স্ম র ণ : আবিদুর রেজা চৌধুরী
- ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম সমাজের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র বিকাশে এবং অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবাব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবিদুর রেজা চৌধুরী। তিনি সারা জীবন জনকল্যাণে কাজ করে গেছেন। নিজেকে একজন সফল রাজনৈতিক নেতা ও সমাজসেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর নবাব সলিমুল্লাহর নির্দেশে তৃণমূলপর্যায়ে জনমত গঠনে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালে চাঁদপুর লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৪০ সালে লোকাল বোর্ড প্রথা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তৎকালে জেলা বোর্ড ছিল সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি জনহিতকর কাজ ছিল এর আওতাধীন। আবিদুর রেজা চৌধুরী ১৯৩০ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং চাঁদপুর তথা বৃহত্তর কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালের ১৬ মে কুমিল্লায় তার চেয়ারম্যানশিপের রজতজয়ন্তী পালন করা হয়।
অবিভক্ত বাংলায় ২৮টি জেলা ছিল। জেলা বোর্ড চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের নাম ছিল নিখিল বঙ্গ জেলা বোর্ড চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশন। তিনি দীর্ঘ দিন এই অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। জেলা বোর্ড চেয়ারম্যানদের প্রত্যেকেই ছিলেন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ। তাদের মধ্যে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, ময়মনসিংহের নুরুল আমিন, ফরিদপুরের ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া), চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং ঢাকার খাজা শাহাবুদ্দিনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে সুদীর্ঘ ৩০ বছরে তিনি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোনো সম্মানী গ্রহণ করেননি। প্রতীকী হিসেবে প্রতি মাসে এক টাকা নিতেন। দেশের প্রতি তার অবদানের কথা স্মরণে রেখে বাংলাদেশ সরকার কুমিল্লা জেলা বোর্ড মিলনায়তন তার নামে নামকরণ করেছে।
জাতীয় রাজনীতিতে আইনসভার সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৩৭ ও ১৯৪৬ সালে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির মেম্বার নির্বাচিত হন। বঙ্গীয় মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। অল ইন্ডিয়া মুসলিম কাউন্সিল এবং প্রভিন্সিয়াল বোর্ডের মেম্বার হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তা ছাড়া ১৯৩৫ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন।
১৯৪২ সালের ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অধিবেশন হয়। তাতে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সিরাজগঞ্জে উপস্থিত থেকেও অসুস্থতার কারণে প্রথম দিনের অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। তার অনুপস্থিতিতে প্রথম দিনের অধিবেশনে আবিদুর রেজা চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। অধিবেশনে মুসলিম লীগের সর্বভারতীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কায়েদে আজম তার মাথার টুপি সম্মানস্বরূপ আবিদুর রেজা চৌধুরীর মাথায় পরিয়ে দেন।
নিখিল ভারত মুসলিম লীগের পক্ষে জনমত গঠনে জিন্নাহ ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ববাংলা সফর করেন। আবিদুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে চল্লিশ সহস্রাধিক লোক কুমিল্লায় তাকে অভ্যর্থনা জানায়।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে আবিদুর রেজা চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (বর্তমানে সিনেট) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে উল্লেখযোগ্যসংখক স্কুল ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। দরিদ্র ছাত্রদের উৎসাহ দিতে তিনি বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা করেন।
অনাড়ম্বর জীবনযাপন ছিল তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিত্তশালী পরিবার এবং ক্ষমতার অধকারী হয়েও বিলাসী জীবন যাপন করতেন না। থাকতেন কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ে রূপসা হাউস নামে এক সাধারণ বাড়িতে; যা ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনকারী অনেক রাজনৈতিক ঘটনার নীরব সাক্ষী। বিভিন্ন সময়ে তার বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হায়দ্রাবাদের জননেতা সৈয়দ কাশেম রিজভীসহ দেশের শীর্ষ নেতারা। নবাব কে জি এম ফারুকী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আকরম খাঁ, স্পিকার তমিজউদ্দিন খানÑ তাদের প্রত্যেকেরই তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ।
ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খানবাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। ভারতের মুসলমানদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের অসঙ্গত আচরণের প্রতিবাদে মুসলিম লীগের আহ্বানে ১৯৪৬ সালে তিনি ওই পদবি পরিত্যাগ করেন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে ‘তমঘায়ে খেদমত’ খেতাবে ভূষিত করেন।
অকৃতদার আবিদুর রেজা চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭২ সালে চাঁদপুরের সিংহেরগাঁও (রূপসা) জমিদার পরিবারে। তার বাবা উমেদ রেজা চৌধুরী এবং মা নোয়াখালীর রাজগঞ্জ মিয়াবাড়ির বুজুর্গ সৈয়দ বাদশাহ আলমের কন্যা সৈয়দা আফতাবুন্নেসা চৌধুরানী। ১৯৬১ সালের ১৬ জানুয়ারি আবিদুর রেজা চৌধুরী নিজ গ্রাম রূপসায় ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তার সব ভালো কাজ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন। হ
লেখক : এস এম ওয়াজেদ চৌধুরী
আবিদুর রেজা চৌধুরীর দৌহিত্র
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা