ত গাজায় বোমারু বিমান দিয়ে আকাশ থেকে বোমা ফেলে নারী-শিশু হত্যা করা এবং নির্বিচারে স্থাপনা ও অবকাঠামো ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে ক্রোধ মিটিয়েছে বটে, কিন্তু যুদ্ধের একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি; বরং প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর গাজা স্ট্র্যাটেজি বলতে কিছু নেই বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের বাকযুদ্ধ মিডিয়ায় খবর হয়েছে। অন্য দিকে হামাস, হিজবুল্লাহ, ইসলামিক রেসিস্ট্যান্স ক্রমে সাফল্যের সাথে ইসরাইলকে ঘায়েল করছে। এবারের যুদ্ধে বা নিকট ভবিষ্যতে এ যুদ্ধ ইসরাইলের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়লে বা পড়ার উপক্রম হলে কী হতে পারে? যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্ব গাজায় জাতিসঙ্ঘ মিশন চালু করে পরোক্ষ নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিতে পারে। ইসরাইলকে নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে উদ্ধার করতে পারে, এমন পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে মিডিয়ায় এসেছে। এর আগে আরেকটি তৎপরতা দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টকম গাজার উপকূলে একটি ভাসমান পিয়ার বা ডক বসিয়েছে, যা মানবিক সহায়তা দিতে বলা হলেও ইসরাইলকে প্রয়োজনে সরাসরি সামরিক সহায়তার উদ্দেশ্যে বুঝতে কারো বাকি নেই। সরাসরি সামরিক সাহায্যে যাওয়াও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব কঠিন হবে। ইতোপূর্বে আফগানিস্তান ও ইরাকের অভিজ্ঞতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বড়জোর বোম্বিং ও রেকি সাপোর্ট দেবে, মাটিতে বুট ফেলার মতো বোকামি করবে না। এসব করে জাতিসঙ্ঘ বা পশ্চিমা সামরিক সহায়তায় ইসরাইলকে শুধু কিছু বেশি সময় টিকিয়ে রাখা যাবে মাত্র। ইসরাইল পরাজিত হওয়ার অর্থ দেশটির সার্বভৌমত্ব মুছে যাওয়া, তেলআবিবের স্ট্র্যাটেজিক গভীরতা না থাকায় হয় তা জোর করে সিনাই বা জর্দানে ঢুকে পড়ে কিছু বেশি সময় লড়াই চালাবে, কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হবে না।

এসবের বাইরে সবচেয়ে খারাপ যা ঘটতে পারে তা হলো, গাজায় ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার মিসাইল মেরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। ২০২৩ সালের গত নভেম্বরে ইসরাইলের চরমপন্থী এক জায়নিস্ট মন্ত্রী বলেছিলেন, গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের অন্যতম বিকল্প হলো স্ট্রিপে পারমাণবিক বোমা ফেলা। মার্চ ২০২৪-এ এসে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও একই কথা বলেন। বোঝা যাচ্ছে, এটি একটি অন্যতম এবং সম্ভবত সর্বশেষ বিকল্প। তবে এ বিকল্পে যাওয়া খুব সহজ হবে না। তেমন পরিস্থিতিতে ইরান, মিসর, লেবানন, সিরিয়া এমনকি জর্দানের সাথে সঙ্ঘাতে যেতে হবে, পাশাপাশি তুরস্ক ও উপসাগরীর দেশগুলোর সাথে গুরুতর কূটনৈতিক বিরোধের সম্মুখীন হতে হবে। একই রকম তীব্র প্রতিক্রিয়া আসবে রাশিয়া ও চীন থেকে। তাতে বিশ্বব্যাপী এক নিউক্লিয়ার প্যানিক পরিস্থিতি তৈরি হবে। প্রতিক্রিয়াগুলো সরাসরি বা পরোক্ষ সামরিক সহায়তা হয়ে আসতে পারে। ইসরাইলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ততটুকু ঝুঁকি নেয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
হলেখক : অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement