দেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রয়োজন
- জালাল উদ্দিন ওমর
- ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাংলাদেশ প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশ। এত বিশাল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসার জন্য অনেকগুলো বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রয়োজন। দেশের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বিদ্যমান হাসপাতালগুলো বিশ্বমানের নয়। উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কাক্সিক্ষত মানের নয়। হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, উন্নতমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম ও চিকিৎসা খাতের দক্ষ জনবল নেই। অধিকাংশ ডাক্তার উপজেলা পর্যায়ে চাকরি ও পরিবার নিয়ে বসবাস করতে চান না। উপজেলায় পোস্টিং হলেই শহরে বদলি হতে তদবিরে ব্যস্ত থাকেন এবং অফিস ডিউটি শেষে তারা শহরে চলে আসতে চান। জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষগুলো উপজেলা পর্যায়ে যথাযথ চিকিৎসা পায় না এবং তারা শহরে চলে আসে। কিন্তু সব শহরেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ভালো মানের হাসপাতাল নেই। ফলে তারা বিভাগীয় শহরে চলে আসেন। বিভাগীয় শহরগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও এখানকার হাসপাতালগুলোতে সব রোগের চিকিৎসা করার মতো সুবিধা নেই। এ অবস্থায় সামর্থ্যবান মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যায়। যাদের সামর্থ্য নেই তারা বাধ্য হয়ে দেশেই চিকিৎসা করেন। সুস্থ হলে হয়, না হলে নিয়তিকেই মেনে নেন।
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিরাট সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা করতে বিদেশে যায়। ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর- এই তিনটি দেশেই সাধারণত এ দেশের মানুষ চিকিৎসা নিতে যায়। মোট রোগীর প্রায় ৯০ শতাংশই ভারতে এবং বাকিরা সিঙ্গাপুর অথবা থাইল্যান্ডে যায়। কিছু মানুষ ইউরোপ ও আমেরিকায়ও যায়। চিকিৎসা নিতে সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ভারত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ইউরোপ-আমেরিকায় যায়। এ খাতে প্রতি বছর বিরাট অঙ্কের টাকা বিদেশে চলে যায়। গত ১৫ ডিসেম্বর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশে চিকিৎসায় প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চলে যায়। আমরা যদি দেশে বিশ্বমানের কিছু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করি তাহলে চিকিৎসার জন্য বিরাট সংখ্যক মানুষকে বিদেশ যেতে হবে না। এভাবে খরচটা সাশ্রয় করতে পারি, যা আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে রোগী ও তার পরিবারকে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা সামলাতে হয়। রোগীকে বিদেশে যেতে হয়। তাকে দেখাশোনা করার জন্য একজন মানুষকে রোগীর সাথে বিদেশ যেতে এবং রোগীর সাথে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের পরিবহন এবং আবাসনেও অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। তা ছাড়া রোগীর সাথে বিদেশে যাওয়া এবং সেখানে থাকার মতো মানুষ সবসময় পাওয়া যায় না। ইচ্ছা করলেই যখন তখন বিদেশে যাওয়া সম্ভব হয় না। সঠিক সময়ে পাসপোর্ট, ভিসা ও বিমানের টিকিট পাওয়ার বিষয় তো রয়েছেই। বিদেশ মানে সব কিছুই অপরিচিত ও অজানা। ফলে এখানেও কিন্তু অনেক সমস্যা।
এ দেশে বিশ্বমানের কিছু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করলে সহজেই বিরাট একটি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এতে সার্বিকভাবে দেশের মানুষ উপকৃত হবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। দেশের অনেক শিল্পপতি হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছেন। এখন এসব ব্যক্তিকে বড় আকারের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় শহরগুলোতে একটি করে বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে দেশের প্রতিটি এলাকার মানুষ তাদের নিকটবর্তী অঞ্চলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারবে। এগুলো হবে বিশেষায়িত হাসপাতাল। এখানে কেবল জটিল রোগের চিকিৎসা হবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ চিকিৎসা-সরঞ্জাম এখানে থাকতে হবে। হাসপাতালের পাশে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও রোগীর আত্মীয়স্বজনের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এটি হবে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল কমপ্লেক্স, যেখানে রোগী প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসাসেবা এক জায়গায় পাবে। এসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ডাক্তারদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের এগিয়ে আসতে হবে। শহরের বাইরেই এসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঢাকার হাসপাতালটি পূর্বাচলে এবং চট্টগ্রামের হাসপাতালটি বায়েজিদ লিংক রোডে প্রতিষ্ঠা করা যায়। বিভিন্ন দেশের বিশ্বমানের হাসপাতালগুলোর সাথে যৌথ উদ্যোগেও এসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত কারিগরি সহযোগিতাও নিতে পারি।
দেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করলে দেশের মানুষ দেশেই চিকিৎসা করতে পারবে। ফলে বিরাট অর্থ সাশ্রয় হবে এবং ভোগান্তিও কমবে। পাশাপাশি বিদেশীদের চিকিৎসা দিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হলে নেপাল, ভুটান, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ ও মিয়ানমারের জনগণ চিকিৎসা নিতে এ দেশে আসবে। তখন দেশের পর্যটন খাত উন্নত হবে এবং এ খাত থেকে প্রচুর আয় হবে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। দেশে ৩৭টি সরকারি এবং ৭৪টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা মেডিক্যালে পড়ার জন্য ভর্তি হয় এবং প্রতি বছরই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১২ হাজার ডাক্তার পাস করেন। পরবর্তীতে অনেকেই দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে পরিণত হন। এদের অনেকেই দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত থাকেন এবং দক্ষতার সাথে মানুষের জটিল রোগের চিকিৎসা করেন। বিদেশে কর্মরত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদেরকে দেশের হাসপাতালগুলোতে কাজে লাগাতে পারি। হাসপাতালের জন্য নার্স, ওয়ার্ডবয় ও কর্মকর্তাসহ প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব এ দেশে নেই। ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে। প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রায় ৯০ শতাংশই দেশে উৎপাদিত হয়।
বাংলাদেশের ওষুধ পৃথিবীর অনেক দেশ এমনকি ইউরোপ-আমেরিকায়ও রফতানি হচ্ছে। সুতরাং চিকিৎসাসেবার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো আমাদের কাছেই আছে। এ অবস্থায় দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। এখানে শুধু উদ্যোগ প্রয়োজন। এসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে শেয়ারবাজার ও ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে জনগণ থেকে অর্থ জোগাড় করা যাবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ একান্তই প্রয়োজন।
লেখক : প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা