ফুলপরীর নীল গল্প
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
যতটা মনে পড়ে ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছায়াছবিতে পরীদের একটি গান শুনেছিলাম। গানটির গীতিকার ছিলেন মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। সত্য সাহা এর সুর দিয়েছিলেন। আবিদা সুলতানার কণ্ঠে গানটি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সে গানটির কথাগুলো ছিল এরকম- ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী/সাথী মোদের ফুলপরী/ফুলপরী লাল পরী লাল পরী নীল পরী/সবার সাথে ভাব করি। /এইখানে মিথ্যে কথা কেউ বলে না/এইখানে অসৎ পথে কেউ চলেনা/পড়ার সময় লেখাপড়া/কাজের সময় কাজ করা।/খেলার সময় হলে খেলা করি/আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী।/এখানে মন্দ হতে কেউ পারে না/এখানে হিংসা কভু কেউ করে না।/নেই কোনো দুঃখ অপমান/ছোট-বড় সবাই সমান/ভালোবাসা দিয়ে জীবন গড়ি।/আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী/সাথী মোদের ফুলপরী/ফুলপরী, লাল পরী, লাল পরী, নীল পরী/সবার সাথে ভাব করি।’
গানের কথাগুলো আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা বলে। পরীর রাজ্য যেমন স্বপ্নীল, তেমনি সুন্দর স্বপ্নিল পরীদের রাজ্যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাস। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তারা যে কাক্সিক্ষত সমাজ দেখতে চায়, গানের কথায় সেই আশা-আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। সত্যি সত্যি আমাদের স্বপ্নের সমাজে কেউ মিথ্যা কথা বলে না। সত্যি সত্যি অসৎ পথে কেউ চলে না। দুর্নীতির পথে কেউ হাঁটে না। আদর্শ ছাত্রছাত্রীরা যেমন করে চলে- খেলার সময় খেলে, পড়ার সময় পড়ে- তেমনি আমাদের শিক্ষাজীবনের রূপকল্প।
বাস্তবেই যদি আমরা এসব কথা মেনে চলি তাহলে অসৎ পথে চলার প্রশ্নই আসে না। মন্দ কেউ এখানে হতে পারে না। এটি সত্যি সত্যি ফুলের বাগানের মতোই সুন্দর। যেখানে সব ফুলপরীদের বসবাস। এখানে কেউ কাউকে হিংসা করে না। দুঃখ-অপমান ঘটানোর মতো কাজ ফুলপরীদের জগতে হয় না। এখানে ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবাই সমান। ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা দিয়েই কাক্সিক্ষত সেই সমাজ আলোড়িত। ভালোবাসা দিয়েই যেন এদের জীবন গড়া। এ সবের মধ্যে অর্থাৎ সত্যিই যদি এত সব আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তব হয়, দেশটা সুন্দর স্বপ্নপুরী হতেই পারে।
ফুলপরী হচ্ছে অনাবিল সুখ আর আনন্দের প্রতীক। আমাদের কল্পনায় সব রঙের পরীদের আনন্দ বসবাস এখানে। লালপরী, নীল পরী ও ফুলপরীদের ভাব, ভালোবাসা ও আনন্দে বসবাস স্বপ্নিল সেই সমাজে। এসবই হচ্ছে আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা। গানের লোকেরা ভাবের জগতে এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রের লোকেরাও ‘গল্পকথার কল্পলোকে’ তাদের কাক্সিক্ষত সমাজের ছবি আঁকেন। মনীষী প্লেটো এরকমই এক সমাজের নীলনকশা দিয়েছেন। সেই আদর্শ সমাজকে বাস্তববাদীরা বলেছেন অবাস্তব কল্পনার জগৎ। এখন বাস্তবতার আঘাতে ফুলপরীদের জল্পনা-কল্পনাকেও বলতে ইচ্ছে করে ‘সব ঝুট হ্যায়’। সবই স্বপ্ন, সবই মিথ্যা।
গল্পকথার ফুলপরী অতিক্রম করে আমরা এখন এক সত্য ফুলপরীর কথা বলব। সে ফুলপরীর গল্প আমাদের মনকে আনন্দিত করে না; বরং ‘হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়’। ফুলপরীর ছন্দ যেমন সুখের গল্প বলে, আমাদের এখনকার ফুলপরীর গল্প উল্টো কথা বলে। দুঃখ-বেদনা, অপমান-লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার কথা বলে। সে গল্পটি এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষকে বিচলিত করে। সেই অন্যায় অত্যাচারের ভয়ে শিহরিত হয় বিবেক। তাহলে কল্পলোক ছেড়ে ফুলপরীর বাস্তব গল্পে আসা যাক।
সময় রাত ১২টা। স্থান দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুম, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। সেখানে ডাকা হয়েছে আমাদের গল্পের ফুলপরীকে। সেখানে তাকে চার ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এই চার ঘণ্টা তার ওপর অমানসিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। গায়ে হাত তোলা হয়। অশ্লীল গালাগাল করা হয়। হুমকি দেয়া হয় কাউকে জানালে মেরে ফেলা হবে। এসব নির্যাতন চালানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে। ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা সানজিদার নির্দেশে নিপীড়ন-নির্যাতনে অংশগ্রহণ করেন।
ফুলপরী ঘটনার পেছনের ঘটনা ব্যাখ্যা করেন এভাবে- ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। হলে সিট না পেয়ে তিনি দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে অতিথি হিসেবে থাকেন। বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম, নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কারা দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী হাত তুলেন। হলে ওঠার বিষয়টি আগে তাবাসসুমকে না জানানোতে চটে যান তিনি। এরপর তাকে এই ছাত্রলীগ নেত্রী হলের ‘প্রজাপতি-২’ কক্ষে দেখা করতে বলেন। অসুস্থ থাকায় দেখা করতে পারেননি ফুলপরী। ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাসে গেলে তাকে বকাঝকা করেন তাবাসসুম। এরপর পরের দিন প্রজাপতি-১ ও দোয়েল-২ গণরুমে নির্যাতনের শিকার হন আমাদের ফুলপরী। রাত ১১টার দিকে হলের গণরুম- দোয়েলে ডেকে নেন ছাত্রলীগের উল্লিøখিত নেত্রী।
সেখানে পাঁচ থেকে ছয়জনের একটি দল রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ফুলপরীকে নির্যাতন করে। নির্যাতনকারী সানজিদার সহযোগী হিসেবে উল্লিখিত তাবাসসুম সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। হাইকোর্ট তার নির্দেশে মন্তব্য করেন, এটি খুবই অ্যালার্মিং। ওই মেয়ে ওখানে পড়তে পারবে কিনা তার নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে। নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী ঘটনার পরপরই মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী প্রক্টর, প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। প্রশাসনের কাছে যথাযথ বিচার না পেয়ে অবশেষে ফুলপরী সুপ্রিম কোর্টে বিচার চেয়ে রিট করেন। ওই ছাত্রীর পক্ষে ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মোহাম্মদ মুহসীন রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা ও বিশ^বিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনা নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের গঠিত কমিটিগুলো প্রতিবেদনও ১০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ফুলপরীর বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ দিয়েছেন ছাত্রলীগের ওই হলের সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা। হলের আবাসিক ছাত্রীদের গণস্বাক্ষর নিয়ে বলা হয়- ফুলপরীও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন, বহিরাগত ব্যক্তিদের দিয়ে হুমকি দিয়েছেন এবং মিথ্যা অপপ্রচার করেছেন। এ অভিযোগের পর আরো জানা যায়, কথিত সানজিদা আরো চার ছাত্রীকে নানাভাবে হুমকি ও উৎপীড়ন করেছেন। ছাত্রীদের দাবি- ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর সানজিদা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। হলের সব কিছুতেই তিনি দাপট দেখাতে থাকেন। সানজিদা ১৫ থেকে ২০ জন অনুসারী নিয়ে হলের নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। জোরপূর্বক ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগদানে বাধ্য করেন সাধারণ ছাত্রীদের। পরবর্তীকালে ফুলপরী গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর কাছে সাহসিকতার সাথে সত্য তুলে ধরেন। তার এই সাহসিকতা গণমাধ্যমে ইতিবাচক প্রচার পায়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাধারণ মানুষ সাহস করে না, তাদের বিরুদ্ধে সাহস করে তিনি অভিযোগটি আনলেন। যারা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এবং আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সন্ত্রাস করে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রিটি অভিযোগ করতে পেরেছেন, সেজন্য তাকে অভিবাদন জানাই।’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিষয়টি সামনে আনার কারণেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। আদালতও ব্যবস্থা নিয়েছেন। মেয়েটির সাহসের কারণে এ পর্যন্ত একটি পদক্ষেপ হলো। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এরপর কী হবে? কারণ অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি আমাদের কাঁধে জেঁকে বসেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গেলে উপায় একটিই, সেটা হলো- সব ক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
অপরদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ‘এ ঘটনা স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার মতো। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে কী পরিবেশ বিরাজ করছে তারই প্রতিফলন ঘটেছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে। যা আমাদের জাতির জন্য সাঙ্ঘাতিক উদ্বেগের। অবস্থা এমন জায়গায় চলে গেছে, রাজনৈতিক সংগঠনের পদের অপব্যবহার করে কেউ কেউ নির্যাতন করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ানোর মতো নৈতিক ক্ষমতা যেন বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন হারিয়ে ফেলেছে। সরকারি ছাত্র সংগঠন হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার সাহসও যেন কারো নেই।’ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে এই মানবাধিকার নেতা বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সমাজের নৈতিকতার যে উচ্চ অবস্থান থাকার কথা ছিল, সেটি ভেঙে পড়েছে। এখন একজন দু’জন শিক্ষক প্রতিবাদ করছেন। প্রতিবাদের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে প্রথম যে সংগঠনটি তীব্র প্রতিবাদ জানাত, সেটি হচ্ছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তখন বলা হতো, এই শিক্ষক সমিতি যেন জাতির বিবেকের প্রতিফলন। এখন সেই জায়গা কোথায়? তিনি আরো অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগকে যাদের থামানোর দায়িত্ব, তারা তাকিয়ে তাকিয়ে এসব ঘটনা দেখছেন। তারা কোনো প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করছেন না।’
এই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য হারিয়ে গেল পরে দ্বিখণ্ডিত রবীন্দ্রনাথকে আমরা আঁস্তাকুড়ের মধ্যে আবিষ্কার করলাম। এটি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য কতটা লজ্জা, কতটা বেদনাদায়ক ঘটনা! একুশে বইমেলার সময় এটি কল্পনা করা যায়! সামগ্রিকভাবে নৈতিকতা, চিন্তা-চেতনা ও মননের সাঙ্ঘাতিক অবনতি ঘটেছে। এই জায়গাগুলোর দেখভাল করার যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এখন মনে হচ্ছে যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য জায়গায় দেয়া হচ্ছে না। যার ফলে আমরা এমন একটি অবস্থায় পড়ে গেছি যে, এখান থেকে উঠে আসতে কত সময় লাগবে কিংবা আরো কত গহ্বরে তলিয়ে যেতে হবে, সেটি নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। শিক্ষাব্যবস্থাসহ সামগ্রিকভাবে আমরা যে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে যাচ্ছি, এই জায়গাতে এখনই রাশ টেনে ধরা দরকার।
সবার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও মন্তব্যের পর আশার কথা, এ দেশে এখনো ফুলপরীর মতো সাহসী মেয়ে আছে। ভাবতে আরো অবাক হতে হয়, এই ফুলপরী একটি হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার বাবা ভ্যানচালক। তাদের বাড়ি একটি নিভৃত গ্রামে। পাবনা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুর গ্রামে। টিনের ঘরের পাটকাঠির বেড়ার বাড়িতে তাদের বসবাস। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংসারের অভাব-অনটনকে জয় করে ফুলপরী খাতুনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন তারা। ফুলপরীর মায়ের ভাষায়- কত ঝড় তুফান এসেছে কিন্তু পিছপা হইনি। পরিবারের অন্যরাও লেখাপড়া করছে। আর তার বাবা জানালেন, ‘আমরা সৎ ও সত্যের পথে চলব, অন্যায় করলে প্রতিবাদ করব। এ জন্যই ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করছি।’ ফুলপরীর ঘটনায় বোঝা যায়, তার বাবার চাওয়া বৃথা যায়নি। গণমাধ্যমের মন্তব্য ‘ভয়ের সংস্কৃতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বার্তা দিলেন এই ছাত্রী’। এখন ফুলপরী ‘প্রতিবাদের প্রতীক’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘ভয়ের পরিবেশের কারণে এবং অনেক সময় স্বার্থের বিবেচনা থেকে শিক্ষকরাও এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেভাবে ভূমিকা রাখছেন না। এ ধরনের একটি পরিবেশের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতনের শিকার ছাত্রী অপরাধের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করে উদাহরণ তৈরি করেছেন। তিনি মনে করেন, ছাত্র রাজনীতি এখন বদলে গেছে এবং জায়গা করে নিয়েছে অপরাধমূলক কাজ। এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে দেয়া উচিত কিনা সেটি নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বিজ্ঞজনরা মনে করেন, এই ছাত্রী সমাজের চোখ খুলে দিয়েছেন। এই ছাত্রীর প্রতিবাদের ফলে গণমাধ্যম তথা সমাজে একটু সাহসের সঞ্চার হয়েছে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলদারি, আসন-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন কোনো কোনো শিক্ষক। শিক্ষকরা আরো মন্তব্য করেন, ফুলপরীর অভিযোগ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের একটি বাস্তবচিত্র তুলে ধরছে।’
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতিতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকে আশির দশক থেকে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে তা বেড়ে চলেছে। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের ঘটনাটি যতটুকু প্রকাশ হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে- এটি ছিল সীমাহীন নির্যাতনের ঘটনা।’ ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান আবুল কাশেম ফজলুল হক। একই সাথে তিনি মনে করেন, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, দেশের রাজনীতি ও সমাজ থেকে মানবিক গুণ নষ্ট হওয়ার কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে কষ্টের কথা, গোটা দেশব্যাপী ছাত্রলীগের যে তাণ্ডব পরিলক্ষিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই শাসকমহলের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খবর নেয়ার পর এ কথাটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ছাত্রলীগ অনেক বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা সব ক্যাম্পাসে আতঙ্ক হয়েই বিরাজ করছে।
ক্যাম্পাসগুলোতে তারা লুটেরা সংগঠন হিসেবে রীতিমতো প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়, চুরি-হাইজ্যাকের মতো ঘটনাতেও তারা হাতেনাতে ধরা পড়ছে। টর্চার সেলে নির্যাতন করার নতুন ফ্যাসিবাদী ধারা যুক্ত হয়েছে। ক্ষমতা ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে রক্ত ঝরছে তাদের মধ্যেই। অথচ দেখার কেউ নেই। ক্ষত হলে মানুষ মলম লাগায়। আর যদি পচন ধরে তাহলে অস্ত্রোপচার করতে হয়। মানুষজন মনে করে, মলম লাগানোর কোনো ব্যবস্থাই আর বাকি নেই। সুতরাং অস্ত্রোপচার অনিবার্য।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা