১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্মরণ : কাজী শামসুর রহমান

-

দক্ষিণ বাংলার উন্নয়নের অন্যতম রূপকার, নিরলস সমাজকর্মী, সফল সংগঠক, ইসলামী চিন্তাবিদ, সৎ রাজনীতিক, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি, সাতক্ষীরা সদর আসনের তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, কারানির্যাতিত কাজী শামসুর রহমান ১৯৩৭ সালে সাতক্ষীরার সুলতানপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি স্কলারশিপ নিয়েই লেখাপড়া করেছিলেন। পিএন হাইস্কুল থেকে ১৯৫৪ সালে মেট্রিক, সাতক্ষীরা কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে আইএ এবং ১৯৬১ সালে বিএ পাস করেন। রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে বিএড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর থেকে ১৯৬৫ সালে এমএড অর্জন করেন। তিনি ১৯৬১ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত, সাতানি ভদড়া হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক, লাবসা জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, কালিগঞ্জ পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, সাতক্ষীরার পল্লীমঙ্গল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও নাইট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিন তিনবার (১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দু’বার কারাবরণ করেছিলেন। সংসদে দায়িত্ব পালনকালে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য, হিসাব কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্ব¡পূর্ণ পদে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ, প্রস্তাব ও বিল উত্থাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সংসদের মসজিদে আজান ও নামাজের ব্যবস্থা, সাতক্ষীরায় আড়াই শ’ শয্যার হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, স্বল্প খরচে সমুদ্রপথে সহজ শর্তে হজ করার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সাতক্ষীরা আলিয়া মাদরাসা সরকারীকরণ, পতিতাবৃত্তি চালু রাখার ব্যবস্থা রহিতকরণ, সেনা, পুলিশ ও বিডিআর বাহিনীতে নামাজ আদায়ের সময় নির্দিষ্টকরণ এবং তাদের পারিবারিক সুবিধাসংক্রান্ত প্রস্তাব সংসদে তিনি পেশ করেছিলেন। কাজী শামসুর রহমান কর্মময় জীবনে মানুষের কল্যাণে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তার মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য হলোÑ সাতক্ষীরা শহর ও গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট তৈরি এবং আধুনিক যোগাযোগ সম্প্রসারণে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে সরাসরি টেলিফোন ডায়ালিং ব্যবস্থার প্রবর্তন। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, মন্দির ও সেবা আশ্রমসহ নানা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন ও আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিৎিসাকেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ব্লাড ব্যাংক, মহিলাদের পোস্টমর্টেমে মহিলা ডাক্তার নিয়োগ, রোগীদের আর্থিক অনুদান দেয়াসহ নানা রকম উন্নয়নমূলক কাজ করতে সক্ষম হন। সাতক্ষীরা সদর সাইক্লোন ও দুর্যোগ মোকাবেলা কেন্দ্র তারই অবদান। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পল্লীবিদ্যুৎ পৌঁছানো, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি ব্রিজ নির্মাণ এবং নাভারন থেকে সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে বিশাল হাইওয়ে নির্মাণের জন্য তার নেতৃত্বে জামায়াতের এমপিরা সংসদে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। বহু দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তিনবার পবিত্র হজব্রত পালন করেন। ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। আমরা তার মাগফিরাত কামনা করছি।হ


আরো সংবাদ



premium cement