০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

শ্রমিকের অধিকার; শ্রমের মর্যাদা

-


১৯ শতক বর্তমান যুগসভ্যতার ইতিহাসে সৃষ্টির গৌরবে সমুজ্জ্বল। এক দিকে শিল্পবিপ্লব যেমন মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জীবনধারা বদলে দেয়; তেমনি মানুষের ভেতর অর্থনৈতিক বৈষম্য শতদলে ডানা মেলতে থাকে। বণিক এবং শ্রমিক সঙ্ঘাতও এ সময় অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিকাশ লাভ করে। পরিণতিতে ১৮৮৬ সালের ৪ মে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে-শ্রমিক পুলিশ সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হওয়ায় শ্রমিক আন্দোলন আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ১৯১৯ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের অবসানে লিগ অব ন্যাশন্সের আওতায় গঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন আইএলও (ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন)। শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে একটি সর্বগ্রহণযোগ্য শ্রম নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশে এ প্রতিষ্ঠান ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে শ্রম নীতিমালা তৈরি করলেও তা সর্বগ্রহণযোগ্য হয়নি।
শ্রমিকের রক্তে বারবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে- শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম প্রয়োজন-সাপেক্ষে মজুরি কাঠামো পাননি, পাননি তাদের ন্যায্য অধিকার। আজো দেশে দেশে হাড়ভাঙা খাটুনির পরও শ্রমিকরা জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে পারছেন না। মালিকপক্ষ-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মালিকপক্ষের লেঠেল বাহিনীর অত্যাচারে শ্রমিক অধিকার অধরা রয়ে গেছে। অপর দিকে, মালিকরা দিন দিন বিত্তের পাহাড় গড়েছেন। পৃথিবীর সর্বত্র একই চিত্র দেখা যায়। শ্রমিকরা তাদের পাওনা মজুরি চাইতে গেলে শিল্পকারখানা লকআউট হয়ে যায়। শ্রমিকরা চাকরি হারিয়ে পথে বসেন, ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকারে ঢেকে যায়।

৪ মের পরিবর্তে ১ মে পালিত হচ্ছে মে দিবস অত্যন্ত ঘটা করে। অনেক সভা, আলোচনা সভা, মিছিল, প্ল্যাকার্ডে রঙিন আবহে পালিত হয়ে আসছে এদিন শত বছরেরও বেশি সময় ধরে। প্রতিবার শ্রমিকরা আশায় বুক বাঁধেন- এবার বুঝি সুদিন ফিরবে। বেঁচে থাকার মতো একটি বেতন কাঠামোর সামাজিক মর্যাদা এবং সম্মান নিয়ে বাঁচার স্বপ্নের নাগাল না পেয়ে হতাশায় মাথা কোটেন। শ্রমিকের অধিকার, শ্রমের মর্যাদার ব্যাপারে সমাজের বৈষম্য দিন দিন বেড়ে চলেছে। কারণ, যারা শ্রমনীতি তৈরি করেন তারা কেউ শ্রমিক নন। শ্রমিকের কষ্ট কিংবা হাহাকার, মর্যাদা বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই।
পক্ষান্তরে আল্লাহ সৃষ্টির সূচনা থেকে যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন দু-একজন ছাড়া সবাই ছিলেন রাখাল, কৃষক, কর্মকার, কাঠমিস্ত্রি। তারা শ্রমের মর্যাদা বুঝতেন এবং শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা: নিজেও প্রথম জীবনে ছিলেন রাখাল। শ্রমিকদের মর্যাদা, শ্রমের মর্যাদা-শ্রমের মূল্যায়নের ব্যাপারে এসব নবী ও রাসূল নিজেরা উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা শ্রমিকের অধিকার-তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। নবী মুহাম্মদ সা: ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা যা খাবে, যা পরবে, তাদেরও তা খাওয়াবে এবং পরাবে।’ ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগে তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও’ কেবল নবী করিম সা:-এর এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে শ্রমিক অসন্তোষ থাকার কথা নয়। ‘তোমাদের সবাইকে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ পরকালীন জবাবদিহির এ উপলব্ধি নিঃসন্দেহে শ্রম নীতিমালার আদর্শ হতে পারে। নবী করিম সা:-এর অন্তিম নির্দেশনা- ‘তোমরা সালাতের হিফাজত করবে এবং তোমাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে খেয়াল রাখবে’ শ্রমিকদের ব্যাপারে ইসলামের মৌলনীতির এক উজ্জ্বল চেতনা। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা: জেরুসালেম সফরের সময় ভৃত্যের সাথে উটের পিঠে ওঠা ভাগাভাগি করে নেয়ার ঘটনা শ্রমিকের মর্যাদা এবং অধিকার যেমন ফুটে ওঠে; তেমনি মালিক ও অধস্তনের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে ইসলামের নীতিমালার বাস্তবতাও ফুটে ওঠে।

এসব শিক্ষা এবং ঐতিহ্য দেড় হাজার বছর আগে মানবসভ্যতার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে আধুনিক সভ্যতা যে পথে এগোচ্ছে তা সঙ্ঘাতের এবং বৈষম্যের। কেবল পাশ্চাত্য নয়- মুসলিম নেতারাও নিজ ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে ঘুরপাক খাচ্ছেন।
শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা-পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাসূল সা:-এর নির্দেশিত নীতিমালা অনুসরণ করা ছাড়া সুবিচার ও সহানুভূতির সাথে শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করা দূরপরাহত। বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা ও অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে উপরোল্লিখিত আদর্শের আদলে সুবিচার, শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার এবং শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ওআইসি আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিকল্প শ্রমনীতি হিসেবে মানবসভ্যতাকে দেখাতে পারে নতুন আশার আলো।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
[email protected]

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাসদস্যদের প্রস্তুত রাখতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা খাদ্যগুদাম তৈরিতে পরামর্শক খরচই ২৯০ কোটি টাকা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৪ মামলা বাতিলের রায় বহাল সফটওয়ার শিল্পে কর্মসংস্থান ও বিদেশী মুদ্রা হারানোর শঙ্কা তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন : সালাহউদ্দিন বাধ্যতামূলক ছুটি ৬ ব্যাংকের এমডিকে ভয়ঙ্কর রূপে তালিকাভুক্ত ৯৭৯ ছিনতাইকারী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ সেন্টমার্টিন রক্ষায় বিশ্বমানের উদ্যোগ আরামকোর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে স্বাগত জানানো হয়নি : সৌদি রাষ্ট্রদূত

সকল