২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অশনিসঙ্কেত

-

একটি রাষ্ট্র মৌলিকভাবে ত্রিমাত্রিক হয়ে থাকে। এই তিনটি বাহুর সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় কোনো রাষ্ট্র বা দেশ এগিয়ে চলে। এই তিনটি মৌলিক কাঠামোর কেন্দ্রে রয়েছে সরকার। সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনার জন্য সরকারকে সহায়তা দান করে দিকনির্দেশনা দেয় স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত একটি সংসদ। রাষ্ট্র যে কাঠামোর মধ্যেই হোক না কেন, সরকার এবং সংসদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং শাসনতান্ত্রিকভাবে মুক্ত বিচার বিভাগ। দেশের শাসনতান্ত্রিক বিধান কোথাও লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা বিচার বিভাগ তা পর্যবেক্ষণ করে পরামর্শ দিতে পারে সরকার এবং সংসদ উভয়কেই। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ শাসনতন্ত্রের রক্ষক। এজন্য পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই বিচার বিভাগকে বিবেচনা করা হয় দেশ ও জাতির আশ্রয়স্থল হিসেবে। এই স্বাতন্ত্র্য এবং নিরপেক্ষতার কারণেই বিচার বিভাগ পৃথিবীর সব দেশেই শ্রদ্ধার জায়গা, সম্মানের ক্ষেত্র। বিচার বিভাগ ও বিচারক স্বতন্ত্র মর্যাদায় অভিষিক্ত সব দেশেই। সর্বোচ্চ আদালত, বিচারপতিগণ এবং প্রধান বিচারপতি বিশেষ মর্যাদা ভোগ করেন। তাদের এই মর্যাদা শাসনতান্ত্রিকভাবে সুরক্ষিত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ সবরকম রাজনৈতিক এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত। বিচার বিভাগের এই স্বাধীনতা ও মর্যাদা শাসনতান্ত্রিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়।

বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের ২০২০ সালের জুলাই মাসের প্রজ্ঞাপনে প্রধান বিচারপতির পদানুক্রম নির্ধারণ করে তৃতীয় স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্পিকার ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পদানুক্রম হিসাবে রাষ্ট্রের তৃতীয় প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন তিনজন। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন যথাক্রমে রাষ্ট্রের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি। সুপ্রিম কোর্টের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রাজ্ঞ এবং বিজ্ঞ বিচারককে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সব বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা রক্ষা করা তার প্রধান কাজ। এর বাইরে তিনি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। অধস্তন আদালতের বিচারকদের কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান তার ওপর ন্যস্ত। তিনি আপিল বিভাগের আদালতের প্রধান বিচারপতিও বটে। দেশের শাসনতন্ত্রের অধীনে বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যাও তিনি দিয়ে থাকেন। তাকে বলা হয়ে থাকে শাসনতন্ত্রের রক্ষক। সারা দেশের বিচারব্যবস্থার প্রধানতম পুরুষ তিনি।

পৃথিবীর সব দেশে প্রধান বিচারপতিকে দেখা হয় সুবিচারের আস্থাভাজন কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে। এদিক থেকে তিনি ন্যায়ের প্রতীক। সাধারণ জনগণের আস্থার কেন্দ্রস্থল। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দল-মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের জনগণের শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। তার কর্মক্ষেত্র, অফিস, বাসস্থান; সব কিছুই সম্মান, পবিত্রতা ও শ্রদ্ধার। তিনি যেকোনো রাজনীতির ঊর্ধ্বে। এ জন্যই তিনি সবার বিবাদ মীমাংসার আস্থার ক্ষেত্র। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থায় প্রধান বিচারপতির ভূমিকা দেশবাসী এর আগে দেখেছে একবার নয়; বারবার।
এহেন মর্যাদার পদ, পদবি, কর্মক্ষেত্র, কার্যালয় এবং বাসস্থানের প্রতি সবসময়ই জনগণ থেকেছে শ্রদ্ধাশীল। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশসহ পৃথিবীর সব দেশেই। দুঃখজনক হলো এমন একটি শ্রদ্ধার জায়গাকে আমাদের দেশে বারবার বিতর্কিত করা হয়েছে, অসম্মান করা হয়েছে। যারা এসব করেছেন তাদের কোনো বিচার হয়নি। উপরন্তু পরবর্তী সময় এদের অনেকে আবার পুরস্কৃতও হয়েছেন। এরকম নজির পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আছে কিনা আমার জানা নেই। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর একটি বেদনাহত ঘটনা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং অন্যান্য বিচারকদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। যারাই এবং যে উদ্দেশ্যে এটা করে থাকুক না কেন তারা দেশের বিচারালয়, বিচারপতি, শ্রদ্ধা এবং সম্মানের জায়গাকে কলুষিত করেছেন। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। দেশের জনগণের আশ্রয় ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দুর নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হওয়া মানেই একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া। এ ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সবারই প্রতিবাদমুখর হওয়া প্রয়োজন।
রাষ্ট্রের পদক্রমানুসারে তৃতীয় ব্যক্তি, যিনি দেশ জাতি ও সংবিধানের অভিভাবক, তার বাসভবনে এরকম নগ্ন হামলা বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তিরাই করতে পারে। যারা করেছেন তারা এটা প্রমাণ করেছেন পুলিশকে তারা থোড়াই পরোয়া করেন। তাদের নাকের ডগার ওপর দিয়ে এরকম নারকীয় তাণ্ডব ঘটে গেল পুলিশ তাদের একজনকেও গ্রেফতার করতে পারল না। ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের ধরার কথা, এখন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। অথচ মাটির নিচে লুকিয়ে থাকলেও পুলিশ অসামান্য দক্ষতায় এদের গ্রেফতার করে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ বহুবার দিয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা পুলিশের যোগ্যতার প্রতিও একটি চ্যালেঞ্জ। এসব তস্করকে আইনের হাতে সোপর্দ করা এখন সময়ের দাবি। প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিদের আবাসস্থলের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা না গেলে গোটা বিচারব্যবস্থাই হুমকির মুখে পড়বে। এ ব্যাপারে দুষ্কৃতকারীদের আইনের হাতে তুলে দেয়াটা অত্যন্ত জরুরি। দেশবাসী আশা করে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে কারা এটা করেছে, কেন করেছে, কাদের প্ররোচনায় করেছে তার সঠিক তথ্য উদঘাটিত হবে এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। নেপথ্যের সঠিক তথ্য উদঘাটন করতে না পারলে সামনে আরো বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email-shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল