বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা ও প্রায়োগিক বাস্তবতা
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
রাষ্ট্র তার জনশক্তিকে প্রত্যাশিত, পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট উপায়ে উদ্দিষ্ট লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সাধনের উপায় হিসেবে গড়ে তুলবে- এটিই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম হচ্ছে ‘রাষ্ট্র নির্মাণ’ (State Building)। উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও অভিজ্ঞতার আলোকে জনশক্তিকে সেভাবেই বিন্যস্ত করে। উন্নয়নশীল বিশ্বে বেশির ভাগ রাষ্ট্রে সে ব্যবস্থা অনুপস্থিত। সেখানে ঔপনিবেশিক ধারায় চলছে শিক্ষাব্যবস্থা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়; বরং বাংলাদেশের নির্দিষ্ট আয়তন, বিপুল জনসংখ্যা, সীমিত সম্পদ, উন্নয়ন কৌশলে ঐকমত্যের অভাব এবং অপরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশিত জনশক্তি নির্মাণকে অসম্ভব করে তুলেছে। ঔপনিবেশিক আমলে শিক্ষাগ্রহণই সমস্যা ছিল। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার বিভাজন সেখানে অনুপস্থিত ছিল। পরবর্তীকালে মানবিক, বাণিজ্যিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। স্বাধীনতা-পরবর্তী শিক্ষানীতিতে বারবার বিজ্ঞান-মনষ্কতার কথা বলা হলেও আসলে শিক্ষা অবাস্তবতার আদলেই থেকে যায়। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে প্রাথমিক শিক্ষার ভিতকে মজবুত না করে তথাকথিত উচ্চশিক্ষার বিকাশ ঘটানো হয়। গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে ডগায় ঢালার অসম্ভব অপচয় লক্ষ করা যায়। ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গজিয়ে উঠে মহাবিদ্যালয়।
এখন মহাজোট সরকারের মহা-বদান্যতায় পাড়ায় পাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড দেখা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপ্তি ঘটে জেলায় জেলায়। উন্নয়নের মহাসড়কে অবতীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার মানে ঘটে মারাত্মক অবনতি। এসব মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় হাজারো বিষয় ডিগ্রি দেয়ার পাইকারি অনুমতি দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কথা বলা হলেও মূলত কলা ও মানবিক বিষয়গুলোর আধিক্য ঘটে। দুর্ভাগ্যের বিষয়- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আসন সংখ্যা সীমিত হলেও বেদরকারি বিষয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন সব অনার্স ও এমএ পাস বের হয় যারা আদৌ কোনো লেখাপড়া জানে না। এরা বাংলা অথবা ইংরেজিতে দরখাস্ত লিখতে পারে না। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় মাঝে মধ্যেই মজার মজার হাস্যরসের সন্ধান পাওয়া যায়। সেদিন আমার এক ছাত্র যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেছে, সে আনন্দের সাথে আমাকে জানায়, রেলে তার খালাসির চাকরি হয়েছে। এই হলো অপ্রিয় বাস্তবতা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টি এখন সহজ ও সস্তা গোলআলুতে পরিণত হয়েছে (গোলআলুর দামও এখন অনেক বেশি)। বাংলাদেশের এমন কোনো কলেজ নেই যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধিত হয় না। বোতল বুনিয়া অথবা ছাগলনাইয়া কলেজে এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও কোথাও কোথাও এমএ রয়েছে। শিক্ষার এই বিস্তার বিশেষত আমার বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই পাইকারি সমাহারে আমার পুলকিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হতে পারছি না কয়েকটি কারণে- প্রথমত, অবাস্তব সিলেবাস, দ্বিতীয়ত প্রায় শিক্ষকহীন বিভাগ, তৃতীয়ত শুধু নোটবই-নির্ভর শিক্ষা রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নকে অর্থহীন করে তুলেছে। সবচেয়ে বড় সর্বনাশ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-বিষয়ক লোকবল সৃষ্টি। দেশে যদি রাষ্ট্রবিজ্ঞান-বিষয়ক লোকবল লাগে ৫০০ তাহলে এখন তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার। বাকি ৪৫ হাজার খালাসির চাকরি করবে না তো কী করবে!
আমি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকেন্দ্রিক কথা বলছি। তবে বিষয়টি সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমাদের বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও নানাবিধ বিষয় যে শিক্ষিত জনশক্তি দরকার, তার একটি সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা সরকারের হাতে থাকতে হবে। যেসব জনশক্তির চাহিদা বিদেশে রয়েছে সেখানেও আমাদের সতর্কতা ও যতœ থাকতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মোতাবেক বিষয়ভিত্তিক জনশক্তি তৈরি করতে হবে। তা হলে রসায়নের লোক ব্যাংকে চাকরি করবে না। সরকারের অদক্ষতায় ও অপরিকল্পনায় ডাক্তার পুলিশ হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছে। জনশক্তির এই অপচয় অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।
আরো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। সরকার কি অনাদি-অনন্তকাল পর্যন্ত এই বেহুদা বেকার সৃষ্টির কারখানা অব্যাহত রাখবে? দেশের যত্রতত্র যে গুণহীন, মানহীন ও নৈতিকতাবিহীন শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি হচ্ছে- তার কি হিসাব কর্তৃপক্ষ রাখে? এসব বেকার যুবকরা অধঃপতিত জীবনযাপন করছে। তারা যেখানে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হওয়ার কথা সেখানে তারা বোঝা হয়ে বসবাস করছে। এরা কষ্টকর জীবনযাপন করছে। এ জন্য দায়ী কারা? উত্তর বহুমুখী। প্রথমত রাষ্ট্র। তার কারণ রাষ্ট্রের প্রবর্তিত ও নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থায় সে শিক্ষিত হয়েছে। আরো স্পষ্ট করে একে ‘সিস্টেম লস’ বলা যায়।
দ্বিতীয়ত, সমাজের তথাকথিত প্রদর্শনেচ্ছা এ জন্য দায়ী। গ্রাম দেশে ‘ফুটানি’ শব্দটি দিয়ে এর যথার্থ প্রকাশ ঘটানো হয়। এমএ পাস করা একটি বিরাট কিছু! সে লেখাপড়া না জানুক বা চাকরি না পাক, পরিবার ও গোষ্ঠী তাকে নিয়ে গর্ব করে। এই আমলে তারা রাজনীতি করে বেশ কামায়। সবাই বোঝে এটি একটি আরোপিত ব্যবস্থা। বিদ্যার অভাবে বা কোনো পর্যায়ের কোনো পরীক্ষায় যখন একজন এমপি তার নিজ লোককে চাকরি দিতে না পারে- তখন সে দায় কার? ব্যক্তি, সমাজ, রাজনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা এই শিক্ষিত গর্দভ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ক্রমেই এই বেকার সৃষ্টির মহোৎসব বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর যখন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীতে অফিসার পদে দরখাস্ত করা যায় তখন কেন ইন্টারমিডিয়েট পাস করে অফিসার পদে অন্যত্র দরখাস্ত করা যাবে না? তা ছাড়া আমাদের সামনেই তো ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে বিসিএস শিক্ষাকে আরো সুনির্দিষ্টকরণ ও পেশাগত বিভাজনের মাধ্যমে ইন্টারমিডিয়েটের পর থেকেই সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস- বিসিএস পুনর্গঠন করা যায়।
এই বিসিএস পুনর্গঠনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের সর্বত্র কমবেশি রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন বিসিএস সিলেবাসের পরিপূরক। সেখানে সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণের আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন সীমিত করতে হবে। দেশের সর্বত্র সব কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রয়েছে। সুতরাং বিসিএস প্রশাসন ও বিসিএস শিক্ষা- রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের জন্য সম্মানজনক স্থান নির্ধারণ করতে হবে। দেশের সর্বত্র এখন যেভাবে নিণ্মমানের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ ও পঠন হচ্ছে তার ব্যতিক্রম ঘটাতে হবে।
‘লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’ অনুষ্ঠানে একবার ডেকেছিল তারা। আমাকে জিজ্ঞাসা করল- রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়িয়ে কতজন সফল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তৈরি করলেন? উত্তর ছিল- সেই আব্দুল্লøাহ আবু সাঈদের মতো ‘নিষ্ফলা কৃষকের চাষ’। অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে যথার্থ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তৈরি হয়নি। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পঠন-পাঠনরত এক বিরাট নিষ্ফলা শিক্ষকের সৃষ্টি হয়েছে। তারা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ায় বটে, কিন্তু রাষ্ট্র ও বিজ্ঞানের ধারেকাছেও হাঁটে না। আর বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান তথা সরকার ও রাজনীতি চর্চা সবসময়ই সংবেদনশীল বিষয়ে বিবেচিত হয়েছে।
খুব মজার বিষয়- যারা রাজনীতি করছে বিশেষত রাজনীতির সুপুরুষ যারা তারা তো রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করে রাজনীতি করেনি। করলে হয়তো বিপদ হতো! গল্পটি এ রকম যে, এক নাপিত একজনের মাথার জটিল বিষফোঁড়া কেটে দিয়েছিল। অথচ সে বিষফোঁড়া অপারেশন করতে বড় বড় ডাক্তার ব্যর্থ হয়েছিল। সে নাপিতকে যখন প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই ধরনের অপারেশন করতে বলা হলো তখন তার হাত কাঁপছে! সে দেখছে এদিকে অথবা ওদিকে জটিল শিরা-উপশিরা। সে যখন অনভিজ্ঞ নাপিত ছিল তখন সে যা করতে পারত, এখন তা করতে পারে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের রাজনীতিবিদ বানালে সে ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত।
লেখাটি শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার প্রায়োগিক সমস্যা নিয়ে। এতক্ষণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের সমস্যা নিয়েই আলোচনা হলো। আসলেই কি এর কোনো প্রায়োগিক সুযোগ সুবিধা আছে? সেদিন এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আড্ডায় একজন ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন এই বলে- এ দেশে এত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ব্যাপক অধ্যয়ন সর্বত্র, রাজনীতি নিয়ে সারা দেশ তোলপাড় হচ্ছে- অথচ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কোনো ভূমিকা নেই। যদিও এ দেশে এখনো প্রাতিষ্ঠানিক, পেশাগত ও বিষয়ানুগ ভূমিকা রাখার সুযোগ সীমিত, তবুও বাস্তব বিষয়ের কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এই বাংলাদেশেই অর্থনীতিবিদরা সময়ে সময়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দেন। বাজেটের আগে ও পরে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অর্থনীতি নিয়ে ভালো ভালো গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অথচ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কোনো প্রতিষ্ঠান চোখে পড়ছে না।
অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানকেন্দ্রিক যে প্রতিষ্ঠানটি ছিল তা আর নেই। দলীয় রাজনীতির কবলে পড়ে তার ইতি ঘটেছে। আগেই বলেছি, হাজার হাজার রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর অবস্থান যেখানে, তারা সরব হলে দেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে তারা কিছু করতে পারে। অবশ্যই তা হতে হবে- দলনিরপেক্ষ দেশপ্রেমসঞ্জাত। ব্যক্তি হিসেবে বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে যে কেউ যেকোনো মত পোষণ করতে পারেন। তিনি যখন রাষ্ট্রের স্বার্থে কথা বলবেন অবশ্যই সেটি একাডেমিক, নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনমূলক হতে হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদি-অন্ত যারা জানেন তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, শুধু অধ্যয়নের জন্য এর সৃষ্টি হয়নি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে দর্শন বা ইতিহাসের তাত্ত্বিক অবস্থান থেকে বাস্তব ভূমিকা রাখার প্রত্যয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আবির্ভাব। ১৯০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি গড়ে উঠে। ১৯০৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-বিষয়ক জার্নাল ‘American Political Science Review’ি যাত্রা শুরু করে। এভাবে দর্শন, আইন, সমাজতত্ত্ব ও অর্থনীতির মতো সামাজিক বিষয়কে অতিক্রম করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান তার স্বকীয় সত্ত্বা প্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাথমিক প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মান্দ্রু স্মিথ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে ‘The Science of the State’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের কার্যাবলি, সংগঠন ও নাগরিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ শুরু করে। ১৯৪০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জন করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আধুনিক উত্থান ঘটে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান তত্ত্ব কথার সীমাবদ্ধতা ফেলে রেখে প্রথমত আচরণবাদ এবং দ্বিতীয়ত তুলনামূলক পন্থায় সরাসরি রাষ্ট্রের ভূমিকা ও কার্যক্রম নিয়ে বিপ্লবী যাত্রা শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ১৯৬০ এবং ৭০-এর দিকে এর প্রতিফলন ঘটে। ২০০০ সালের দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চায় আরেকটি উল্লম্ফন ঘটে। তখন গাণিতিক বিশ্লেষণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়। এভাবে আরো বাস্তব ও ঘনিষ্ঠভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকার এবং রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়ন এখন সর্বব্যাপী- ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিধি অবধি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এখন স্থিতিশীলতা, ন্যায়বিচার, শান্তিশৃঙ্খলা এমনকি সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাদের নিজ নিজ সরকারকে এসব বিষয়ে সতর্ক করছে, পরামর্শ দিচ্ছে এবং শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করছে। এটি এখন বাস্তব যে ‘Political science provides analysis and predictions about political and govarnmental issues.' (Maddocks, Krysten Godfrey 26 June 2020). "What is Political Science All About?". www.snhu.edu. Archived from the original on 25 September 2021. Retrieved 25 September 2021) রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজনীতিকদের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন পৃথিবীর সর্বত্র। তারা পেশাগতভাবে রাজনৈতিক দলের অফিসও নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের যদি নির্বাহী দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয় রাষ্ট্র উত্তম সেবা পায়। বিশ্বব্যাপী এনজিওগুলো পরিচালনায় তারা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করছে। বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তারা থিংকট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। বিভিন্ন দেশে তারা রাষ্ট্রিক নীতিমালা নির্ণয়, কূটনীতির মতো জটিল বিষয়, জনমত গঠন, নির্বাচন পরিচালনা ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করছে। রাষ্ট্রিক সঙ্কট সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া, সঙ্কট উত্তরণে সহায়তা এবং জাতীয় ঐকমত্য অর্জনে বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে।
এই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যথার্থ ভূমিকা পালন করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা যদি ইচ্ছা করে সফল ভূমিকা রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরাই যে একমাত্র ভূমিকা রাখার অধিকারী এমন নয়। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে যেসব রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কর্মরত তাদের বিষয়ানুগতার কারণে সঙ্গত ভূমিকা রাখতে পারেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র নন বা পেশাগতভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ধারণ করেন না অথচ রাষ্ট্রের জন্য চিন্তা করেন, পরামর্শ দিতে চান এবং যেকোনোভাবে অবদান রাখতে চান তারাও এক প্ল্যাটফর্মে শামিল হতে পারেন। জাতীয় স্বার্থে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পরিহার করে একটি সমন্বিত ভূমিকা রাখার আবেদন জানিয়ে শেষ করছে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা