২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

নদীর দখল ও দূষণ

তৃতীয় নয়ন
-

গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ছিল শবেবরাতের ছুটি। পত্রিকা অফিসে মাত্র এক দিন ছুটি থাকলেও কাজের চাপ বেড়ে যায় অনেক। তারপরও ওই দিন ছুটি থাকায় দৈনিক নয়া দিগন্তের ফ্যামিলি ডে উদযাপিত হয়। নয়া দিগন্তের সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেন। ঢাকার সদরঘাট থেকে মেঘনা নদী পর্যন্ত নৌ-সফরের আয়োজন করা হয়। দৈনিক নয়া দিগন্তের কর্মপরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। তাই দীর্ঘ দিন এই উৎসবের আয়োজন করা হয়ে ওঠেনি। এবারের নৌ-সফরের পথে পড়ে বুড়িঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা প্রভৃতি নদী। ঢাকার উত্তর দিকে যে রকম তুরাগ ও বালু নদ হারিয়ে গেছে। ঠিক তেমনি ঢাকার দক্ষিণে ও পশ্চিমে বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদী হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার উত্তরে নড়াইল ও দেবধোলাই নদী ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো কুচকুচে পানি সেই নির্দেশই দিচ্ছে। বুড়িগঙ্গার কালো কুচকুচে পানিতে একটি পাকা ফলকে লেখা আছে, ‘নদী রক্ষা করুন।’ ফলকে আরো লেখা আছে, নদী মায়ের মতো। আসুন, নদীকে মায়ের মতো ভালোবাসি। কিন্তু কেমন ভালোবাসা হচ্ছে, কালো কুচকুচে পানি তার সাক্ষ্য। নদী হত্যার উৎসবে আমরা যেন মেতে উঠেছি। তাই হারিয়ে যেতে বসেছে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, পদ্মা, মেঘনা নদীগুলো। মেঘনা নদী থেকে নাকি ঢাকার নবাবরা পরিষ্কার পানি নিতেন। সে দিন আর নেই। ‘শীতলক্ষ্যা’ শব্দের অর্থ শান্ত চোখের মতো শীতল। ঢাকার পাশের বুড়িগঙ্গার পানি কালো হওয়ার কারণ এর দূষণ। এর দক্ষিণে চর কালীগঞ্জে জাহাজ তৈরি করা হচ্ছে। আর পানি দূষিত হচ্ছে। সর্বত্র একই দৃশ্য। ঢাকা শহরের পাশের নদীর পানি কুচকুচে কালো। শহর থেকে যত দূরে যাওয়া যায়, পানি তত পরিষ্কার। অর্থাৎ আমরা বুড়িগঙ্গাকে মেরে ফেলছি। বুড়িগঙ্গা সাভারের কাছে উৎপন্ন হয়ে ফতুল্লার দিকে পাগলার কাছে ধলেশ্বরীতে মিলিত হয়েছে। এই ধলেশ্বরীকে হত্যা করেছি। সাভারে আমরা নতুন চামড়ানগরী করেছি। ফতুল্লার কাছে আমরা ‘মেরি অ্যান্ডারসন’ নামে পুরনো লঞ্চকে রেস্তোরাঁ বানিয়েছি। কিন্তু নদীরক্ষায় আমাদের মনোযোগ নেই। ফলে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। ঢাকার মাতৃতুল্য বুড়িগঙ্গা নদীর আজকে মরণাপন্ন দশা। নদীর ১০ মাইল দীর্ঘপথ একই দৃশ্য। বুড়িগঙ্গাকে আমরা ইচ্ছা করে বুড়ি বানিয়ে রেখেছি। নদীর যৌবন ফিরিয়ে দিতে হবে।
বুড়িগঙ্গার ধলেশ্বরীতে উৎপত্তি ধলেশ্বরীতে বিনাশ। পুরো বুড়িগঙ্গা ১০ মাইল দীর্ঘ।
নদীর বুকের অনেকখানি দখল করে ফেলেছে দখলবাজরা। কেবল বাল্কহেড দিয়ে মাটি আর বালু টানছে। একটি বাল্কহেডে অনেক মাটি বা বালু ধরে। বাল্কহেডগুলো ভর্তি করে নিচ্ছে। রাস্তার পাশে নদীতে নেমে গেছে পাকা ঘাট মানুষের ব্যবহারের জন্য; কিন্তু নদী মারা যাচ্ছে সে দিকে কারো খেয়াল নেই। দখল-দূষণে নদীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। পথে পথে অসংখ্য বাল্কহেড চোখে পড়ল নদী দিয়ে চলছে মাটি বা বালুভর্তি। এক জায়গায় দেখা গেল, অনল্যান্ড ড্রেজার। আসলে নদী ভরাট করে মাটি তোলা হয়েছে। নদীর মাঝখানেও ঘাসের আস্তরণ।
নদীর তীর ঘেঁষে অসংখ্য ইটভাটা চোখে পড়ল। ইটভাটা দিয়ে সুকৌশলে নদী দখল করা হয়েছে। ইটভাটায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে নদীর মাটি ও পানির। পদ্মা মেঘনার স্রোতের পার্থক্য দখল ও দূষণের কারণে বোঝা যাচ্ছে না। অথচ আমার ছোটবেলায় মা আমাকে পদ্ম- মেঘনার পার্থক্যের কথা বলেছিলেন, এ বিষয়ে তিনি পবিত্র কুরআন শরিফের সূরা আর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। তিনি নোয়াখালী থেকে লঞ্চে ঢাকার সোনারগাঁওয়ে গিয়েছিলেন। চাঁদপুর থেকে তিনি জাহাজে উঠেছিলেন। সময়টা তখন তিরিশের দশকের প্রথম দিক। চাঁদপুরের পরেই পদ্মা ও মেঘনার মিলনস্থল। দুই প্রধান নদীর যৌথ স্রোতধারা চাঁদপুর হয়ে সাগরে পড়েছে। তিনি তখন দুই নদীর পানির পার্থক্য দেখেছিলেন। উপরে উল্লিখিত সূরায় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নদীর পানির রঙের পার্থক্য তুলে ধরেছেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি বাঙালির অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য দিন। বসন্তের আগমনে, প্রকৃতিতে ফুটে ওঠে পাতাঝরার নৈসর্গিক ও অপরূপ দৃশ্য। ভালোবাসার মেলবন্ধনের এক অনন্য ক্ষণ। এর সাথে এবার যুক্ত হয় শবেবরাতের পবিত্র আবহ। আর এ দিনটিকেই বেছে নেয়া হয় নয়া দিগন্তের জন্য একটি আনন্দময় দিন হিসেবে। সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের হাজারখানেক সদস্য এই উৎসবে যোগ দেন। সকালে রাজধানীর ওয়াইজ ঘাটে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পৌঁছে যান সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর সকালের নাশতা শেষে পৌনে ১০টার দিকে শুরু হয় চাঁদপুরের উদ্দেশে নৌবিহার। চলতে চলতে নদীর দুই কূলের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে থাকেন সদস্যরা। এর মাঝেই পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন খেলাধুলায়। বেলা ১টার দিকে চাঁদপুরের মোহনপুরে পৌঁছে যায় এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চ। এরপর স্থানীয় পার্কে নারী-শিশুদের আনন্দঘন সময় কাটে। আর পুরুষ সদস্যরা জুমার সালাত আদায় করে নেন। পরে দুপুরের খাবার পর্ব শেষে হাঁড়িভাঙা খেলায় অংশ নেন সদস্যরা। চোখ বেঁধে হাঁড়ি ভাঙার সেই দৃশ্য সবার মধ্যে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি করে। বিকেলে ফেরার পথে চলতে থাকে র‌্যাফল ড্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


আরো সংবাদ



premium cement