বাংলাদেশের জন্য এনআরসি হুমকি
অবলোকন- মাসুম খলিলী
- ০৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
ভারতের নতুন লোকসভা ও রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশনে দেশটির রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক ভাষণে বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করছে। এটি দেশের অনেক অংশে সামাজিক ভারসাম্যহীনতা এবং সেই সাথে সীমিত জীবনযাত্রার সুযোগগুলোতে বিপুল চাপ সৃষ্টি করে। অনুপ্রবেশের শিকার হওয়া এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন (এনআরসি) প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।’
ভারতের রাষ্ট্রপতি দুই সংসদের যৌথ অধিবেশনে আরো বলেন, ‘সরকার ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এক দিকে, সরকার অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ করছে; অন্য দিকে, বিশ্বাসের কারণে (হিন্দু) নির্যাতিতদের রক্ষা করার জন্য সরকার সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হবে।’
এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দলের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা অমিত শাহ লোকসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিম বঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় রাজ্যটিতে এনআরসি করে কথিত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলেন। কথাটি মোদি কিছুটা রাখঢাক করে বললেও অমিত শাহ খোলামেলাভাবেই বলেছিলেন, অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের (তার ভাষায় ‘উইপোকা’) বাংলাদেশে তাড়ানো হবে। নির্বাচনী প্রচারণার সময়টিতে মোদি-অমিত শাহের এই বক্তব্যের পর অনেকে ধারণা করেছিলেন ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করে সমর্থন আদায়ের জন্য এসব কথা বলা হচ্ছে। এখন লোকসভার উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক ভাষণে নাগরিক নিবন্ধন এবং নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীর এই ঘোষণায় স্পষ্ট যে, বিজেপি সরকার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই কার্যক্রমে মমতার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কতটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। আসামের এনআরসির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের তদারকির ভূমিকার কারণে সেই উদ্যোগে আইনি আচ্ছাদন ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের।
দিল্লির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যে মনে হয়, বাংলাদেশ সীমান্তের রাজ্যগুলোতেই যে এনআরসি সীমিত থাকবে এমন নয়; ভারতের যেসব রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি, কথিত অনুপ্রবেশের কথা বলে জনসংখ্যার মধ্যে ‘ভারসাম্যহীনতা’র যুক্তি দেখিয়ে সেখানেও এই বিতর্কিত ও বৈষম্যমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হতে পারে।
১৯৫১ সালে আসামে নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন (এনআরসি) উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এনআরসিকে সব নিবন্ধিত ভারতীয় নাগরিককে চিহ্নিত করার একটি উপায় হিসেবে গ্রহণ করা হয় তখন। ‘যুক্তি’ হিসেবে বলা হয়, আসাম সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে আর এটি এমন একটি সীমান্ত রাজ্য যেখানে পরিবর্তনশীল অভিবাসী জনসংখ্যা ছিল। ২০১৫ সালে, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৫১ সালের পর প্রথমবারের মতো এনআরসি আপডেট শুরু করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ২৪ মার্চ, ১৯৭১ সালের (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার দু’দিন আগে) পর কেউ জন্মগ্রহণ করে থাকলে তাকে ভারতীয় নাগরিকত্বের দলিল প্রদান করতে বলা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ভারত সরকার এনআরসির একটি খসড়া আপডেট প্রকাশ করে, যাতে নাগরিক নিবন্ধন তালিকা থেকে যথাযথ দলিল প্রদানে অক্ষমতার কারণ দেখিয়ে ৪০ লাখ ৭০ হাজার লোককে বাদ দেয়া হয়। এরপর খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেয়া হাজার হাজার ব্যক্তি আপত্তি দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর এখান থেকে বাদ যাওয়া ব্যক্তিরা রাষ্ট্রহীন বা বিদেশী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে সহজ যাতায়াত ও অভিবাসনের কারণে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের নাগরিক চিহ্নিত করার জন্য এনআরসি উদ্যোগ নেয়া হলেও এর প্রায় ৬ দশক পরে এসে এ নিয়ে আসামের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদের একটি দল এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথম আন্দোলন করে। বিজেপি এটাকে দলের অ্যাজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করে ছিল। আসামের স্থানীয় জাতীয়তাবাদীরা যেখানে বাঙালি হিন্দু মুসলিম সবাইকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, সেখানে বিজেপির অ্যাজেন্ডা হলো কেবল মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের অনাগরিক ঘোষণা করা এবং অমিত শাহের বক্তব্য অনুসারে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া।
২০১৮ সালে ৩০ জুলাই আসামে যে নাগরিক পঞ্জির খসড়া তৈরি করা হয়, তাতে প্রথম দফায় ৪০ লাখ ৭০ হাজার এবং পরে আরো এক লাখ ব্যক্তিকে ভারতের অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসামের ৩ কোটি ২৯ লাখ নাগরিকের মধ্যে ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে আসামের প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষকে অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বক্তব্যে যে কথা বলা হয়েছে, তাতে বিজেপির অ্যাজেন্ডারই প্রতিধ্বনি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিতদের মধ্যে যারা (পড়–ন : হিন্দুরা) নিষ্পেষণের শিকার হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করা হবে। অর্থাৎ নাগরিক তালিকার বাইরে যেসব হিন্দু থাকবেন তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। নাগরিক অধিকার হারাবেন কেবল মুসলিমরা।
এর আগে মোদি, অমিত শাহ এবং সর্বশেষ ভারতীয় রাষ্ট্রপতির ঘোষণা অনুসারে পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরামে এনআরসি বাস্তবায়ন করা হবে। এমনকি এটি যদি উড়িষ্যা বিহার বা উত্তরপ্রদেশেও বাস্তবায়ন করা হয় তাহলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। ভারতে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ নাগরিক মুসলিম হলেও কিছু রাজ্যে এই সংখ্যা অনেক বেশি। আসামে ৩০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার। এনআরসির মাধ্যমে এই সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনা গেলে অনেক আসনে মুসলিমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আর নির্ণায়কের ভূমিকায় থাকবেন না। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের সংখ্যা ২৭ শতাংশের মতো। এখানে অনেক আসনে মুসলিম সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হন। আসামে এনআরসিতে ৪১ লাখ লোক অনাগরিক চিহ্নিত হওয়া মানে হলো, পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত হিন্দুরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সুবাদে নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন। আর মুসলিমরা রোহিঙ্গাদের মতো রাষ্ট্রহীন অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত থেকে যেতে পারেন।
ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বা অভিবাসনের ব্যবস্থা এতদিন শুধু ইসরাইলেই ছিল। পৃথিবীর যেকোনো দেশের ইহুদি মায়ের সন্তান ইসরাইলের নাগরিকত্ব চাইলে সেটি বিবেচনা করা হয়। ভারতের বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটি একদিকে বিশ্বের সব হিন্দু জনগোষ্ঠীর জন্য অবারিত করতে চাইছে; অন্য দিকে, মুসলিম নাগরিকদের নানা অজুহাতে অনাগরিক বানানোর চেষ্টা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এনআরসি আপডেটটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ। এটি তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক প্রভাব ফেলার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। নাগরিক যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দেয়া ক্ষমতা খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেয়া বিদেশীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে অপব্যবহার করা হতে পারে। এনআরসি খসড়া থেকে চল্লিশ লাখের বেশি মানুষকে বাদ দেয়ার বিষয় নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগজনক।’
আসামের নাগরিক তালিকা তৈরির এই উদ্যোগে কতটা ক্রটি বা পক্ষপাতিত্ব রয়েছে তার নানা দৃষ্টান্ত দেশটির বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। ভারতের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি মরহুম ফখরুদ্দিন আলী আহমদ ছিলেন আসামের একজন মুসলিম। সেখানকার এনআরসিতে মরহুম ফখরুদ্দিনের ভাইয়ের পরিবারকে অনাগরিকের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনীতে তিন দশক ধরে চাকরি করে অবসর গ্রহণকারী একজনের পরিবারকে অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, এক ভাইয়ের পরিবার নাগরিক তালিকায় রয়েছেন, কিন্তু আরেক ভাইয়ের পরিবারকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পিতা নাগরিক তালিকায় রয়েছেন কিন্তু পুত্র বাদ পড়ে গেছেন।
বিজেপির মূল সংগঠন, সংঘ পরিবারের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা রয়েছে। এর প্রথম অ্যাজেন্ডাটি হলো ভারতকে হিন্দুত্ববাদের দেশে রূপান্তর করা। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, হিন্দুত্ব হবে ভারতীয়দের মূল পরিচয়। এখানকার সব ধর্মবিশ্বাসীকে হিন্দু পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। এখানে মুসলিমরা হবেন হিন্দু-মুসলিম, খ্রিষ্টানরা হবেন হিন্দু-খ্রিষ্টান, বৌদ্ধরা হবেন হিন্দু-বৌদ্ধ। আরএসএস মনে করে হিন্দুত্বের কৃষ্টি সংস্কৃতি গ্রহণ করেই অন্য ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্ম পালন করবে। আরএসএস ভারতের ৮০ শতাংশ নি¤œ ও উচ্চবর্ণের হিন্দুকে এই মতাদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে চায়।
এতদিন ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে সব ধর্ম ও বিশ্বাসকে ধারণ করে সর্বভারতীয় সংস্কৃতির যে আদর্শ ছিল, সেখান থেকে একটি বড় ধরনের রূপান্তর হলো এটি। এই জাতীয়তাবোধের বার্তা দেয়ার জন্যই বিজেপি কখনো ভারতের সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী মুসলিমদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করে না। এবার বিজেপি থেকে নির্বাচিত লোকসভা সদস্য বা এমপিদের মধ্যে একজনও মুসলিম নেই।
জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন বা এনআরসির মূল ভিত্তি হিসেবে বিজেপির এই অ্যাজেন্ডাই কাজ করছে। আসামের জাতীয়তাবাদীরা চেয়েছিল সেখানে অহমীয়রা যাতে বাঙালি অভিবাসীদের কারণে রাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ না হারায়। বিজেপি তাদের সাথে জোট গঠন করে সেই অ্যাজেন্ডা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। তারা হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য একটি আইনি কাঠামো তৈরি করে রাখছে নাগরিক আইন সংশোধনীর মাধ্যমে।
বিজেপির একটি কৌশল হলো, যে রাজ্যে দলটি সরকার গঠন করে সেখানকার জনগণের মধ্যে আরএসএসের যে আদর্শিক ধ্যান-ধারণা সেটিকে শিক্ষার কারিকুলাম, সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা। গো-রক্ষা আন্দোলন, রামমন্দির নির্মাণের মতো বিষয়গুলোকে সামাজিক প্রভাব সুগভীর করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
আগামী ৩১ জুলাই আসামে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এই তালিকার আধাআধি লোক যারা মুসলিম তাদের ভারতের নাগরিকত্ব বহাল রাখার কোনো উপায় আর থাকবে না। অন্য দিকে, হিন্দু যারা অনাগরিক তালিকাভুক্ত হবেন তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বলে ভারতীয় নাগরিকত্ব বহাল বা অর্জন করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আসামের ২০ থেকে ২৫ লাখ বাসিন্দা অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এসব কথিত অনাগরিক মুসলিমদের নিয়ে কী করা হবে তা স্পষ্ট নয়।
অমিত শাহের বক্তব্য বিবেচনায় নেয়া হলে মনে হতে পারে, তাদের রোহিঙ্গাদের মতো বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হতে পারে। এটি বাস্তবে ঘটলে বাংলাদেশ বড় ধরনের একটি সঙ্কটে পড়ে যাবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও দেখা দিতে পারে। এমন উত্তেজনা ভারতে বিজেপির হিন্দুদের হিন্দুত্ববাদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজে লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এনআরসি ইস্যুটিকে ভারত কি বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করতে চায়? এই প্রশ্নটি এখন প্রায়ই উত্থাপিত হচ্ছে। এদিকে বিশেষত, বাংলাদেশে চীন বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বেশ খানিকটা বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান চীন সফরে আটটি চুক্তি ও সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হতে পারে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপুল বিনিয়োগের চুক্তিও রয়েছে। এগুলো কার্যকর হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের বাণিজ্যে চীনের বড় অংশীদারিত্ব তৈরি হতে পারে। এ সফরকালে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার একটি কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরের কথা বলা হয়েছে, যার আওতায় অনেক কিছুই থাকতে পারে। দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গভীর সমুদ্রবন্দর চুক্তি নিয়েও কথাবার্তা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের এ ধরনের একটি সম্পর্ক চীনের সাথে হোক, তা দিল্লি কোনোভাবেই কামনা করছে না। দিল্লির কোনো কোনো নীতিপ্রণেতা মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ওপর চীন বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। কথিত অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর ইস্যুটিকে ঘিরে ভারত ঢাকার ওপর কিছুটা শিথিল হয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণকে আরো কঠোর করতে পারে।
বিজেপি সরকারের অন্যতম ‘ডকট্রিন’ হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে কৌশলগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যাওয়া। ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষমতা এমন অবস্থায় নেই যাতে অর্থনৈতিক সাহায্য বা বিনিয়োগ দিয়ে এসব দেশকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিকল্প হিসেবে রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা প্রভাব দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের একটি উদ্যোগ দিল্লির রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত চারটি দেশে এই হাতিয়ার প্রয়োগ করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে অবশ্য চূড়ান্ত ফলাফল তার নিজের পক্ষে আনা যায়নি। নেপালে এখন নানা টানাপড়েনের মাধ্যমে চীনবান্ধব সরকার ক্ষমতায়। দিল্লি শ্রীলঙ্কায় সিরিসেনা-বিক্রমা সিংহকে ক্ষমতায় আনার পরও দেশটির চীনা ঝোঁক কাটানো যায়নি। মালদ্বীপে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতবান্ধব একটি সরকারকে ক্ষমতায় আনা হয়েছে। কিন্তু এই সরকারকে দিয়েও সব নীতি বাস্তবায়ন করানো যাচ্ছে না। ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় আনার পেছনে ভারতের ভূমিকা রয়েছে। এখন সে সরকারকে চীনমুখী হওয়া থেকে বিরত রাখার চ্যালেঞ্জে পড়েছে ভারত।
একসময় নেপালকে ভারতের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দিল্লি মাধেসিদের দিয়ে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। এর পরিণতিতে নেপালের সব ক’টি বড় দল ভারতের বিপক্ষে চলে যায়। নেপালে এখনকার কেপি অলির সরকারকে কোনোভাবেই দিল্লির প্রতি সুপ্রসন্ন মনে করা হয় না।
এনআরসি ইস্যুকে কেন্দ্র করে কথিত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার যে প্রক্রিয়া মোদি সরকার শুরু করেছে, সেটি প্রকারান্তরে বাংলাদেশের জনগণই শুধু নয়, একই সাথে রাজনৈতিক দলগুলোকেও তীব্র ভারতবিরোধী শিবিরে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। এতে ‘আম ও ছালা’ দু’টি হারানোর যে উদাহরণ দেয়া হয়, সেটিই সত্য হতে পারে দিল্লির বেলায়। মোদির সমীকরণে এটি কতটা বিবেচনায় আনা হয়, কে জানে? হ
mrkmmb@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা