২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অবলোকন

তুরস্কে ভূমিকম্পের চ্যালেঞ্জ ও এরদোগান

-

এই সময়ে যেখানে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তেজনামুখর হয়ে থাকার কথা সেখানে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশটি এখন শোকে বিহ্বল। সর্বশেষ খবর অনুসারে শুধু তুরস্কেই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজারের কাছাকাছি। এর সাথে সিরিয়ার নিহতদের যোগ করা হলে জীবন ক্ষয় ৫০ হাজারের কোঠায় চলে যেতে পারে। ঠিক এ সময় আরেকটি ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে দেশটির ওপর।
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব তৈয়ব এরদোগান কাহরামানমারাস ও এর ৯ প্রতিবেশী প্রদেশে আঘাত হানা ভূমিকম্প নিয়ে ২০২৩ সালের বিশ্ব সরকার শীর্ষ সম্মেলনে পাঠানো একটি ভিডিও বার্তায় শিগগিরই ভাঙা শহরগুলো পুনর্গঠন কাজ শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এরদোগান এই প্রলয়ঙ্করী ভূকম্পন প্রসঙ্গে বলেছেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি পর পর ৭.৭ এবং ৭.৬ মাত্রার দু’টি ভূমিকম্পে আমরা মানবজাতির সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি। এক কোটি ৩৫ লাখ লোক অধ্যুষিত ১০টি প্রদেশের ৫০০ কিলোমিটার-বিস্তৃত অঞ্চলে ভূমিকম্প ব্যাপক ধ্বংস সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই ভূমিকম্পের ফলে নির্গত শক্তি ৫০০টি পারমাণবিক বোমার মতো।
তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা শুধু আমাদের দেশের ইতিহাসের নয়, পুরো মানবজাতির ইতিহাসেরও সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী। আমরা যখন হাজার হাজার ধসেপড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছি, তখন ভূমিকম্পে শিকারের সংখ্যা দুঃখজনকভাবে বাড়ছে। ‘শতাব্দীর বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করা এই দুর্যোগে বেঁচে যাওয়া ৮১ হাজারেরও বেশি মানুষকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপ থেকে আট হাজারেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছে।
তুরস্কের সরকার যেভাবে এই ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবেলা করছে তা নিয়ে নানা সমালোচনাও হচ্ছে। বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, ভূমিকম্প হয়তো এড়ানো যেত না। কিন্তু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হলে প্রাণহানি আরো কমানো যেত। বিরোধী দল সিএইচপি প্রধান এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য এক ব্যক্তি এরদোগানকে দায়ী করেছেন। অন্য দিকে এরদোগান বলেছেন, আমরা আমাদের সব সম্পদ দুর্গত অঞ্চলে একত্রিত করেছি। আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে লেভেল-৪ অ্যালার্ম ঘোষণা করেছি এবং ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছি। প্রাসঙ্গিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি, আমাদের বেসরকারি সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগে বেঁচে যাওয়াদের সাহায্যে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। একদিকে অনুসন্ধান উদ্ধার এবং ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করছি, অন্যদিকে তাঁবু, কনটেইনার ও প্রিফেব্রিকেটেড ঘর স্থাপনের মাধ্যমে জরুরি আশ্রয়ের কাজ ত্বরান্বিত করছি। আমরা শিগগিরই বিধ্বস্ত শহরগুলো পুনর্গঠন কাজ শুরু করব। রাষ্ট্র ও পুরো তুর্কিয়ে জাতিকে একসাথে নিয়ে আমরা এই বিপর্যয়ে সৃষ্ট ক্ষত দ্রুত নিরাময় করব ইনশাআল্লাহ।
তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ শতাধিক দেশ থেকে পাওয়া সমর্থন ও শোকবার্তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এরদোগান বলেছেন, বর্তমানে বৈশ্বিক ব্যবস্থা সঙ্কটে ঘেরা, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় প্ল্যাটফর্মের তাৎপর্য এখন গুরুত্বপূর্ণ। এই সমীকরণে, তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলো এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক একীকরণের একটি কেন্দ্রীয় অক্ষ গঠন করতে পারে। তুর্কিয়ে হিসেবে আমরা সবসময় বলি যে, আমাদের নিজস্ব স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা উপসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, মহাকাশ কর্মসূচি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ছাড়াও, আমরা ভূমি ও রেল পরিবহন পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিই যা তুর্কিয়ের মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলকে ইউরোপ ও এশিয়ার সাথে সংযুক্ত করবে।

ভুল থেকে শিক্ষা
এর আগে ১৯৯৯ সালে, ইস্তাম্বুলের কাছে কোকেলি প্রদেশে বিশাল ভূমিকম্প আঘাত হানে। তখনকার সরকার দুর্যোগ মোকাবেলায় অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়েছিল। তৎকালীন ন্যাশনালিস্ট অ্যাকশন পার্টির (এমএইচপি) স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওসমান দুরমুস প্রাথমিকভাবে বিদেশী সাহায্যের অনেক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘আমি তাদের একজন আহত ব্যক্তিকেও [দুর্গতদের সেবার] সুযোগ দেবো না; আমি তাদের রক্ত [দান] নেবো না।’ তখন সরকারিভাবে, ভূমিকম্পে ১৭ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল, তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়। বাইরের সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে একা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে তখন এক ধরনের অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়।
ইস্তাম্বুলের তৎকালীন মেয়র রজব তৈয়ব এরদোগান এই অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করার জন্য সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে (একেপি) ক্ষমতায় আনতে সাহায্যকারী কারণগুলোর মধ্যে ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের বিপর্যস্ত প্রতিক্রিয়া একটি ছিল। এ কারণে একেপি সরকার এবারের দুর্যোগ মোকাবেলায় অধিকতর সতর্ক। যদিও বিরোধী পক্ষ সমালোচনার জোয়ার শুরু তুলেছে। সমালোচকদের একজন গবেষক ডিলেক তুর্কোজু উল্লেখ করেছেন, ‘ভূগোল হলো নিয়তি, কিন্তু অবহেলা একটি অপশন।’ ট্র্যাজেডি এড়ানো সম্ভব ছিল না; তুরস্কে ভূমিকম্প সাধারণ এবং পরবর্তী ‘বড় একটি’ শেষ পর্যন্ত আসার দিন পর্যন্ত সর্বদা দিগন্তের কোথাও অপেক্ষমাণ থাকে। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে তুরস্ক ও সিরিয়াকে যে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তা তার মাত্রায় মর্মান্তিক ছিল; কিন্তু সবাই জানত এটি আসছে। প্রত্যাশা ছিল এবারো সরকার প্রস্তুতি নেবে। কিন্তু সেই প্রস্তুতি কতটা ছিল সেটি বড় প্রশ্ন।
বিরোধী পক্ষ বলছেন, গত সোমবারের ভূমিকম্পের পরে প্রাথমিকভাবে সামরিক বাহিনীকে একত্রিত করা হয়নি। শুধু সরাসরি উদ্ধারে সহায়তা করার জন্য নয়, উদ্ধার প্রচেষ্টার জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ বা মেরামত করা, ফিল্ড হাসপাতাল এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিমান স্ট্রিপগুলোর মতো জিনিসগুলো শুধু সামরিক বাহিনীই কার্যকরভাবে করতে পারে। জরুরি ত্রাণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসামরিক অফিস দুর্বল অর্থহীন এবং সমন্বয়হীনভাবে পরিচালিত হয়েছে।
তুরস্কের দুর্যোগোত্তর বাস্তবতা সে রকমটি মনে হয়নি। জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন বক্তৃতায়, এরদোগান জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং এক সপ্তাহ জাতীয় শোক ঘোষণা করেন। তিনি সমালোচনা গ্রহণ করলেও ভিত্তিহীন বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়ে সতর্কও করেন। উদ্ধার অভিযান চলাকালীন তুরস্ক টুইটার অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়; স্পষ্টতই, এটি ‘বিভ্রান্তি’ প্রতিরোধ করার জন্য করা হয়েছে বলে মনে হয়। টুইটারের সাথে আলোচনার পরে ‘বিভ্রান্তি’ সীমিত করতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতির পর অবশেষে টুইটার খুলে দেয়া হয়।
সর্বশেষ খবর অনুসারে, তুরস্কে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে; আরো বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। সরকার এখন পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে। এক বছরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। একদিকে ধ্বংসাবশেষ সরানো হচ্ছে। অন্য দিকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করা হচ্ছে। পুরো পুনর্বাসন শেষ করতে ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতে পারে। প্রাথমিক কাজের জন্য এক রাতের বিশেষ আয়োজনে ছয় বিলিয়ন ডলার তোলা হয়েছে যেখানে নাগরিকদের পক্ষ থেকে ৫০ লিরা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর বাইরে আরো ১০ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে একটি সূত্র উল্লেখ করেছে।

নির্বাচন : এরদোগান বনাম অন্যরা
ভূমিকম্পের জাতীয় দুর্যোগের পর তুর্কিয়েদের ভাবনায় এখন আর নির্বাচনের বিষয়টি সেভাবে নেই। ১৪ মে যে সাধারণ নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা আছে সেটি এই সময়ে হবে কিনা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ভূমিকম্পজনিত কারণে ১০ প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সেসব সব অঞ্চলে নির্বাচনী কার্যক্রমের কোনো পরিবেশ নেই। তবে সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জুনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সে হিসাবে মাস খানেক সময় পেছানো যেতে পারে নির্বাচন। আর এর ব্যতিক্রম হতে পারে পুরো দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হলে। সে সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ। তবে সরকার বা বিরোধী উভয় পক্ষের মাথায় নির্বাচনের বিষয়টি রয়েছে বলে মনে হয়।
অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে তুরস্কের এবারের নির্বাচন অনেক কঠিন হতে পারে। প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান ও তার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এবং এর মিত্র ন্যাশনালিস্ট অ্যাকশন পার্টির (এমএইচপি) বিজয় দেশকে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের দিকে চালিত করার সুযোগ এনে দেবে এরদোগানকে। গত দুই দশকের শাসনে তুরস্ক ভেতর থেকেই অনেকখানি পাল্টে গেছে। শাসনের ধারাবাহিকতা চললে শিক্ষা গবেষণা প্রযুক্তি প্রতিরক্ষা ও শিল্পায়নে আরো সুদৃঢ় ভিত্তি তৈরি হবে তুরস্কের জন্য। এটি তুর্ক অঞ্চলের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত করবে তুরস্ককে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বন্ধনে থাকা শক্তি হওয়া সত্ত্বেও ভেতর থেকে তুরস্কের জন্য এটি কামনা করে না। এ জন্য ন্যাটোর মধ্যে গ্রিস যে সুবিধা পায় তুরস্ক তা পায় না। তুরস্কে বিরোধীদের বিজয় ঘটলে সেটি চলমান এই ধারায় ছেদ আনবে। দেশটির প্রশাসনে পাশ্চাত্যের প্রভাব আবার বাড়বে। রাষ্ট্রের মধ্যে সেনাবাহিনীসহ মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কামালবাদের প্রভাব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
এ কারণে এরদোগানের শাসনের অবসানের ব্যাপারে ইউরোপ আমেরিকার সরকারগুলোর প্রায় অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। এ জন্য অর্থনীতিকে একসময় লক্ষবস্তু করে লিরার ব্যাপক দরপতন ঘটানো হয়। ভূমিকম্পের পরিস্থিতি মোকাবেলায় যেকোনো ধরনের ব্যর্থতা এ ক্ষেত্রে আরেক দফা সুযোগ এনে দিতে পারে। তবে তাদের জন্য প্রধান সমস্যা হলো তুর্কিয়ে জাতির মধ্যে যেকোনো সঙ্কটে একত্র হওয়ার প্রবণতা। ভূমিকম্পের দুর্যোগে তুরস্কের জনগণ রাজনীতি ভুলে গিয়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্য দেশের দুর্যোগে তুরস্ক যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে তার বিনিময় হিসেবে সে সব দেশকে এবার আঙ্কারা নিজেদের দুর্যোগে পাশে পাচ্ছে।
এর বিপরীতে দেশী-বিদেশী পৃষ্ঠপোষকদের চেষ্টা সত্ত্বেও বিরোধীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফাটল এখনো রয়ে গেছে। তারা ছয় দলের ফ্রন্ট করে এখনো রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রার্থী বাছাই করতে পারেনি। তবে এর মধ্যে তাদের জন্য কিছু সুবিধাও রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী নিয়ে হতাশা রয়েছে তুর্কিয়েদের মধ্যে, এর বাইরে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ চাপ। একই সময়ে, বিরোধীদের অবশ্যই আদালত ব্যবস্থা, নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউটরদের মুখোমুখি হতে হবে যারা রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য অনুকূল থাকবে বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি গণমাধ্যম জগতেও বিরোধীদের প্রভাব কমে গেছে। এ ছাড়া বিরোধী পক্ষে ঐতিহ্যবাহী তুর্কিয়ে জাতীয়তাবাদী এবং কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এইচডিপি) মধ্যে দূরত্ব রয়েছে অনেক। ইতোমধ্যেই, এইচডিপির প্রধান নেতারা হয় কারাগারে অথবা বিচারের মুখোমুখি। নির্বাচনের আগে এইচডিপি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এসব কারণে জনমত জরিপে যাই দেখা যাক না কেন, বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারবেন বলে মনে হয় না। আর তারা জিতে গেলেও এরদোগান ও তার সমর্থকরা কিভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবং বাইরে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে বিরোধীদের জেতার মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের স্থিতির বিপরীতে অস্থিরতা আবার ফিরে আসতে পারে বলে গভীর ক্ষমতা বলয়ের অনেকে শঙ্কিত।
বিরোধী দলের বিজয়ের ক্ষেত্রে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে গভীরভাবে রাজনীতিকৃত আমলাতন্ত্র এবং আদালত ব্যবস্থাকে নিজেদের অনুকূলে বিন্যাস করা পর্যন্ত বিস্তৃত চ্যালেঞ্জ আসবে। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে প্রায়ই এরদোগানের প্রতি তাদের সমান ঘৃণার বাইরে খুব কম মিলই দেখা যায়। তবুও, অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টে, বিরোধীদের বিজয়ের ফলে অর্থনীতির আরো টেকনোক্রেটিক ব্যবস্থাপনা, কূটনৈতিক কোরে পেশাদার কর্মীদের পুনর্ব্যবহার এবং বিতর্কের জন্য আরো উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস সৃষ্টি হতে পারে বলে বলে বিরোধী পক্ষ মনে করে।
বৈদেশিক বিষয়ে, সিরিয়ান কুর্দিশ পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজি) এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সাথে মার্কিন সমর্থন নিয়ে উত্তেজনা সম্ভবত অব্যাহত থাকবে, তবে স্বল্পমেয়াদে নতুন নেতৃত্ব তার ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের সঙ্কেত দিতে চাইবে যে, তারা সরল বিশ্বাসে কাজ করতে প্রস্তুত। আর বিরোধীরা জিতলে মার্কিন-তুর্কিয়ে সম্পর্ক সম্ভবত একটি মধুচন্দ্রিমা উপভোগ করবে এবং নতুন সরকার সম্ভবত ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর হবে। তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ উভয়ের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং অংশীদার থাকবে, তবে বিরোধী বিজয় এই সম্পর্ক সংশোধন করার ও প্রান্ত থেকে ফিরে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
তবে এর চেয়েও সম্ভাবনাময় দৃশ্যপট হলো যে, এরদোগান আরো পাঁচ বছরের মেয়াদে জয়ী হবেন, যা তাকে তার উত্তরাধিকার নির্মাণ করতে সাহায্য করবে এবং ইতোমধ্যে ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। তবে, এ পরিস্থিতিতেও কেউ উত্তেজনা কমানোর জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি প্রচেষ্টা আশা করতে পারে, যদি শুধু অস্ত্র বিক্রয় (বিশেষ করে এফ-১৬) নিশ্চিত করা যায় এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আশ্বস্ত করা যায়।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের মূল পথচলা পশ্চিমের ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্ত হওয়ার আকাক্সক্ষায় গঠিত। এই আকাক্সক্ষা জনগণের বড় অংশের মধ্যে যেমন রয়েছে তেমনিভাবে রয়েছে দেশটির গভীর ক্ষমতা বলয়েও। তারা এখনো তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এরদোগানের বিকল্প নেতৃত্ব ও একেপির বিকল্প দল খুঁজে পাচ্ছে না। অবশ্য সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, ২০২৩ সাল তুরস্কের জন্য হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর।
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
‘নানা গুজবে’ সেন্টমার্টিনে বিধিনিষেধ বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ওপর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা না’গঞ্জের পপি হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি গঠিত চট্টগ্রামে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে শতাধিক মার্কেট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বৈষম্যের শিকার পল্লবী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহবুব কুবির সাথে ইবনে সিনা ট্রাস্টের চুক্তি, ২৫ শাখায় মিলবে সেবা এলাকাবাসীকে চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকতে কায়কোবাদের খোলা চিঠি ধলেশ্বরী নদীর মোল্লারহাট ফেরিঘাট অবৈধ দখলদারের নিয়ন্ত্রণে মোহন মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি পেলেন ঢাবির ১৫ শিক্ষার্থী

সকল