চিকিৎসা খাতের সংস্কার ও পদোন্নতি
- ডা: মো: মাকসুদ উল্যাহ
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
স্বাস্থ্যখাত অন্য অনেক খাত থেকে বিভিন্ন কারণেই আলাদা। অন্য অধিকাংশ খাতের কর্মীরা যখন পূজার ছুটিসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটি ভোগ করে, তখন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা অন্য যেকোনো দিনের মতোই দিনরাত রোগীর চিকিৎসা দেয়। ডাক্তাররা থাকে এসব ছুটির আওতার বাইরে। সরকারি হাসপাতালে প্রায়ই শয্যা সংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। রোগী আছে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও আছে, নাই কেবল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের যথেষ্ট সংখ্যক পদ। ফলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বিশেষজ্ঞ যোগ্যতার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। কোনো কোনো খাতে যেখানে বিদ্যমান পদের সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যায় সুপারনিউমারারি পদোন্নতি হচ্ছে, সেখানে চিকিৎসা খাতে চলমান অপ্রতুল পদগুলোর মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকের পদ খালি থাকে ৪৫ শতাংশ।
উপযুক্ত পদে চিকিৎসকের বিশাল ঘাটতি রেখে সবাই উন্নত চিকিৎসা চান! অথচ নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্য অনেক খাতে পদোন্নতি হলেও স্বাস্থ্য খাতে কার্যত কোনো পদোন্নতি হয়নি। সুতরাং চিকিৎসা খাতে পর্যাপ্ত নতুন পদ সৃষ্টি করা উচিত এবং শূন্য পদগুলো পূরণ করার পাশাপাশি সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিসিএস ব্যাচের পরিবর্তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাসের তারিখকে জ্যেষ্ঠতার-অভিজ্ঞতার মাপকাঠি করা উচিত। অথবা এই দুয়ের তারিখের সমন্বয় করা উচিত। তা না হলে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১০ বছর পরে স্নাতকোত্তর পাস করা নতুন অনভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক হচ্ছেন, আর ১০ বছর আগে পাস করা অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই সহকারী অধ্যাপকের অধীনে মেডিক্যাল অফিসার থেকে যাচ্ছেন। তা ছাড়া ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা অনুযায়ী যিনি কর্মস্থলে বেশি দিন এবং প্রতিদিন গড় বেশি সময় সেবা দিয়েছেন, তাকে পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
বায়োমেট্রিক হাজিরার ক্ষেত্রে ফেস আইডেন্টিফিকেশন চালু করা উচিত। কেননা ইতোমধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট জালিয়াতির খবর পাওয়া গেছে। ‘জুনিয়র কনসালট্যান্ট’ পদবির ‘জুনিয়র’ শব্দটি বাদ দেয়া উচিত। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপকের মর্যাদা গ্রেড-১ করা দরকার। দেশে আজও যেসব ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হয় না, সেগুলো যাতে দেশেই করা যায় তেমন ব্যবস্থা নেয়া দরকার। চিকিৎসকদের বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সহজ করাও জরুরি। বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোনো উন্নত দেশে তিনটি হাসপাতাল নির্ধারণ না করে বরং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ওই সব দেশের চিকিৎসকদের বাংলাদেশে নিয়ে আসা উচিত।
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন অর্থবহ করা উচিত। কোনো একজন রোগী মারা গেলে সাথে সাথে তার স্বজনরা ‘ভুল চিকিৎসা’ বা ‘চিকিৎসায় অবহেলা’র অভিযোগ তুলে দুর্বৃত্তের মত ডাক্তারের ওপর চড়াও হলে ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হলে আর হাসপাতালের সম্পদ ভাঙচুর করলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিএমডিসির মাধ্যমে তদন্ত করে ‘ভুল চিকিৎসা’ বা ‘চিকিৎসায় অবহেলা’র অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগে কেউ এ ধরনের অভিযোগ তুললে বা এই মর্মে প্রচার করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার আইন করে তা বাস্তবায়ন করা উচিত।
চলমান আইনে প্রতারকদের নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার দাবি করার বিষয়টি উৎসাহিত করা আছে। দেখা যাচ্ছে, প্রতারক নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে প্রচার করে গত কয়েক বছর মানুষকে প্রতারিত করে নিজে অনেক সম্পদ গড়েছে। আর চলমান আইন তাকে এই অপরাধের জন্য মাত্র দুই মাস কারাদণ্ড দিয়েছে! এতে প্রতারক উৎসাহিত হয়ে আবার নিজেকে এমবিবিএস দাবি করে আবার গণমানুষকে প্রতারিত করছে। এ ধরনের হাস্যকর আইন দুঃখজনক। এই প্রতারকদের কারণে মানুষ আর্থিকভাবে যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনই ভুল ওষুধের কারণে স্বাস্থ্যগত ক্ষতিরও শিকার হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা বিলম্বিত হওয়ায় মূল রোগ আর উপশমের বা চিকিৎসার উপযুক্ত থাকে না।
সুতরাং যারা ‘এমবিবিএস’ ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে অসহায় রোগীদের এভাবে প্রতারিত করে সমাজ ও সভ্যতার স্বার্থেই তাকে কমপক্ষে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ জব্দ করার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে কোনো প্রতারক মানবতার সাথে এমন নিকৃষ্টতম প্রতারণা করতে না পারে। আর যদি কোনো প্রতারক নিজেকে ‘বিশেষজ্ঞ’ চিকিৎসক হিসেবে প্রচার করে অসহায় রোগীদের এভাবে প্রতারিত করে তাকে আরো কঠোর দণ্ড দেয়া এবং প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত সব সম্পদ জব্দ করা উচিত।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা