স্ম র ণ : আবদুর রশীদ খান : যে কবিকে আমরা ভুলে গেছি
- মীযানুল করীম
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আবদুর রশীদ খান। পঞ্চাশের দশকের বিখ্যাত কবি, যিনি ষাটের দশকেও ছিলেন খ্যাতিমান। তিনি আর নেই। গত পয়লা ফেব্রুয়ারি সুদূর আমেরিকায় ইন্তেকাল করেছেন। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। সোজা কথায়, ‘পরিণত বয়স’। তাই মৃত্যুটাকে স্বাভাবিক বলা চলে। কিন্তু একসময় যিনি ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন কাব্য প্রতিভা, তার মৃত্যু, সংবাদ এক আধটা পত্রিকা ছাড়া কোথাও চোখে না পড়া অস্বাভাবিক বৈকি। কবি আবদুর রশীদ খানের ওপর স্মৃতিচারণ, শ্রদ্ধা নিবেদন আর মূল্যায়ন করে লেখালেখি হওয়াটাই প্রত্যাশিত। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ছেলের কাছে থাকতেন। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে। তার স্ত্রী মোমতাজ রশীদ আগেই সে দেশে মারা গেছেন।
এই তো ১৪ ফেব্রুয়ারি মহা আড়ম্বরে আর বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়ে গেল ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। ভালোবাসা মানে প্রেম। আজ থেকে অন্তত অর্ধশতাব্দী আগে প্রেমের কবিতার সঙ্কলন সম্পাদনা করেছিলেন আবদুর রশীদ খান। কই, ভালোবাসা দিবসের কাণ্ডারিরা ভুলেও তো একবার তার নাম উচ্চারণ করেছেন বলে জানা যায় না। এর দ্বারা তার মর্যাদা কমে যায়নি, বরং সস্তা পিরিতির হোতাদের জ্ঞানের বহর আর বিদ্যার দৌড় কতটা, তা নগ্ন হয়ে ধরা পড়ে।
গত শতাব্দীর ষাটের দশকের মাঝামাঝির কথা। মাসিক ‘মাহেনও’ তখন খুব উঁচু মানের সাহিত্য সাময়িকী। সরকার নিয়ন্ত্রিত হলেও কবি আবদুল কাদিরের মতো সাহিত্য ব্যক্তিত্বের সুচারু সম্পাদনায় মাহেনও এতই মানোত্তীর্ণ হয়ে উঠেছিল যে, এতে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, ঠাঁই পাওয়াকে প্রতিভার একটা বড় প্রমাণ মনে করা হতো। আমাদের বাসায় মাহেনও রাখা হতো। এতে মাঝে মাঝেই কবিতা চোখে পড়ত আবুদর রশীদ খানের লেখা। সে কৈশোরে তাদের কবিতার রসাস্বাদন সম্ভব না হলেও বুঝতাম, তিনি একজন বিশিষ্ট কবি। এরপর অনেক বছর তার লেখা তেমন নজরে পড়েনি। বিশেষ করে আশির দশকে তিনি যেন ‘হারিয়ে গেলেন’। যদ্দুর মনে পড়ে, দু-একজন সাহিত্যিপ্রেমীকে জিজ্ঞেস করেও তার সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি। অনেক পরে বাংলা একাডেমির লেখক অভিধানে দেখেছি, ঢাকায় ৭২, মনিপুরীপাড়া ছিল তার ঠিকানা।
হঠাৎ এক অনুষ্ঠানে আবদুর রশীদ খানের সাথে অপ্রত্যাশিত ও বহুকাক্সিক্ষত সাক্ষাৎ ঘটে যায়। কিছুটা আলাপও হয়েছিল সে দিন। মাথায় সাদা টুপি, মুখে চাপদাড়ি, পরনে সাধারণ পাজামা-পাঞ্জাবি। অনেকটা স্কুল শিক্ষকের পরিচিত পোশাকের মতো। অতীতের সেই কাব্যপুরুষকে চোখের সামনে দেখে আমার অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিল। কয়েক বছর পরে তিনি আবার যেন ‘লা-পাত্তা’। আসলে সাহিত্যচর্চা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং চলে গেলেন প্রবাসে। সেখানেই শেষাবধি চিরবিদায় নিলেন পরিচিত পৃথিবী থেকে। আজ তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হনফিল্ড গোরস্তানে চিরনিদ্রায় শায়িত।
বাংলাদেশের অনেক কবি সাহিত্যিকের জন্ম টাঙ্গাইল জেলায়। আবদুর রশীদ খান ম্যাট্রিকুলেশান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, অর্থাৎ স্কুল জীবন শেষ করেছিলেন এ জেলার জামুর্কি নবাব আবদুল গনি হাইস্কুল থেকে। অবশ্য তার জন্ম চাঁদপুরের হাসনাবাদে। জন্মের তারিখ ১৯২৭ সালের পয়লা জানুয়ারি। বাংলাদেশের আরেকজন কবি ও সাহিত্যসেবী, টাঙ্গাইলের আশরাফ সিদ্দিকী আবদুর রশীদ খানের সমসাময়িক, যার জন্ম একই বছর পয়লা মার্চে। তরুণ বয়সে দু’জন মিলে ‘নতুন কবিতা’ নামের একটি সঙ্কলন সম্পাদনা করেছিলেন। মরহুম আবদুর রশীদ খান ১৯৪৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন ইংরেজি বিভাগে। এখান থেকে ’৪৯ সালে সম্মানসহ স্নাতক হয়ে পরের বছর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে কলেজে শিক্ষকতা করেছেন প্রথমে। পরে সরকারের তদানীন্তন তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ, অনুবাদ ও প্রকাশনা নিবন্ধন পরিদফতরে কাজ করেছেন। এর পরিচালক হয়ে অবসরে গেছেন আশির দশকে।
আবদুর রশীদ খানের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ হলেও সাহিত্যিজীবন সে তুলনায় হ্রস্ব। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা আরো কম। তার রচিত কাব্যগুলোর নামÑ নক্ষত্র মানুষ মন (১৯৫১), বন্দীমুহূর্ত (১০৫২), বিম্বিত প্রহর (১৯৬৮), অন্বিষ্ট স্বদেশ (১৯৭০) এবং মহুয়া (১৯৭৩)। মুক্তা (১৯৬২) নামে তার অনূদিত একটি বইয়ের নাম জানা যায়।
আবদুর রশীদ খান ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর একাডেমি কর্তৃপক্ষের কোনো শোক বিবৃতি দেখা যায়নি। ১৯৯১ সালে বাংলা সাহিত্য পরিষদ তাকে সম্মাননা দেয়। পরের বছর কায়কোবাদ সাহিত্য মজলিস তাকে পুরস্কৃত করেছে। স্মর্তব্য, মজহারুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ মরহুম খানের সমসাময়িক কবি। কবি আবদুর রশীদ খানের মতো প্রচারবিমুখ কবির কাব্য সম্ভারের যথাযথ প্রচার হওয়া আবশ্যক। আমরা তার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিজনের প্রতি জানাই গভীর সহমর্মিতা। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা