০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জিলহজ ১৪৪৫
`
তৃতীয় নয়ন

ডেঙ্গু মহামারী

-

ডেঙ্গু স্প্যারিশ ভাষার একটি শব্দ। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে ডেঙ্গু না বলে ‘ডেঙ্গি’ বলা হলেও এর তীব্রতা বা প্রচণ্ডতা কমে না। ডেঙ্গু কোনো সাধারণ জ্বর নয়। কোনো কোনো সিনিয়র সাংবাদিক এতে এবার আক্রান্ত বলে ভয় আরো বেশি। ডেঙ্গু দুই রকম : এক ধরনের ডেঙ্গুতে মারাত্মক বিপদ ঘটে না; আর এক ধরনের ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ হয়, দুই চোখ লাল হয়ে থাকে; ভয়ের কারণ এটাই।
ডেঙ্গুতে মাত্র ৯ দিনে এ দেশে ১০৯ জন মারা গেছে। ছোট বেলায় পড়তাম, মশা তিন রকম এনোফেলিস, কিউলেক্স ও স্টেগোমিয়া। এনোফেলিস থেকে ম্যালেরিয়া হয় যা সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকে পড়ে। এক সময়ে ‘ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি চালু ছিল। পরে তা অবলুপ্ত করা হয়। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। এতে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতেন। কিউলেক্স গোদ রোগের কারণ। এটা উত্তরবঙ্গে ভয়ের একটি প্রধান হেতু। গোদ রোগকে ইংরেজিতে ঊষবঢ়যধহঃরধংরং বলে। কারণ, গোদ রোগ হলে শরীরের একটি অঙ্গ খুব বড় হয়ে যায়। এটি সংক্রামক ব্যাধি। ম্যালেরিয়া আবার আমাদের সীমান্ত অঞ্চলে দেখা দিয়েছে। হয়তো এনোফেলিস মশা সীমান্তের ওপার থেকে আসছে এবং ‘ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি’ চালু হতে পারে আবার। কিন্তু স্টেগোমিয়ার কাজ কী, এ কথা বলা হয় না। এখন ‘ডেঙ্গু মিয়া’র ভীষণ উপদ্রব শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু মশা দুই রকম, গ্রামে ও শহরে ভিন্ন রকম। ডেঙ্গু রোগ ছড়ায় যে মশা তারা পরিষ্কার পানিতে বাস করে। এরা দেখতে সুন্দর। সকালে সূর্য উঠার পরেও ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যায় ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা আগে থেকে ওদের তৎপরতা থাকে। এ জন্য ডাক্তাররা মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনেও সবাইকে মশারি ব্যবহার করতে বলেন। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘মশা আগে কমাতে হবে, মশা না কমালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।’ অপর দিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়রই বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য দায়ী, তাদেরকে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের জনগণের জন্য দরদ নেই। কারণ তারা অনির্বাচিত, গণবিরোধী এবং অমানবিক।’
আসলে আমরা করোনা মহামারী থেকে কিছুই শিখিনি। মনে করেছি, হয়তো ওইটাই শেষ মহামারী। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা মহামারীর চেয়েও ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এবং বলেছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে বিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে কতজন মারা গেছে এবং কতজন আক্রান্ত, হাসপাতালগুলোতে কতটি সিট আছে, তার মধ্যে কতটি ডেঙ্গু রোগীর জন্য বরাদ্দ, এর কোনো পরিসংখ্যানই সরকারের কাছে নেই বলে বিরোধী দল দাবি করেছে। তার সাথে এ নিয়ে নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ।
ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু কমছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় মারা গেছেন পাঁচজন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরো ২ হাজার ৭৪৮ জন বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এ মাসের প্রথম ৯ দিনেই মারা গেছেন ১২৩ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৭১৬ জন, যা রেকর্ড।

এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ২২৬ জন। ৭৯ হাজারের বেশি ঢাকার বাইরে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে দেখা যায়, আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকার বাইরে বেশি হলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি ঢাকায়। ঢাকায় মারা গেছেন ৫১৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ২০৩ জন।
সরকারের তথ্য নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশই পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ নারী। নারী মারা যান ৪১৮ জন এবং পুরুষ ২৯৮ জন।
৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা বেশি মারা যাচ্ছেন, যা মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। অন্য দিকে, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। মোট আক্রান্তের ৪১ শতাংশ এই বয়সীরা।
ডেঙ্গু রোগীরা অনেক রোগী দেরিতে এবং অবস্থা জটিল হওয়ার পরই হাসপাতালে আসছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যালোচনা বলছে, ৫৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই।
জনস্বাস্থ্যবিদরা আশঙ্কা করছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর বর্তমান ধারা আরো কিছু দিন একই থাকবে। আর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা না কমলে মৃত্যুও কমবে না।

ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এখন মৃত্যুর হারও বেড়ে যাচ্ছে ঢাকার বাইরে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ব্যাপক সংক্রমণের কারণেই সেখানে মৃত্যু বাড়ছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে চিকিৎসা ব্যবস্থা পিছিয়ে আছে। সেটাও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির একটা কারণ।
গত রোববার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৭৩০ জনের মৃত্যু হলো। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হলো ১৩৭ জনের।
গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে গত রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে ঢাকায় ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬ জন মারা গেছেন। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ৯৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৯৪ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ৯৯৯ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৭ হাজার ৫৯ এবং ঢাকার বাইরে ৮১ হাজার ২৬৯ জন।
ডেঙ্গুতে গড় মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৫। এর মধ্যে ঢাকায় শূন্য দশমিক ৮, বাইরে শূন্য দশমিক ৩। গত বুধবারও ঢাকার বাইরে ছিল শূন্য দশমিক ২। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে এ হার।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা: মুশতাক হোসেন বলেন, ঢাকার বাইরে মৃত্যুর হার বাড়ছে। ঢাকার বাইরে কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল এবং কিছু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে। পরিস্থিতি জটিল হওয়ার পরই আক্রান্ত ব্যক্তিদের বড় হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। এখন জরুরি হলো, মাঠ পর্যায়ে ডেঙ্গু টেস্টের ব্যবস্থা সুগম করা। তাহলে দ্রুত রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর ২৮১ জন। এ ছাড়া, ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে ১০৫ জন। চলতি বছর অনেক আগেই সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
বিমান বাহিনী প্রধানের এয়ার চিফ মার্শাল র‌্যাংক পরিধান গোপালগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন ফিলিস্তিনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও মানবিক : রাষ্ট্রদুত ইউসুফ রামাদান বাংলাদেশে শিশু নিখোঁজের ঘটনা কি সত্যিই বেড়েছে? আবেগী পোস্টে ফুটবলকে বিদায় জানালেন ক্রুস নোয়াখালীতে স্বাস্থ্য সেবা ও নারীবান্ধব গণশুনানি অনুষ্ঠিত অভিষেকের অভিষেক শতকে সিরিজে ফিরলো ভারত কোটা সংস্কার কি আদালতের বাইরে সম্ভব? বকশীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু বাংলাদেশী শ্রমিকদের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ‘অরাজনৈতিক ও পর্যালোচনাধীন’ : ওমান রাষ্ট্রদূত যেমন হলো আজকের বাংলা ব্লকড কর্মসূচি

সকল